মুজিবুর রহমান: প্রস্তুতি চলছিল ঈদ উৎসব পালনের ৷ ঈদুল ফিতরের বাকি ছিল ৪ দিন ৷ কিন্তু এর আগেই আকস্মিক বন্যায় সবশেষ ৷ হটাৎ উজানের ঢল আর ভারী বর্ষণ ৷ নদীর বাঁধ ভেঙ্গে আকস্মিক বন্যা ৷ পানি আর পানি৷ তাই জেলার মনু, ধলাই, কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী বাসিন্দাদের ঈদ আনন্দ আসার আগেই ভর করে চরম দূর্ভোগ ৷
ঘর নেই৷ ক্ষেত নেই ৷ দুমুটো ভাত, বিশুদ্ধ পানি স্যানিটশন ও চিকিৎসারও নেই নিশ্চয়তা ৷ তাই সবছেড়ে প্রাণে বাঁচতে ঠাঁই নিতে হচ্ছিল আশ্রয় কেন্দ্রে৷ সব হারিয়ে তারা এখন অনেকটা নিঃস্ব৷
সরকারি তরফের অপর্যাপ্ত ত্রাণে মানুষের ক্ষোভের অন্ত নেই৷
তবে অল্পপরিসরে হলেও সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন এবং ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকই তাদের দুর্দিনে এগিয়ে এসেছেন৷ ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই বছর বছর ত্রাণ নিতে অনাগ্রহী৷ তারা চায় স্থায়ীভাবে এ রক্ষা বাঁধের সমস্যা লাঘবের৷
গেল ১৩ জুন সকাল থেকে আকস্মিক বন্যায় মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর, কুলাউড় কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজারের মনু, ধলাই নদীর তীরবর্তী ৪০ টি ইউনিয়ন ২টি পৌরসভার প্রায় চার শতাধিক গ্রামের ৪ লক্ষাধিক মানুয় পানি বন্দী ছিল৷
হটাৎ নদীর বাঁধভাঙ্গা পানির তোড়, মানুষের বসতভিটার সঙ্গে আশ্রয় হারায় হাঁস, মোরগি, গরু মহিষসহ গৃহপালিত পশুও৷ মানুষের সঙ্গে খাবার সংকটে পড়ে গবাদি পশু৷ ডুবে যায় প্রায় তিন শতাধিক পুকুর ও মৎস খামার৷
মনু নদীর বাঁধ ভেঙ্গে মৌলভীবাজার পৌর শহরের ৩টি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়৷ চরম দুর্ভোগে পরে অফিসপাড়ার জনগণ৷ তিনদিন পর্যন্ত জেলা ও উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বিচ্ছিন্ন৷ ঈদগাহ মসজিদ ছিল বন্যার পানিতে প্লাবিত৷ যার কারণে মানুষ পবিত্র রমজান এমনকি মাসব্যাপী সিয়াম পালনের পর কাঙ্খিত ঈদুল ফিতর উদযাপন ও ঈদের জামাতটিও পড়তে পারেননি৷ ফলে মানুষের হৃদয়ে আফসোস বিরাজ করছে৷
তবে বর্তমানে উজানে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে ৷
মৌলভীবাজার পৌরসভা, রাজনগর, কমলগন্জ, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার অধিকাংশ এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমেছে৷ পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে বন্যাকবলিত মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে৷ স্থানে স্থানে রাস্তায় বড় বড় গর্ত হয়েছে৷ মরা জীবজন্তু, গাছপালার পাতা-ডাল পঁচে যাওয়ায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে৷ বন্যার পানিতে নলকুপ ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে৷
স্যানেটারী অবস্থা করুন৷ মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে ৷ পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে৷ সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে৷ তবে তা পর্যাপ্ত নয়৷ রাস্তাঘাটে কাদা৷ বিশেষ করে রাজনগর থানার কামারচাক ইউনিয়নের হাটি করাইয়া, ইসলামপুর নওয়াগাঁও গ্রামের কাচা রাস্তা দিয়ে চলা যাচ্ছে না৷ ছাত্র রোগিদের জন্য যেন এ রাস্তাগুলো এক মরণফাঁদ৷
ভোক্তভোগী আব্দুস সালাম জানান, তার স্ত্রীর প্রসব ব্যথা শুরু হলে কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে কাদাযুক্ত রাস্তা দিয়ে দুজনে একটি খাটে করে মৌলভীবাজার শহরে ক্লিনিকে ভর্তি করেন৷ কিন্তু বিলম্ব হওয়ার কারণে পেটে থাকা দুই সন্তানই মারা যায়।
দ্রুত এসব ভোগান্তির প্রতিকার আবশ্যক, না হয় জনগণ আর দূর্ভোগ পোহাতে হবে দীর্ঘদিন৷ পানি থাকা অবস্থায় যে কাঁচা ঘরটি দাঁড়িয়ে ছিল পানি নামার পর সেই ঘরগুলো ধসে পড়েছে৷
মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়ক ও মৌলভীবাজার—সিলেট আনচলিক মহাসড়ক দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়েছে৷
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, মৌলভীবাজার শহরের বড়হাটের বাড়ইকোনায় মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ও রাজনগরের কালাইগুলের ভাঙ্গন মেরামতের কাজ শেষ হয়েছে৷ রাস্তার মেরামতও চলছে৷ তবে স্থবির গতিতে৷
কওমি মাদরাসা নিয়ে একমুঠো ভাবনা
বাসায় ঢুকে অভিনেত্রীকে গণধর্ষণ
-আরআর