শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
অ্যাডভোকেট আলিফের কবর জিয়ারত ও পরিবারের পাশে হেফাজতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ  প্রাইমারি স্কুলে আলেম ধর্মীয় শিক্ষক বাধ্যতামূলক করতে হবে: মাওলানা ইসলামাবাদী বগুড়ায় ছাত্র আন্দোলনে আহত ও শহীদদের স্মরণে স্মরণসভা শেরপুরে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে স্মরণসভা শেরপুরে শেখ হাসিনাসহ ৫৯ জনের নামে মামলা কাল বাদ জুমা বায়তুল মোকাররমে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে যা বললেন জামায়াত আমীর হজ নিবন্ধনের সময় বাড়ল ১৫ দিন রাষ্ট্রদ্রোহী সংগঠন চলতে দেয়া হবে না: মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী ২২৫০০ কোটি নতুন টাকা ছাপিয়ে ৬ ব্যাংককে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

শতাব্দির ভয়বহ বন্যায় স্রোতে স্রোতে লাশের মিছিল ভারতের কেরালায়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: চারদিকে পানি। ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে ছাদ পর্যন্ত উঠে আসছে পানি। রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজারের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। যতদূর চোখ যায় শুধু পানি, নর্দমার পানি, খাবার পানি সব এক হয়ে গেছে।

নোংরা ঘোলা পানিতে স্রোতে পঁচা গন্ধ- এর মধ্যেই ভাসছে লাশ। বাবার লাশ, ছেলের লাশ, মায়ের লাশ, আদরের সন্তানের লাশ- শুধু লাশ আর লাশ। এটাই এখন কেরালার প্রতিদিনের দৃশ্য।

ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে প্রতি বছর কেরালাতেই বৃষ্টিপাত হয় সবচেয়ে বেশি। এ বছরও প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতে ব্যাপক বন্যা দেখা দিয়েছে। এ বন্যাকে গত এক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা বলে অভিহিত করা হয়েছে।

বন্যার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে অধিবাসীরা। দুর্গত এলাকায় চরম খাদ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। চারদিকে পানি থই থই করলেও নেই বিশুদ্ধ খাবার পানি।

ব্যবসার হিসাব নিকাশ এখন হাতের মুঠোয়- ক্লিক

শুধু কেরালাতেই নয়। ভারতের আট রাজ্যের এ বন্যায় নিহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। গত ১০ দিন ধরে অব্যাহত রয়েছে প্রবল বৃষ্টি। রাজ্যের ১৪টি জেলার ১৩টিই এখন বন্যাকবলিত। শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টি একটু ধরায় খানিকটা আশার আলো দেখছিল কেরালাবাসী!

বেলা বাড়ার সঙ্গেই ফের বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। ফলে পানির স্তর আরও বাড়ছে। বাড়ছে বিপদ। বেশিরভাগ এলাকাই এখন পানির নিচে।

পানির নিচে ঘর-বাড়ি আর রাস্তা-ঘাট। বন্যায় ইতিমধ্যে মারা গেছে ৩৪৪ জন। শনিবার নতুন করে ২৩টি লাশ উদ্ধার করা হয়। বানের পানির স্রোতে ভেসে বেড়াচ্ছিল লাশগুলো।

কেরালাজুড়ে খোলা হয়েছে ২০৯৪টি আশ্রয় শিবির। সেখানে আশ্রয় নিয়েছে ৭০ হাজারের বেশি পরিবারের ৩ লক্ষাধিক মানুষ।

কিন্তু রাস্তাঘাট ডুবে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় ঘর-বাড়িতে আটকে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। তাদের কাছে খাবার নেই, পানি নেই, নেই ওষুধ। বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন বেশিরভাগ এলাকায়।

গত কয়েক দিন ধরে রাতে অন্ধকারে থাকছে অধিবাসীরা। এসব এলাকায় হেলিকপ্টার থেকে ফেলা হচ্ছে ত্রাণসামগ্রী। বিশুদ্ধ পানি নিয়ে বিশেষ ট্রেনও পাঠানো হয়েছে।

একই সঙ্গে চলছে উদ্ধার অভিযান। নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের। স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি তারা উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।

নৌবাহিনীর ৪২টি, সেনাবাহিনীর ১৬টি, উপকূলরক্ষী বাহিনীর ২৮টি এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবেলা বাহিনীর ৩৯টি জাহাজ ও নৌকা উদ্ধারকাজে নিযুক্ত রয়েছে।

তবে এখনও সব এলাকায় পৌঁছতে পারেনি উদ্ধারকারীরা। এখনও ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষ উদ্ধারের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। আটকেপড়ারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উদ্ধারের আর্তি জানাচ্ছে।

চেন্নাগুরের বিধায়ক সাহায্যের জন্য আর্তি জানিয়েছিলেন শুক্রবার রাতেই। তিনি জানিয়েছিলেন উদ্ধারকাজ না শুরু হলে প্রায় ১০,০০০ জনের জীবনহানির আশঙ্কা রয়েছে।

কিন্তু শনিবার সকালের আগে চেন্নাগুরে পৌঁছতে পারেনি উদ্ধারকারী সেনা দল।

ভয়াবহ বন্যায় পুরোপুরি বিপর্যস্ত কেরালা। এখন পর্যন্ত সরকারি হিসাব অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা ৩৫০। বন্যায় আটকে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। আশ্রয়শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন কয়েক লাখ গৃহহীন মানুষ।

১৪টি জেলার মধ্যে ১৩টিতেই সতর্কতা। ইতিমধ্যে প্রায় ২০ হাজার কোটি রুপির সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখনও চলছে উদ্ধারকার্য। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ইতিমধ্যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে অন্যান্য রাজ্যও।

এই পরিস্থিতিতে শনিবার কেরালায় যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কোচি বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে যান মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।

এরপর বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন তিনি। বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রীসহ অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে।

কেন্দ্রের তরফ থেকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ৫০০ কোটি টাকা সাহায্যের কথা ঘোষণা করেন। পাশাপাশি মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ২ লাখ টাকা এবং আহতদের ৫০,০০০ টাকা করে দেয়ার কথাও জানান।

এরপর হেলিকপ্টারে বন্যাকবলিত এলাকাগুলো ঘুরে দেখেন। এর আগেও কেন্দ্র থেকে ১০০ কোটি টাকা সাহায্যের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল।

এদিকে কেরালা সরকারের পক্ষ থেকে অন্য রাজ্যগুলোরও সাহায্য চাওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তেলেঙ্গানা ২৫ কোটি টাকা সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছে। দিল্লি, পাঞ্জাব, বিহার ১০ কোটি টাকা দেয়ার কথা জানিয়েছে।

উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক ৫ কোটি টাকা এবং ২৫০ জন দমকলকর্মীকে উদ্ধারকারী নৌকাসহ কেরালায় পাঠানোর কথা ঘোষণা করেছেন।

একই ভাবে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ঋণ মওকুফের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ২ কোটি টাকা দিয়েছে। অন্যরাও একইভাবে কেরালার পাশে দাঁড়িয়েছেন। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী কেরালার বন্যাকে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া 

যে দু’টি শব্দের কারণে কানাডার ওপর ক্ষিপ্ত সৌদি আরব


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