তুহিন খন্দকার
শিক্ষার্থী
চলমান এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে বিতর্ক যেন ক্রমেই বেড়ে চলেছে। রুটিন থেকে নিয়ে শুরু করে প্রশ্নের ধরণ, মান ও সেট বিতরণে ভুলসহ কথা উঠেছে কেন্দ্রে দায়িত্বরত শিক্ষকদের কঠোর আচরণ নিয়েও।
গত ২ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় মাদারিপুরের কালকিনিতে প্রথম দিনই দেখা দিয়েছে অভিন্ন সেট প্রশ্নের গুরুতর জটিলতা.! কালকিনিতে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় মোট ৩ হাজার ৮৪ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।
সারাদেশে একযোগে এবারের এইচএসসি'র বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা গত ২ তারিখ সোমবারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু সারাদেশে বাংলা পরীক্ষা 'খ' সেটে নেয়া হলেও মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে।
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্ত প্রমথ রঞ্জন ঘটকের গাফলতির কারণে 'খ' সেটের প্রশ্নে পরীক্ষা না নিয়ে নেয়া হয়েছে 'ক' সেটের মাধ্যমে। এতে করে চরম বিপাকে পড়তে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের।
এদিকে বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে উপজেলায় বিভিন্ন শ্রেণির পেশার মানুষের মাঝে শুরু হয়েছে চরম সমালোচনার ঝড়। তবে প্রশাসনের দাবি বিষয়টি ভুলক্রমে হয়েছে। ঠিক একই রকম ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরেও।
মাত্র এক মাসের ব্যবধানে শতভাগ প্রশ্নফাঁস রোধ করা গেলেও পন্থাগত জটিলতায় বিপাকে ২০১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
তাছাড়া পরীক্ষার মাঝে কোনো ফাঁকা দিন না রেখে লাগাতার পরীক্ষা গ্রহণের ফলে ভয়াবহ ফলাফল বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা যাচ্ছে এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায়।
গত ১৯ তারিখ বৃহস্পতিবার ছিলো বিজ্ঞান বিভাগের পদার্থ ১ম পত্রের পরীক্ষা। সে পরীক্ষার আগে তিন দিন ফাঁকা থাকলেও ২য় পত্রের মতো তুলনামূলক কঠিন বিষয়ের আগে ছিলো মাত্র একদিন ফাঁকা। এ নিয়ে ক্ষোভ ছিলো শিক্ষার্থী অভিভাবক ও শিক্ষক মহলেও। সেই ক্ষোভের আগুনে তেল ঢেলেছে ২য় পত্রের প্রশ্ন মাত্রাতিরিক্ত কঠিন হওয়া।
অনুসন্ধানে জানা যায় উচ্চমাধ্যমিকে সচরাচর যেসব অধ্যায় থেকে প্রশ্ন আসে সবসময় এবং শিক্ষার্থীরা যেসব বিষয় তুলনামূলক বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়ে থাকে সেসব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো থেকে কোনো প্রশ্নই আসেনি। প্রশ্ন এসেছে এমন এমন অধ্যায় থেকে যা ইতোপূর্বে কখনো আসেনি।
সৃজনশীল প্রশ্ন বুঝা এমনিতেই কঠিন। কেননা এটি বাংলাদেশে প্রণিত হয়েছে কোনরকম পরীক্ষামূলক যাচাই ছাড়াই। এমনকি প্রথমআলোর এক প্রতিবেদনে এসেছে দেশের ৯৫ ভাগ শিক্ষকই জানেন না সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতির গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে।
তাছাড়া মাত্র একদিন ফাঁকা রেখে পদার্থবিজ্ঞান ২য় পত্রের প্রশ্নে বুয়েট পরীক্ষার প্রশ্ন সংযুক্ত করে দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ সারা দেশের শিক্ষার্থীদের।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষাব্যবস্থার এই করুণ নীতি নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা।
এ নিয়ে রাজধানীর দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এইচএসসি পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞান ২য় পত্রের প্রশ্নের একটা সৃজনশীল এসেছে বুয়েট এডমিশন প্রশ্ন থেকে।
এতে করে বরাবরের মতোই শিক্ষা ব্যবস্থার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা পড়েছেন রীতিমতো বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে। কতো শতো স্বপ্নের পরিসমাপ্তি হয়ে গেলো এইচএসসি পরীক্ষাতেই তার কোনো ইয়ত্তা নেই।
তবে কেউ কেউ বলে বেড়াচ্ছেন, বুয়েট এডমিশন টেস্ট কি এইচএসসি সিলেবাসের বাইরে নাকি যে ওখানের প্রশ্ন এইচএসসিতে এসেছে বলে কঠিন হয়ে গেছে..!
কিন্তু বুয়েটের প্রশ্ন এক হয়ে গেলে তবে বিপত্তিটা বাঁধারই কথা। কারণ আলাদা স্বকীয়তা বজায় থাকলো না।
এখন থেকে টেস্ট পেপারগুলোতে তাহলে বিগত সালের বুয়েটের প্রশ্নও সংযুক্ত করা হোক যেন সেগুলো প্রেক্টিস করে যাওয়া যায়।
একজন চিন্তাশীল মানুষ মাত্রই একথা বলতে বাধ্য হবেন, রুটিনই যেখানে গোবর মাথাধারী কেউ একজন প্রণয়ন করেছেন সেখানে একদিন গ্যাপের পর পদার্থ ২য় পত্র প্রশ্নের এমন ইতিহাসখ্যাত করার কোনই মানে নেই। এটা মূলত শিক্ষাব্যবস্থারই মেরুদণ্ডহীনতার পরিচায়ক।
এদিকে নটরডেম কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের এক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, সিলেবাসের অপরিপক্বতা এবং প্রশ্নের প্যাটার্ন বদলের কারণে অন্যান্যবারের চেয়ে তুলনামূলক খারাপ হচ্ছে সকলের পরীক্ষা।
কবি নজরুল সরকারী কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অধ্যাপক জানান, এবারের পরীক্ষার ফলাফল ঠিক কতোটা বিপর্যয় ঘটবে তা বড় মুশকিল তবে রুটিন প্রশ্নের ধরণ ইত্যাদি আনুষঙ্গিক বিবেচনায় পরীক্ষা যে অন্যান্য বারের চেয়ে ছন্দহীনভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তা বলা যায়।
এসব আলোচনা সমালোচনা শিক্ষাব্যবস্থায় গত এক দশক ধরেই চলছে। হঠাৎ করে সৃজনশীল পদ্ধতি প্রণয়ন, পরীক্ষার মাস কয়েক আগে হুট করে এমসিকিউ প্রশ্ন কমিয়ে সৃজনশীল প্রশ্ন সংখ্যায় বাড়িয়ে দেয়াসহ নানাবিধ পরিবর্তন পরিমার্জনই প্রমাণ করে দেশের শিক্ষা নিয়ে সুনিয়ন্ত্রিত কোনো পদক্ষেপ আছে কিনা অনেকেরই এ প্রশ্নের সুযোগ থাকে।
আড়াই মাসের দীর্ঘ ছুটি মাদরাসায়; কী করবে শিক্ষার্থীরা?
-আরআর