আওয়ার ইসলাম : আজকাল আমরা সুস্থ থাকার জন্য অনেক কিছুই করি | যেমন মশলাদার ও ভাজা খাবারের বদলে স্বাস্থ্যকর খাবার খাই‚ জিমে যাই‚ যোগা করি‚ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করি‚ ইত্যাদি | কিন্তু জানেন কি আমাদের বাড়িতেই এমন অনেক অস্বাস্থ্যকর জিনিস আছে যার থেকে আমাদের শরীর খারাপ হতে পারে | তাই সবার আগে ওই অস্বাস্থ্যকর জিনিসগুলোকে বাড়ি থেকে বিদায় করুন |
১. খাবার রাখার প্লাস্টিকের সরঞ্জাম ও বোতল : যদি হেলদি থাকতে চান তাহলে ভুলেও প্লাস্টিকের বোতল থেকে জল খাবেন না বা প্লাস্টিকের সরঞ্জামে খাবার জিনিস রাখবেন না | প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ব্যবহার করলে Bisphenol A (BPA), Bisphenol S (BPS) এবং Phthalates-এর মতো স্মূহ ক্ষতিকারক পদার্থের সঙ্গে এক্সপোজারের সম্ভবনা বৃদ্ধি পায় |
BPA এক ধরণের কম্পাউন্ড যা পলিকার্বোনেট এবং প্লাস্টিক তৈরি করতে কাজে লাগে | এটা আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর |
২. অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল সাবান ও ডিটারজেন্ট : আপনি যদি নিয়মিত অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল সাবান ও ডিটারজেন্ট কিনে থাকেন এই ভেবে যে এগুলো আপনার শরীরের জন্য ভালো‚ তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন | এই হ্যাবিট তাড়াতাড়ি পাল্টে ফেলুন |
অ্যান্টিব্যাক্টরিয়াল সাবান ও ডিটারজেন্টে এক ধরণের কেমিক্যাল থাকে যার নাম ট্রাইক্লোসান‚ যা খুবই ক্ষতিকারক | এছাড়াও এতে ক্ষতিকারক Butoxyethanol, BPA, D-limonene, Dyes, Parabens, Phthalates এবং Chloride থাকে |
৩. রুম ফ্রেশনার : রুম ফ্রেশনার বা এয়ার ফ্রেশনারে Phthalates বলে এক ধরণের কেমিক্যাল থাকে যার সংস্পর্শে এলে ক্যান্সার বা অন্য শারীরিক অসুস্থতা হতে পারে |
যদি রুম ফ্রেশনার ব্যবহার করতেই হয় তাহলে নিজেই তা ঘরে তৈরি করে নিন | এটা তৈরি করতে একটা বড় পাত্রে জল ভরুন | এতে লেবু‚ লেবুর খোসা বাটা‚ ল্যাভেন্ডার‚ দারচিনি‚ মিন্ট‚ রোসমেরী‚ তেজপাতা এবং স্টার অ্যানিস সব একসঙ্গে মিশিয়ে জল ফুটিয়ে নিন | দেখবেন সুন্দর সুগন্ধে ভরে উঠবে আপনার বাড়ি |
৪. বাসন মাজার স্পঞ্জ : প্রতি দু‘সপ্তাহ অন্তর বাসন মাজার স্পঞ্জ ( স্কর্চ বাইট ) পাল্টে ফেলুন | বিশেষজ্ঞরা মনে করেন একটা স্পঞ্জের প্রতি বর্গক্ষেত্রে ১০ মিলিয়ান ব্যাকটেরিয়া থাকে |
স্পঞ্জের বদলে সুতির কাপড় ব্যবহার করতে পারেন | যেহেতু কাপড় স্পঞ্জের থেকে পাতলা হয় তাই তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় | ফলে ব্যাকটেরিয়া কম জন্মায় | তবে কাপড় ব্যবহার করলেও তা রোজ ভালো করে সাবান দিয়ে ধুতে হবে |
