আওয়ার ইসলাম: ইসলামিক ফাউন্ডেশন আগারগাঁও অফিসের সভাকক্ষে শনিবার সকালে তুরস্কের খ্যাতিমান আলেম বদিউজ্জামান সাঈদ নুরসি জীবন চরিত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্যে বাংলাদেশের ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, দীনি শিক্ষার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সারা দেশে ১০১০টি দারুল আরকাম মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তুর্কি পার্লামেন্টের সদস্য এবং ইস্তাম্বুল সায়েন্স ও কালচার ফাউন্ডেশনের পরিচালক সাঈদ ইউজে বলেন, অজ্ঞতা, দরিদ্রতা ও অনৈক্য মুসলমানদের প্রধান শত্রু। শারীরিক নয়, কলমের মাধ্যমে জিহাদ করে মুসলমানদের এসব শত্রুদের নিশ্চিহ্ন করতে হবে। বস্তুগত নয়, বুদ্ধিভিত্তিক কাজে আত্মনিয়াগ করা মুসলমানদের প্রধান কাজ।
সাঈদ নুরসি আমাদের আদর্শগত দিক থেকে রাসুল সা. এর জীবন চরিতকে আক্রে ধরার আহ্বান করেছেন। আজ আমরা তার রিসালা সমগ্র বাংলাদেশের জন্য উপহার হিসেবে পেশ করছি। আমরা চাই তার দীনী কাজগুলো দেশ থেকে দেশে ছড়িয়ে পরুক।
তিনি আরো বলেন, সাঈদ নুরসি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ যিনি ‘কুরআন’ নামক চিকিৎসালয় থেকে মানুষের মুক্তির জন্য ‘ওষুধ’-এর ব্যবস্থা করেছেন। যিনি নৃতাত্ত্বিক জাতীয়তাবাদকে প্রত্যাখ্যান করে ইসলামি জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে দেড়শ’ কোটি মুসলমানকে একতাবদ্ধ হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল বলেন, রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের জন্য ইসলামিক স্টেট ও মুসলিম স্টেট নামে যে দর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে তার সাথে কুরআন-সুন্নাহর কোন সম্পর্ক নেই। ওহাবি, মওদুদি, ব্রাদারহুড ও ফতেহগুল দর্শন বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
তিনি আরও বলেন, তেমনিভাবে মওদুদী ইসলাম, জামাতে ইসলাম ইত্যাদি ইসলামের সাথে মূল ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই এটা বিশ্ব মুসলিমকে বুঝতে হবে।
ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান আরো বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে রোল মডেল হিসেবে কাজ করছে। মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষার মাধ্যমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমকে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ইসলামের প্রচার-প্রসার এবং ইসলামি মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন।
বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত বলেও মত প্রকাশ করেন ধর্মমন্ত্রী।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন যুক্তরাজ্যের দুরহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. কলিন টারনার, তুরস্কের সুলেমান ডেমিরেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. ইসহাক ওজগেল, উসকুদার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আলপারসলান আচিকগেনচ, সিঙ্গাপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. সৈয়দ ফরিদ অ্যালাতাস ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক ডা. খিজির হায়াত খান।
সভায় বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক ও আলেম-ওলামা অংশ গ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, অনুষ্ঠান শেষে তুর্কি পার্লামেন্টের সদস্য এবং ইস্তাম্বুল সায়েন্স ও কালচার ফাউন্ডেশনের পরিচালক সাঈদ ইউজে-কে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের পক্ষ থেকে মুজিবকোট উপহার দেয়া হয়। ধর্মন্ত্রী নিজেই সেটি সাঈদ ইউজেকে পরিয়ে দেন।
তুরস্কের অতিথিদের পক্ষ থেকেও ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে সাঈদ নুরসির রচনাসমগ্রসহ বেশ কিছু মূল্যবান সামগ্রী উপহার দেয়া হয়।
এছাড়াও ধর্মন্ত্রীকে উসমানি খেলাফতের নিদর্শন সম্বলিত বিশেষ বস্তু উপহার দেয়া হয়।
ঢাকায় এই ১ম আন্তর্জাতিক নুরসি সম্মেলন