ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
লিভার হলো আমাদের শরীরের সবচেয়ে বড় গ্রন্থি। কিন্তু শুধু আকারেই যে এটি সবার বড় তা নয়, তবে লিভার গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্ববৃহৎ অঙ্গ। শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রয়োজন সুস্থ লিভার। লিভারকে বলা হয় শরীরের পাওয়ার হাউজ যা জীবন ধারনের জন্য অপরিহার্য। তাই লিভারের অসুস্থতার ফলাফল ক্ষেত্র বিশেষে হতে পারে ব্যাপক ও ভয়াবহ।
লিভারের বিভিন্ন রোগ
লিভার নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কিছু রোগ বংশগত, কিছু একোয়ার্ড বা অর্জিত, কিছু রোগ স্বল্পস্থায়ী যা চিকিৎসায় পুরোপুরি ভাল হয়ে যায়, কিছু রোগ দীর্ঘস্থায়ী, যা চিকিৎসা সত্ত্বেও ক্রমাগত জটিল থেকে জটিলতর হয়ে নিঃশেষ করে দেয় জীবন।
হেপাটাইটিস বা লিভারে প্রদাহ বিশ্ব জুড়ে লিভারের প্রধান রোগ। নানা কারনে এই প্রদাহ হতে পারে। যার অন্যতম কারণ এ.বি.সি.ডি.ই, নামক হেপাটাইটিস ভাইরাস। জল ও খাবারের মাধ্যমে সংক্রমিত হেপাটাইটিস এ ও ই ভাইরাস লিভারে একিউট হেপাটাইটিস বা স্বল্প স্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি করে যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরোপুরি সেরে যায়।
দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের জন্য দায়ী হেপাটাইটিস বি, সি ও ডি ভাইরাস। অনেক কারনেই লিভারের প্রদাহ হতে পারে। এছাড়াও দীর্ঘস্থায়ী বা ক্রনিক হেপাটাইটিস বছরের পর বছর চলতে থাকলে লিভারের কোষগুলো মরে যায়।
অকার্যকর ও অপ্রয়োজনীয় ফাইব্রাস টিসু সেস্থান দখল করে জন্ম দেয় সিরোসিস নামক মারাত্মক রোগ। লিভার সিরোসিস একটি মারাত্বক রোগ যা পরবর্তিতে লিভারের কার্যক্ষমতা কমিয়ে ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে। লিভার সিরোসিসের লক্ষণ-
প্রাথমিকভাবে সিরোসিসের কিছু লক্ষণ দেখা যায় তা হল- দুর্বলতা, সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়া, জ্বর জ্বর ভাব, পেটের ডান পাশে ব্যথা, দাঁতের মাঢ়ি বা নাক থেকে রক্ত পড়া, ঘনঘন
পেটে পানি আসার কারণে পেট ফুলে যাওয়া, জন্ডিস, অজ্ঞান হওয়া, রক্তবমি, পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া, ফুসফুসে পানি আসা, কিডনি ফেইলিউর, শরীরের যেকোনো জায়গা থেকে অনিয়ন্ত্রিত রক্তপাত, সর্বশেষ পর্যায়ে লিভার ক্যানসার।
লিভার সিরোসিসের কারণ
সিরোসিসের কারণগুলো বিভিন্ন হতে পারে। লিভার সিরোসিসের অন্যতম প্রধান কারণ হেপাটাইটিস বি ভাইরাস, আর এর পরেই রয়েছে ফ্যাটি লিভার। ফ্যাটি লিভার নানা কারণে হয়ে থাকে।
যেমনঃ ডায়াবেটিস, রক্তে চর্বি বেশি থাকা, অতিরিক্ত ওজন, উচ্চরক্তচাপ, হাইপোথাইরয়েডিজম ইত্যাদি। এক গবেষণায় জানা যায়, ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত প্রায় ৩০ শতাংশ রোগী পরে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়।
লিভার সিরোসিসের আরেকটি মারাত্মক কমপ্লিকেশন হলো হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথি বা হেপাটিক কোমা। সহজ কথায় বলতে গেলে, অপ্সান হয়ে যাওয়া। প্রাণিজ আমিষ যেমন মাছ-মাংস, ডিম-দুধ ইত্যাদি খুব বেশি পরিমাণে খেলে রক্তে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বেড়ে গিয়ে রোগীর অপ্সান হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
তাই ডিকম্পেনসেটেড বা এডভান্সড লিভার সিরোসিসের রোগীদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। তবে প্লান্ট প্রোটিন যেমন ডাল এ ধরনের রোগীদের জন্য নিরাপদ। তাই বলে অতিরিক্ত সতর্ক হতে গিয়ে প্রাণীজ আমিষ একেবারেই বাদ দিলে চলবে না।
সেক্ষেত্রে রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে যেয়ে কিডনি ফেইলিওর হতে পারে। বিশেষ করে যেহেতু এ ধরনের রোগীদের কিডনি এমনিতেই নাজুক অবস্থায় থাকে এবং তারা হেপাটোরেনাল সিনড্রোম নামক মারাত্মক ধরনের কিডনি ফেইলিওরের ঝুঁকিতে থাকেন।
হোমিওপ্রতিবিধান
রোগ নয় রোগীকে চিকিৎসা করা হয়, এই জন্য অভিজ্ঞ হোমিওচিকিৎসকে রোগীর পুরা লক্ষন মিলিয়ে চিকিৎসা দিতে পারলে তাহলে লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন ছাড়াই হোমিওপ্যাথিক ঔষধের মাধ্যমে লিভার সিরোসিসের জটিল সব উপসর্গ নির্মূল করে পরিপূর্ণ সুস্থ করা আল্লাহর রহমতে সম্ভব।
হোমিওচিকিৎসা
প্রাথমিক ভাবে যে সব ঔষধ লক্ষণের উপর আসতে পারে, কাডুয়াস মেরি, চিয়ান্যানথাস, কালেষ্টোরিনাম, নাক্স ভূমিকা, লাইকো, ব্রাইওনিয়া, চেলিডোনিয়াম, মার্ক সল, নেট্রাম সালফসহ আরো অনেক মেডিসিন লক্ষণের উপর আসতে পারে, তাই অভিজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া ঔষধ নিজে নিজে ব্যবহার করলে রোগ আরো জটিল আকারে পোঁছতে পারে।
লেখক: ইসলামী হোমিওরিসার্চ সেন্টার
বি.এম এ রেল গেইট ভাটিয়ারী সিতাকুন্ড চট্টগ্রাম
কো-চেয়ারম্যান, হোমিওবিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
মোবা: ০১৮২২৮৬৯৩৮৯
ই-মেইল নং [email protected]