৫. পুরনো ননস্টিক বাসন : এই ধরণের বাসনে রান্না করতে সুবিধা হয় ঠিকই কিন্তু একটা সময়ের পর অবশ্যই পাল্টে ফেলুন | নিয়মিত ব্যবহারের ফলে নন স্টিক বাসনের ওপরের টেফলন কোটিং উঠে যায় | এই ধরণের বাসনে যখন রান্না করা হয় তখন টক্সিক গ্যাস এবং পার্টিকল রান্নাঘরের মধ্যে মিশে যায় | এর থেকে ফ্লু এর সম্ভাবনা অনেকটা বেড়ে যায় |
৬. কন্ট্যাক্ট লেন্স রাখার পাত্র : এমনিতে কন্ট্যাক্ট লেন্স চোখের জন্য সেফ এবং আরামদায়ক | কিন্তু একে যদি নিয়মিত পরিষ্কার না করেন তাহলে চোখের বিভিন্ন অসুখ হতে পারে এমনকী দৃষ্টিশক্তি অবধি হারাতে পারেন | কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করার সময় আমরা অনেকেই কন্ট্যাক্ট লেন্স কেস পরিষ্কার করি না | তাই অপরিছন্ন কেস চোখের ইনফেকশনের প্রাথমিক কারণ |
এটা এড়াতে সব সময় সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে কন্ট্যাক্ট লেন্স ধরুন | নিয়মিত কেস পরিষ্কার করুন আর ভালো করে শুকিয়ে রাখুন |এছাড়াও অন্য ম্যানুফ্যাকচারের ডিসইনফেক্টিং সলিউশন ব্যবহার করবেন না | আর ক‘দিন অন্তর কেস পাল্টে ফেলুন |
৭. কেমিক্যাল এনরিচড কসমেটিকস : শ্যাম্পু হোক বা লিপস্টিক বা নেল পলিশ বা সানস্ক্রিন‚ পুরুষ ও মহিলারা যে সব কসমেটিকস ব্যবহার করে তাতে বহু রকমের ক্ষতিকারক কেমিক্যাল থাকে | অনেক কসমেটিকসে যেমন ফাউন্ডেশন‚ পাউডার‚ ব্লাসার‚ মাস্কারা‚ আই লাইনার‚ আই শ্যাডো এবং লিপস্টিকে Lead, Beryllium, Thallium, Cadmium, Arsenic ইত্যাদি থাকে যা খুবই ক্ষতিকারক |
কসমেটিকস কেনার আগে ভালো করে দেখে নিন | যাতে মিনারেল বেসড পিগমেন্টস এবং প্রাকৃতিক তেল আছে সেই ধরণের জিনিস ব্যবহার করুন | যে সাবান ও শ্যাম্পুতে Triclosan থাকে সেগুলো এড়িয়ে চলুন |
৮. পুরনো টুথব্রাশ : বার বার ব্যবহারের ফলে টুথব্রাশের ব্রিসেলস নষ্ট হয়ে যায় | পুরনো টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজলে জমে থাকা প্লাক এবং Calculus পরিষ্কার হয় না | তাই দাঁতের ক্ষতি এড়াতে পুরনো দাঁত মাজার ব্রাশ ফেলে দিন | প্রতি তিন মাস অন্তর ব্রাশ পাল্টান |
৯. বহু পুরনো রানিং শু : দৌড়ানো‚ জগিং বা হাঁটা শরীরের জন্য ভালো কিন্তু ক্ষয়ে যাওয়া জুতো পরে তা যদি করেন তাহলে তা আপনার পায়ের জন্য খুবই ক্ষতিকারক | ক্ষয়ে যাওয়া জুতো কম প্রেসার অ্যাবসর্ব করে ফলে পায়ের মাসল‚ হাড়ের ওপর প্রেসার পড়ে | চোট লাগার সম্ভাবনাও অনেকটা বেড়ে যায় | সূত্র : বাংলালাইভ।
আরও পড়ুন : স্বাস্থ্য ভালো রাখার ১০ উপায়