আওয়ার ইসলাম: মাওবাদী ঘনিষ্ঠতা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে হত্যার ছক কষার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ভারতজুড়ে বিদ্বজ্জনদের ধরপাকড় শুরু করেছে পুলিশ।
গতকাল মঙ্গলবার সমাজকর্মী সুধা ভরদ্বাজ, কবি ও মানবাধিকারকর্মী ভারাভারা রাওসহ বহু অধিকারকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুনে পুলিশ।
এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ লেখক, শিল্পী, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও সমাজকর্মীরা।
লেখিকা অরুন্ধতী রায় বলেছেন, ‘কবি, সাহিত্যিক, দলিত আন্দোলনকারী, আইনজীবীদের বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
জেলে ভরা হচ্ছে। ওদের উচিত গোরক্ষার নামে যারা গণপিটুনি দিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে এবং উসকানি দিচ্ছে, তাদের গ্রেপ্তার করা।’
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারতে মহারাষ্ট্রের ভীমা কোরেগাঁওয়ে দলিতদের বিজয় দিবস উপলক্ষে ব্যাপক অশান্তি ছড়ায়।
ওই ঘটনার তদন্তে গতকাল একযোগে দেশের বড় বড় শহরে অভিযানে নামে পুলিশের বিশেষ বাহিনী। অভিযান হয় ফরিদাবাদ, গোয়া, মুম্বই, ঠানে, রাঁচি ও হায়দরাবাদে।
ফরিদাবাদ থেকে সমাজকর্মী সুধা ভরদ্বাজ এবং হায়দরাবাদ থেকে কবি ও মানবাধিকারকর্মী ভারাভারা রাওকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
জেলে ঢোকানো হয়েছে গৌতম নাভলাখা, অরুণ ফেরেরা, ভার্নন গঞ্জালভেসকে। রাঁচিতে ফাদার স্ট্যান স্বামীর বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয় ল্যাপটপ, পেনড্রাইভসহ বেশ কিছু সরঞ্জাম।
মারাঠা পেশোয়াদের বিরুদ্ধে জয়কে ‘বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন করতে এ বছরের ১ জানুয়ারি মহারাষ্ট্রের ভীমা কোরেগাঁও এলাকায় গোটা রাজ্য থেকে জমায়েত হয় দলিত সম্প্রদায়ের মানুষজন।
সেখানেই উচ্চ বর্ণের সঙ্গে দলিতদের সংঘর্ষ হয়। দলিতদের ডাকে মহারাষ্ট্রে বনধে কার্যত তিন দিন ধরে অচল ছিল মহারাষ্ট্র। সে ঘটনার তদন্তেই এই ধরপাকড় বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত জুনে পুনের পুলিশ একটি চিঠি উদ্ধার করেছিল। সেই চিঠির পুরোটা জুড়েই ছিল প্রধানমন্ত্রীকে কোথায়, কবে এবং কিভাবে খুন করা হবে তার বর্ণনা।
ভীমা কোরেগাঁও হিংসায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, সেই পাঁচজনের মধ্যে একজনের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছিল ওই চিঠি।
ওই চিঠিতেই ভারাভারা রাওয়ের নাম উল্লেখ ছিল বলে পুলিশের দাবি। যদিও ভারাভারা রাও সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।
লেখক-সমাজকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টির বদলে ভারতের উচিত মতপ্রকাশ, সভা-সমিতি গঠন এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার রক্ষা করা। এ ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, বিদ্বজ্জনদের প্রতিবাদী ভাবমূর্তি এবং কাজকর্মের জন্যই কি তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে?’
পুলিশের ধরপাকড়ের খবর সামনে আসার পর বিজেপির নিন্দা করে এক যৌথ বিবৃতিতে গুজরাটের দলিত নেতা জিগ্নেশ মেবাণি, ফিল্ম মেকার নকুল সিংহ, সমাজকর্মী স্বামী অগ্নিবেশ ও আরো কয়েকজন বলেছেন, বিজেপির বিরুদ্ধে যারাই সুর চড়িয়েছে তাদেরই পরিণতি ভয়ানক হয়েছে।
সমাজকর্মী সুধা ভরদ্বাজ এবং কবি ও মানবাধিকারকর্মী ভারাভারা রাও, গৌতম নাভলাখা, অরুণ ফেরেরা, ভার্নন গঞ্জালভেস্ত তারা সবাই পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য লড়াই চালাচ্ছেন।
তাদের গ্রেপ্তারের একটাই উদ্দেশ্যভয় দেখানো। ২০১৯ লোকসভা ভোটের আগে এভাবে মেরুকরণের রাজনীতি করতে চাইছে বিজেপি।
সমাজবিজ্ঞানী রণবীর সমাদ্দার বলেন, ‘এই গ্রেপ্তারের ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। রাজনীতি নিয়ে সুস্থ আলোচনার পরিবেশটাই নষ্ট হতে চলেছে। বিরুদ্ধে কথা বললেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।’
মানবাধিকারকর্মী রণজিৎ সুর বলেছেন, যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ‘তারা প্রত্যেকেই বিজেপি-আরএসএসের অসাধু কার্যকলাপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছিলেন।
দেশজুড়ে দলিত-আদিবাসী এবং মুসলিমদের ওপরে যেভাবে নির্যাতন চালানো হচ্ছে, তার প্রতিবাদ করছিলেন তারা। তাঁদের মুক্তির জন্য আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।
ব্যবসার হিসাব নিকাশ এখন হাতের মুঠোয়- ক্লিক
এটি/আওয়ার ইসলাম