সাজিদ নূর সুমন
ফিচার রাইটার
ডাইনিং টেবিলে বসে যারা লাঞ্চ-ডিনার সেরে থাকেন, তারা বরং ভালোর চেয়ে নিজেদের ক্ষতিই করছেন বেশি।কারণ বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে টেবিল-চেয়ারে বসে খাবার খেলে পেট ভরে ঠিকই, কিন্তু শরীরের কোনও মঙ্গল হয় না। বরং নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যায় বেড়ে।
অন্যদিকে নিচে বসে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো। অনেকের কাছে হয়তো কথাটি অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। কিন্তু কথাটি সত্য। চলুন তবে দেখে নেয়া যাক সেই কারণগুলোকে, যার কারণে নিচে বসে খাওয়া স্বাস্থ্যকর।
১. হার্টে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
হাঁটু মুড়ে বসে থাকাকালীন শরীরের উপরের অংশে রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায়। ফলে হার্টে কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে হ্রাস পায় কোনও ধরনের হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও।
২. সারা শরীরে রক্ত চলাচলের উন্নতি ঘটে
আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রতিটি অঙ্গে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে যাওয়াটা জরুরি। যত এমনটা হবে, তত রোগের প্রকোপ কমবে। সেই সঙ্গে সার্বিকভাবে শরীরও চাঙ্গা হয়ে উঠবে। আর যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে বাবু হয়ে বসে থাকাকালীন সারা শরীরে বিশুদ্ধ অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের চলাচল বেড়ে যায়।
৩. স্ট্রেসের মাত্রা কমে
শুনতে আজব লাগলেও একাধিক স্টাডিতে দেখা গেছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাটিতে বসে থাকলে শরীর এবং মস্তিষ্কের অন্দরে বেশ কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে, যার প্রভাবে স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ কমে যায়। ফলে মানসিক অবসাদ তো কমেই, সেই সঙ্গে স্ট্রেসর মাত্রাও কমতে শুরু করে।
৪.দেহকে নমনীয় করে
আমরা যোগব্যায়াম এবং ব্যায়ামের সময় স্কোয়াট এবং পদ্মাসন করার ফলে দেহকে যে ধরনের নমনীয়তা দিতে পারি, নিচে বসে খেলেও একই সুবিধা পেতে পারি। দেহ নমনীয় হলে পিঠে ব্যথা বা মেরুদণ্ডের ব্যথাজনিত সমস্যা দূর হয়। তাই চেয়ার টেবিলে বসে খাওয়ার চাইতে নিচে বসে খাওয়া ভালো।
৫.শরীর শক্তপোক্ত হয়
মাটিতে বসে খাওয়ার অভ্যাস করলে থাই, গোড়ালি এবং হাঁটুর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে শিরদাঁড়া, পেশি, কাঁধ এবং বুকের ফ্লেক্সিবিলিটিও বাড়ে। ফলে সার্বিকভাবে শরীরে সচলতা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি নানাবিধ রোগও দূরে থাকে।
৬. হজম ক্ষমতার উন্নতি হয়
যখন আমরা নিচে খেতে বসি তখন স্বাভাবিকভাবেই আমরা পা "ক্রস" করে বসি। এই বসার নাম সুখাসন বা পদ্মাসনের অর্ধেক অংশ। এই আসনগুলো যোগব্যায়ামের সময় ব্যবহৃত হয়, যা আমাদের পরিপাকতন্ত্রকে উন্নত করতে সাহায্য করে। এছাড়া যারা প্লেট নিচে রেখে খান। তাদের খাওয়ার সময় স্বাভাবিকভাবেই পিঠ বাঁকা করে সামনে এগিয়ে যেতে হয়। এভাবে প্রতিবার সামনে পেছনে হওয়ার কারণে পেটের পেশীর ব্যায়াম হয় এবং পাকস্থলীর অ্যাসিড বের হয় যা সহজে খাবার হজম করে।
৭. দীর্ঘজীবী হতে সাহায্য করে
অবিশ্বাস মনে হলেও নিচে বসে খাওয়ার সাথে দীর্ঘজীবী হওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ প্রিভেন্টিভ কার্ডিওলজি তাদের একটি গবেষণাপত্রে বলেন, ‘নিচে আমরা পদ্মাসনে বসে খেলে আমাদের জীবনীশক্তির বৃদ্ধি ঘটে, আমাদের দেহের নিচের অংশের নমনীয়তা বাড়ে এবং শক্তিশালী হয়’। তারা তাদের গবেষণায় পান যারা বেশীরভাগ সময় নিচে বসে খান তারা অন্যান্যদের তুলনায় বেশিদিন বাঁচেন।
৮.ব্যথা কমে
বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে মাটিতে বসে খাওয়ার সময় আমরা মূলত পদ্মাসনে বসে থাকি। এইভাবে বসার কারণে পিঠের, পেলভিসের এবং তল পেটের পেশীর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে সারা শরীরের কর্মক্ষমতা এত মাত্রায় বৃদ্ধি পায় যে সব ধরনের যন্ত্রণা কমে যেতে সময় লাগে না।
৯.ওজন কমায়
নিচে বসে খাওয়ার ফলে আমরা যে আসনে বসি তা আমাদের ওজন কমাতে বেশ সহায়ক। আমরা যখন বসি তখন আমাদের মস্তিস্ক রিলাক্স হয়। এবং এভাবে বসে স্বাভাবিকভাবেই আপনি আস্তে আস্তে খাবেন। এতে করে পাকস্থলীতে খাবার হজম হওয়ার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হয়। ফলে আমদের দেহে মেদ জমতে পারে না।
১০. হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য উন্নত করে
আমরা নিচে বসে পদ্মাসনে বসে খাওয়ার সময় আমাদের দেহের নড়াচড়ার মাধ্যমে দেহে রক্তসঞ্চালনের বৃদ্ধি ঘটে যা চেয়ারে বসে খেলে হয় না। রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি আমাদের শিরা উপশিরা এবং ধমনীকে সুস্থ রাখে। এতে করে আমাদের হৃৎপিণ্ডও ভালো থাকে।
ব্যবসার হিসাব নিয়ে জটিলতা আর নয় (কল- 01771 403 470) ক্লিক করুন
আরও পড়ুন
‘মাদরাসা শিক্ষার্থীদের আস্থা ও ভালোবাসার শক্ত ঘাটি হবে কওমি শিক্ষাঙ্গন’
মন্ত্রিসভায় পাস হলো কওমি আইন, দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান
সরকারকে অভিনন্দন তবে শঙ্কাও আছে: উবায়দুর রহমান খান নদভী
দেশে দেশে তারুণ্যের জাগরণ, পিছিয়ে পড়ছে কি কওমি তরুণরা?
-আরএম