ফাতিমা যাহরাহ
শিক্ষার্থী ও লেখিকা
নানীবাড়ী যাচ্ছি। আম্মু আমি আর ছোট ভাই। সিএনজিতে পনেরো থেকে বিশ মিনিট লাগে।মোড়ের সামনে এসে সিএনজি থামালো। এতটুকু পথ হেঁটে যাবো। বড় রাস্তার অপরদিকে যেতে হবে। রাস্তা পার হওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছি।
সামনে দিয়ে কয়েকজন মেয়ে যাচ্ছে। সম্ভবত কোন বিয়েবাড়ি থেকে ফিরছে। সবাই খুব সাজে। জোরে জোরে হাসাহাসি করছে কোন বিষয় নিয়ে। রাস্তা পার হবো, এমন সময় থেকে গেলাম। ঐ পারে কিছু ভাইয়া দাঁড়িয়ে মেয়েগুলোকে নিয়ে জোরে জোরে বাজে কথা বললো। অবাক হয়ে দেখলাম মেয়েগুলোও কিছু না বলে ওদের সাথে হাসি তামাশা করছে! রাস্তার এ পার থেকে ওপার! দু'পাশের দোকানদাররাও হাসছে! আম্মুকে আটকে বললাম, এদিক দিয়ে যাবো না। অন্য রাস্তা খুঁজি, চলো।
- বাড়ীর সামনে এসে এদিক দিয়ে যাবো না। অন্যদিক দিয়ে যাবো! এটা আবার তোমার কেমন কথা! মেয়েগুলো যেমন ছেলেগুলোও তেমন। তোমাকে কিছু বলবে না ওরা। যদি বলেও, তোর সাহস আছে না ?
মাথা নাড়লাম। সাহস আছে বটে। কিন্তু আমাকে নিয়ে কেউ বাজে কথা বললে ...!
সামনে তাকালাম। ছোট রাস্তাটায় চার পাঁচজন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। পুরোটা ব্লক। একটু আগেই এরা মেয়েগুলোকে ...!
রাস্তা পার হলাম। পথ ছেড়ে দেবে কি ? দোকানের সামনে যাওয়ার আগেই ছেলেগুলো পথ ছেড়ে সরে দাঁড়ালো। একটা ভাইয়া তখনও পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে আছে। ভাইয়াটা পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই আরেকটা ভাইয়া তাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বললো, রাস্তা ছাড়। আপুরা যাবে। চট করে ঘুরে দেখে দেখে সরে গিয়ে বললো, 'আগে বলবি না!'
হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। মনে মনে ধন্যবাদ জানালাম। মোড় পার হলেই বাড়ি। এমন সময় পঞ্চম শ্রেণীতে পড়া ছোট ভাই আব্দুর রহমান বললো, 'আপু, ঐ আপুরা যদি তোমার মত পর্দায় থাকতো। তাহলে তাদেরকে ভাইয়াগুলো কিছু বলতো না। তাই না ? '
হেসে ফেললাম। বললাম, 'হুম। বলতো না। কিন্তু ভাইয়া, আপনাকে এটাও মনে রাখতে হবে যে ভাইয়াগুলোরও উচিৎ ছিলো তাদের বাজে কথা না বলা। নজর নিচু রাখার হুকুম তো উভয়ের প্রতিই আছে। তাই না ? '
আমরা চাইলেই শালীন থাকতে পারি। নিজেকে হেফাজত করার জন্য পর্দার চেয়ে উত্তম কিছু নেই। চাই সে একজন ছেলে হোক অথবা মেয়ে।
ঘটনা : ২
বিকালে আমি আর ছোটবোন, ছোট ফুপুর বাসায় গেলাম তার সাথে দেখা করতে। হেঁটে গেলে দশ থেকে পনেরো মিনিট লাগে। গ্রামের পথগুলো এমনিতেও খুব চমৎকার, হাঁটতে ভালো লাগে। মাগরিবের কিছুক্ষণ আগে ফিরছি গল্প করতে করতে। একপাশে বাড়িঘর আরেকদিকে ক্ষেত। তামাক আর সরিষা লাগানো। রাস্তার প্রায় মাঝখানে তিনটা ছেলে। সাইকেল নিয়ে একজন। বাকিরা দাঁড়িয়ে কথা বলছে। আমরা ছাড়া আরো কিছু লোক রাস্তায় আছে।
সাইকেলওয়ালা হঠাৎ করে চিৎকার করে গান গাইতে লাগলো। পিছনে কোন মেয়ে আছে নাকি! ঘুরে দেখি নেই। পাশ কাটিয়ে যাবো এমন সময় একটা ছেলে বলে উঠলো বোরকাপরা গানটা বল। বাকিরা হেসে উঠলো। থেমে গেলাম। বয়স কত এদের! বড় জোর আঠারো উনিশ! আর এত পাকা!
ছোট বোন বলল, দাঁড়াও আপু, গিয়ে বলি সম্পূর্ণ গানটা গাও। আমরা শুনি। আমাদের থেমে যেতে দেখে ছেলেগুলো চুপ হয়ে গেলো। বোনকে আটকালাম। বললাম বাসায় চল। কিছু নর্দমার কীট থাকে এরকম।যারা বোন মানে না। চাই মেয়েটা ছোট হোক অথবা বড়। কোন একদিন নিজের মা, বোন অথবা মেয়েকে দেখেও গান গেয়ে উঠবে।
মোদ্দাকথা
আমরা ভাবি পর্দা করে আমরা নিরাপদ। কিন্তু এখন নতুন করে ভাবতে হবে সত্যিই কি নিরাপদ ? কতটুকু নিরাপদ ? এমন যদি হতো যে ফ্যাশোনেবল বোরকা আর স্কার্ফ পরেছি তাতেও মেনে নেয়া যেত। কখনো ভাবিও নি যে আমাদের মত মেয়েরাও এধরণের পরিস্থিতিতে পড়ব।
কেউ কেউ বলতে পারে ঘরে থাকো। ঘরেই নিরাপদ তুমি। সেখানেও প্রশ্ন উঠে। সত্যিই কি আমরা ঘরে নিরাপদ? পরপর কয়েকটা ঘটনা কি বলে? চাচার হাতে, এমনকি দুর্ভাগ্যজনকভাবে কেউ বাবার হাতেও ...!
তিন বছরের শিশুও নিরাপদ না। ষাট বছরের বৃদ্ধাও না। মাদরাসা পড়া হাফেজ মেয়েও নিরাপদ না। কোথায় চলেছি আমরা ...?
এখন ব্যবসার হিসাব হবে সফটওয়ারে – বিস্তারিত জানুন
আরও পড়ুন-
একজন আত্মবিশ্বাসী বালকের গল্প
আল্লাহ বলেছেন তাঁর সাথে ব্যবসা করলে প্রফিট হবে পাক্কা ১০ গুণ!
পরিতৃপ্তির ছোট্ট এক গল্প!
আরএম/