আহসান যায়েদ : হাদিস শরিফে আমরা পড়েছি, নবীর যুগের আরবরা মানুষের পা দেখেই বলে দিতে পারতেন তার বংশপরম্পরা। এটা আল্লাহ তাআলার প্রদত্ত একটি জ্ঞান। মানুষকে চলার সুবিধার্থেই অনেক অভিজ্ঞতার সঞ্চার করতে হতো তখন। হাতের আঙুলের কড়েই করে ফেলতে পারতেন লাখ-কোটির হিসেব।
হযরত আশরাফ আলী থানবী রহ. একজন অভিজ্ঞ হাকিম ছিলেন। তিনি দূর থেকে একজন রোগীকে দেখেই তার রোগ নির্ণয় করে ফেলতে পারতেন। হযরত থানবী রহ. একজন আধ্যাত্মিক রাহবার ছিলেন বলে তার জন্য এটা খুবই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু প্যাথলজিক্যাল ব্যবস্থা যখন আসেনি তখন সব ডাক্তারকেই খুব অভিজ্ঞ হতে হতো। রোগীর অবস্থা দেখেই তার রোগের লক্ষণ, ক্যাটাগরি বলে দিতে হতো। অথচ এখন যান্ত্রিক পরীক্ষ-নিরীক্ষা ছাড়া একজন ডাক্তার কিছুই বলতে চান না।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, একজন মানুষের হাতের লেখা দেখেই বলে দেয়া যাবে সে কোন দেশের নাগরিক। ক্লাউড অফ লাইন ডিস্ট্রিবিউশন নামে একটি আমেরিকান কোম্পানি এক গবেষণায় দেখিয়েছে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সফটওয়ারের মাধ্যমে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, ভারত, চিন, ইরানসহ বেশ কয়েকটি নাগরিকের হাতের লেখা দেখে তাদের নাগরিকত্ব নির্ণয় করে ফেলা যাবে।
মানুষের হিসাব-নিকাশের জন্য অনেক আগেই আবিষ্কার হয়েছে কম্পিউটার। তারও আগে ক্যালকুলেটার। রোগ নির্ণয়ে এসেছে প্যাথলজিপ্রযুক্তি। গুটি কয়েক বিজ্ঞানী তাদের মস্তিষ্ক যন্ত্রের মধ্যে বিলীন করে দিয়ে গড়ে দিয়েছেন অনেক অনেক প্রযুক্তিগত সুবিধা। ফলে সমাজের বিরাট একটা অংশ মানে গুটিকয়েক বিজ্ঞানি ছাড়া বাকি সবাই জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত।
প্রযুক্তি এখন আস্ত একটি মস্তিষ্কখেকো দানব আকারে হাজির হয়েছে সাম্প্রতিক বিশ্বে। মানুষের মন, মস্তিষ্ক, আবেগ, বিবেক; মানুসের সময়, মেধা, আচার, উপলব্ধি সবই গিলে নিয়ে এই ভয়ঙ্কর দানব। নতুন নতুন এসব দানব আবারও প্রমাণ করছে, মানুষের প্রাচীন অভিজ্ঞতাই মৌলিক।
মানুষ নিজে চিন্তা করে জীবনের যে সমাধান বের করে থাকে সেটাই বাস্তব এবং মহান আল্লাহ তাআলা মানুষকে জীবন চালাতে যেসব কৌশল শিখিয়েছেন সেগুলোই মৌলিক। আর প্রযুক্তিদানব মানুষকে, মানবজাতিকে দিনদিন পঙ্গুত্বের দিকে ঠেকেই দিচ্ছে।
‘প্রযুক্তির অপব্যবহার না রুখলে মেধাশূন্য হবে প্রজন্ম’
এসএস