আওয়ার ইসলাম: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় পড়া শুরু হয়েছে। আদালতে উপস্থিত হয়েছেন মামলার প্রধান আসামি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে গুলশানের বাসভবন থেকে বের হয়ে দুপুর দুইটার দিকে পুরান ঢাকার বকশিবাজারের কারা অধিদফতরের মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে পৌঁছান।
পথিমধ্যে নেতাকর্মীদের বিক্ষোভের মুখে গাড়িবহরের গতি বিঘ্নিত হয়। প্রায় নেতাকর্মী শূন্য অবস্থায় গুলশান থেকে রওনা দেন খালেদা জিয়া। কিন্তু তার গাড়ি তেজগাঁও লিংক রোডের সাতরাস্তা মোড় পার হয়ে মগবাজার রেলক্রোসিং পৌঁছালে হঠাৎ জড়ো হন হাজার হাজার নেতাকর্মী। তাদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজপথ। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত চারপাশ। গাড়ি যত অগ্রসর হচ্ছে নেতাকর্মীদের ভিড় ততোই বাড়ছে।
গাড়িবহর কাকরাইল মোড়ে পৌঁছালে বিক্ষোভরত নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণে টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান দুপুর দুইটার দিকে ৬৩২ পৃষ্ঠার রায় ঘোষণা শুরু করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন ছাড়াও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়েছে মামলার দুই আসামী সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমদ। মামলার অপর তিন আসামী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, কামাল সিদ্দিকি ও মমিনুর রহমান পলাতক রয়েছেন।
বিগত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই নগরীর রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করে দুদক। মামলায় খালেদা জিয়াসহ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় যে, এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশে বিদেশ থেকে পাঠানো ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা ক্ষমতার অপব্যহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাত্ করা হয়েছে।
তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অরফানেজ মামলা বিচারাধীন থাকাবস্থায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের দুর্নীতি সংক্রান্ত আরেকটি মামলা দায়ের করে দুদক।
এই মামলায় খালেদা জিয়াসহ চারজনকে আসামি করা হয়। একই দিনে ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ ট্রাস্ট সংক্রান্ত এই দুইটি মামলার সকল আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক বাসুদেব রায়। দণ্ডবিধির ৪০৯/ ১০৯ ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ গঠনের পরই শুরু হয় দুইটি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ।
অভিযোগ গঠন থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে খালেদা জিয়া এই আদালতের কয়েকজন বিচারকের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানান। ফলে পাঁচবার বিচারক পরিবর্তন করা হয়েছে। বিচার চলাকালে আদালতে হাজির না হওয়ায় দুইবার তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। অবশ্য আদালতের ওই পরোয়ানা তামিল হয়নি একবারও। এক পর্যায়ে খালেদা জিয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে তা মঞ্জুর করেন বিচারক।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ৩২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ, আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বিশেষ জজ আদালত-৫ গত ২৫ জানুয়ারি রায় ঘোষণার জন্য ৮ ফেব্রুয়ারি (আজ) দিন ধার্য করে। সেই মোতাবেক আজ বৃহস্পতিবার সকালে রায় ঘোষণার উদ্দেশ্যে বিচারকের এজলাসে বসার কথা।
তবে আজই রায় ঘোষণা করবেন কিনা সেটা বিচারকের নিজস্ব এখতিয়ার। ইতোপূর্বে অনেক মামলায় রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেও নির্ধারিত তারিখে তা ঘোষণা না করে ভিন্ন তারিখ নির্ধারণ করার নজির রয়েছে।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির মামলা দায়ের করা হলেও এই প্রথম কোনো মামলায় তার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে। এ নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে চলছে নানা সমীকরণ। অরফানেজ মামলা ছাড়াও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরো চারটি দুর্নীতির মামলা বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
এর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া গ্যাটকো, নাইকো ও বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতির মামলা অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য রয়েছে। অর্থ পাচারের একটি মামলায় আগেই তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে হাইকোর্ট। ওই মামলায় অবশ্য বিচারিক আদালত থেকে তাকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছিলো।
এইচজে