আবদুল্লাহ তামিম: ওসামা বিনা লাদেনের জীবিত থাকতে তার পাশে একটি ছোট ছেলেকে কালাশনিকভ হাতে বসে থাকতে দেখা যেত। এই ছোট ছেলেটি হামজা বিন লাদেন। ওসামা বিন লাদেনের জীবিত তিন স্ত্রীর মধ্যে খাইরিয়া সাবারের পুত্র।
এই হামজা এখন পাশ্চাত্য ও পাশ্চাত্যপন্থী দেশগুলোর মাথাব্যাথা। আর তাই হামজা বিন লাদেনকে ‘গ্লোবাল টেররিস্ট’-এর কালো তালিকাভুক্ত করেছে আমেরিকা।
এমনকী, হামজার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে। জানা গেছে, হামজা মুহাম্মদ আত্তার মেয়েকে বিয়ে করেছেন। ২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর লাদেনের মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী দু’টি বিমান হাইজ্যাক করে আল কায়েদা সদস্যরা।
এই বিমান দু’টি গিয়ে আছড়ে পড়ে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের যমজ টাওয়ারে। এই অপহরণকারীদের অন্যতম ছিল মুহাম্মদ আত্তা। কিন্তু হামজা ততদিনে বেড়ে ওঠে আল কায়েদার লাদেন-পরবর্তী নেতা আয়মান আল-জওয়াহিরির তত্ত্বাবধানে।
এই বিবাহ থেকে একথা স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে আল কায়েদা কোনো বড় ছক কষছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের কাছে দেয়া সাক্ষাৎকারে এই তথ্য প্রকাশ্যে এনেছেন ওসামার সৎ ভাইরা।
আহমাদ ও হাসান আল আত্তাস বলেছেন, তাদের ধারণা হামজাকে আল কায়েদার শীর্ষ পদ দেয়া হয়েছে। পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদে মার্কিন বাহিনীর অভিযানে নিহত পিতার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেয়ার প্রতিজ্ঞাও করেছেন হামজা।
লাদেনের ভাই হাসান আল-আত্তাস বলেন, এখন হামজা যদি আমার সামনে থাকতো তাহলে আমি তাকে বলতাম, ‘আল্লাহ তোমাকে পথ দেখাবে। দ্বিতীয়বার ভাবো তুমি কী করছো। বাবার পথে আবার পা বাড়িও না। তুমি তোমার আত্মার সবচেয়ে খারাপ অংশের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছ।’
অ্যাবটাবাদে মার্কিন অভিযানে ওসামা নিহত হওয়ার সময়ে তার সঙ্গেই ছিলেন কনিষ্ঠ স্ত্রী খাইরিয়া। ওসামা বেঁচে থাকাকালীন কোনো দিন খাইরিয়ার ছোট ছেলেকে কাছ ছাড়া করতেন না।
কিন্তু, পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে আত্মগোপন করে থাকার সময়ে সেখানে হামজাকে রাখেননি ওসামা। তাকে সরিয়ে দিয়েছিলেন আফগানিস্তানে আল-কায়দার গোপন ঘাঁটিতে। ওই অভিযানের পর থেকেই হামজা প্রকাশ্যে ওয়াশিংটন, লন্ডন, প্যারিস, তেল আবিবে হামলা শুরু করা জন্য অনুসারীদের আহ্বান জানিয়েছে।
২০১৬ সালে ২১ মিনিটের এক অনলাইন অডিও বার্তায় তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিশোধের হুমকি দেয়। হামজা বিন লাদেনের পিতৃপরিচয়কে কাজে লাগিয়ে তাকে বিশ্বসন্ত্রাসের মুখ করতে মরিয়া আল-কায়দা নেতৃত্বও।
এই মুহূর্তে লাদেন-পুত্র হামজার বয়স ৩০ ছুঁই ছুঁই। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গত দুই বছর ধরে হামজা বিন লাদেন কোথায় আছে তা জানার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের ধারণা, ওসামা বিন লাদেনের উত্তরাধীকারকে কেন্দ্র করেই গোষ্ঠীটি সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ওসামা বিন লাদেনের আরেক ছেলে খালিদ অ্যাবটাবাদে মার্কিন অভিযানে নিহত হন। এছাড়া আরো এক ছেলে সাদ ২০০৯ সালে আফগানিস্তানে ড্রোন হামলায় নিহত হন।
অ্যাবটাবাদের বাড়ি থেকে পাওয়া ওসামার লেখা চিঠিতে দেখা গেছে, নিজের স্থলাভিষিক্ত করতে হামজাকে তৈরি করছিলেন তিনি। সাদের নিহত হওয়ার পর তিনি এই কাজে মনোনিবেশ করেছিলেন বলে মনে করা হয়।
ওসামার স্ত্রী ও বেঁচে থাকা ছেলেমেয়েরা সৌদি আরবে ফিরে গেছেন। তারা বিন লাদেনের মা আলিয়া ঘানেমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখেন। দ্য গার্ডিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে আলিয়া ঘানেম জানিয়েছেন, পরিবারের বেঁচে থাকা সদস্যদের সঙ্গে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন।
আর হামজা? ওসামার মৃত্যুর পর হামজাকে গড়েপিটে নিয়েছে আল কায়েদার শীর্ষনেতারা। একদা বিশ্বের ত্রাস এই গোষ্ঠীর অন্দরে অনেকটাই ভাগ বসিয়েছে নতুন গোষ্ঠী আইএস (ইসলামিক স্টেট)।
তাদের দাপটে আল-কায়েদা নেতারা এতটাই কোণঠাসা, যে তারা আইএসের বিরুদ্ধে দল ভাঙানোর অভিযোগও এনেছিল। ভিন্ন আদর্শে অনুপ্রাণিত নবীনরা এখন দলে দলে আইএসেই যোগ দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে হামজাকে সামনে এগিয়ে দিয়ে আল-কায়েদা কম বয়সীদের চোখ ঘোরাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি অনেকের।
সূত্র: আরাবিয়া জার্নাল, রয়টার্স
সৌদি সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা