আওয়ার ইসলাম
নরসিংদীর হাজিপুরে প্রেমিকার সাথে মেলামেশার গোপন ভিডিও ধারন ও ব্ল্যাকমেইলের কারণেই নৃসংশভাবে খুন হয় হৃদয় সাহা নামে এক যুবক। কথিত প্রেমিক গলায় ফাঁস দিয়ে ও গোপনাঙ্গ কেটে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে এমন তথ্য দিয়েছেন খুনের সাথে জড়িত সন্দেহে আটক দুই যুবক।
আদালত সূত্রে যানা যায়, গত ২৯ জানুয়ারী নিখোঁজ হয় নরসিংদী হাজিপুরের গোপাল চন্দ্র সাহার ছেলে হৃদয় সাহা (২৫)। দুই দিন পর রায়পুরা মির্জানগর বাহেরচর এলাকার একটি কবরস্থানে তার লাশ পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে নিহতের বাড়িতে খবর দেয়। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই বাদী হয়ে রায়পুরা থানা হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনাটি চাঞ্চলকর উল্লেখ করে মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হন্তান্তর করেন পুলিশ সুপার আমেনা বেগম।
দীর্ঘ তদন্ত ও অনুসন্ধান শেষে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে হাজিপুর এলাকার ফজলুল হকের ছেলে রুবেল মিয়াকে (২৬) আটক করে পুলিশ। পরে তার দেয়া তথ্য মতে একই এলাকার হারাধন দাসের ছেলে কথিত প্রেমিক বাদল দাসকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত দুই যুবক হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। পরে গোয়েন্দা পুলিশ তাদের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াইজ আল কুরুনির আদালতে সোপর্দ করেন। পরে তারা আদালতের বিজ্ঞ বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন।
জবানবন্দীতে গ্রেফতারকৃত বাদল উল্লেখ করেছেন প্রচন্ড জেদ ও ব্ল্যাকমেইলের কারণেই হৃদয়কে খুনের সিদান্ত নেন। গ্রেফতারকৃত বাদল ও নিহত হৃদয় দুইজনই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। এলাকার একজন বিবাহিত মহিলার সাথে বাদলের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। সেই সূত্রে প্রেমিক-প্রেমিকার ঘনিষ্ট মুহূর্তের কিছু ভিডিও মোবাইল ফোনে রেকর্ড করা হয়। কিছু ভিডিও ক্লিপ হৃদয়ের হাতে চলে যায়। এর সূত্র ধরে নিহত হৃদয় ওই মহিলাকে ব্ল্যাকমেইল শুরু করেন। একপর্যায়ে অর্থনৈতিক সুবিধাও নেয়। বিষয়টি বাদলের কানে আসলে সে হৃদয়ের প্রতি ক্ষিপ্ত হয় এবং তাকে খুন করার পরিকল্পনা শুরু করেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী বাদল তার বন্ধু রুবেল ও নিহত হৃদয় এক সাথে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করেন। পরে রায়পুরা আমিরগঞ্জ ব্রিজ এলাকায় গিয়ে ৩ বন্ধু মাদক সেবন করেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে গাঁজা সেবনের উদ্দেশ্যে মির্জানগর বাহেরচর এলাকার নির্জন একটি কবরস্থানে যান। সেখানে গাঁজা সেবন করেন। গাঁজা সেবনকালে রশি দিয়ে তার গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে নিহতের লিঙ্গে আঘাত করা হয়।
গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আব্দুল গাফফার বলেন, প্রচন্ড জেদ ও ব্ল্যাকমেইলের কারণেই এই হত্যা। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডটি একবারেই ক্লু-লেইস ছিল। আইন এর চোখ ফাঁকি দিতে ভিন্ন একটি উপজেলায় নিয়ে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। দীর্ঘ অনুসন্ধান, তদন্ত ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা খুনের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন সম্ভব হয়েছে।
/এটি