মাওলানা এসএম আরিফুল কাদের
তরুণ আলেম ও লেখক
আলেম শব্দটি আমাদের কাছে সুপরিচিত। তারাই হলেন ঈর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। যাদের আল্লাহ তায়ালা দীনের গভীর ইলম দান করেছেন। যাদের সবাই সম্মান করে। আর এই আলেম বলতে বুঝায় যিনি দীন বা ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত।
অর্থাৎ কুরআন, হাদিস ও ফিকাহের পাণ্ডিত্ব অর্জন করেছেন। যদিও আরবরা আলেম শব্দ দ্বারা যে কোন সাধারণ বিষয়ে জ্ঞানী ব্যক্তিকে বুঝায়। প্রকৃত আলেমগণ আল্লাহর দ্বীনকে সু-প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে দিন-রাত পরিশ্রম করে প্রকৃত দ্বীনি ইলম শিক্ষা করেছেন। এই ইলম শিক্ষা করতে না খেয়ে, না ঘুমিয়ে, একদেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি জমিয়েছেন।
ইতিহাস থেকে পাওয়া যায়- আলেমগণ দীনি ইলম শিক্ষা করতে অনেক দূর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। ইমাম আজম আবু হানিফা, ইমাম শাফেয়ি, ইমাম মালেক ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ.সহ তাদের পূর্বে ও পরে কুরআন ও হাদিসের প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করতে কি যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত ইলমে দীন পৌঁছিয়েছেন তা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যা আমরা তাদের অলংকৃত জীবনীতে পেয়ে থাকি।
এমন মহান ব্যক্তিত্বদের মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেকে উঁচুতে। সাধারণ মানুষের মাঝে তারা হলেন তারকারাজি তুল্য। যাদের অনুসরণের মাধ্যমে মানুষ পেয়ে থাকে সঠিক পথের সন্ধান।
ওইসব আলেমের মর্যাদার ব্যাপারে আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করেছেন। তারমধ্যে কয়েকটি আয়াত নিচে দেখুন।
সুরা ফাতিরের ২৮নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা আলেম; তারাই তাকে (আল্লাহকে) ভয় পায় ‘
সুরা বাকারার ২৬৯ নম্বর আয়াতে এসেছে- ‘যাকে গভীর জ্ঞান দান করা হয়েছে; তাকে প্রভুত কল্যান দান করা হয়েছে।’
সুরা মুজাদালার ১১ নম্বর আয়াতে রয়েছে- ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের জ্ঞান দান করা হয়েছে; অর্থাৎ আলেমগণ। আল্লাহ তাদের মর্যাদা উচ্চ করে দিবেন।’
শুধুমাত্র কুরআন মাদিদ কেন? আলেমগণের মর্যাদার ব্যাপারে হাদিস শরিফে অসংখ্য স্থানেও আলোচনা রয়েছে। যেমন- রাসুল সা. ইরশাদ করেছেন, ‘আবেদের অপেক্ষা আলেমের মর্যাদা তেমন, যেমন তোমাদের সর্বাপেক্ষা ছোট ব্যক্তির তুলনায় আমার মর্যাদা। আল্লাহর রহমত বর্ষণ করেন মানুষের কল্যাণ শিক্ষাদাতার উপর। তাদের জন্য ফেরেশতারা, আসমান জমিন, গর্তের পিপীলিকা, এমনকি পানির মাছও দোয়া করে। [তিরমিজি : ২৬৮৫]
বায়হাকি শরিফের বর্ণনায় পাওয়া যায়- ‘জমিনে আলেমের অবস্থান আসমানের তারকার মত। যখন মানুষ তা দেখে পথ চলে। যখন তা অদৃশ্য হয়ে যায়, অস্থির হয়ে পড়ে। [বায়হাকি :১/৩৫৪]
বিশ্বনবী সা. আলেমগণের মর্যাদায় আরো ইরশাদ করেন। ‘নিশ্চয়ই আলেমগণ হলেন নবীদের উত্তরাধিকারী’। [তিরমিজি ও আবু দাউদ]
অপর হাদীসে এসছে- ‘দীন সম্পর্কে শিক্ষিত একজন আলেম শযতানের মোকাবেলায়
একজন অজ্ঞব্যক্তির চেয়ে হাজারগুন শক্তিশালী’। [তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ]
কুরআন ও হাদিসের তথ্য অনুযায়ী আলেম সমাজের এত উচ্চ মর্যাদা থাকা সত্ত্বেও তাদের সমাজে এত নিম্নস্থানে নেয়া হয়; যা দুঃখজনিত হলেও সত্য। যাদেরকে রাসুলে আকরাম সা. ও নবীগণের উত্তরসুরি বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তারা আজ সমাজের নিম্ন শ্রেণির লোকদের শাসনের জালে আটকে আছে। যার প্রমাণ মিলে বর্তমান সমাজের মসজিদের ইমামগণের দুঃখ।
হাক্কানী আলেমগণের উপরে সমাজপতিদের অলংকৃত নামের তালিকা। যা কি মহানবী সা. এর উত্তরসুরি হওয়ায় বেয়াদবির শামিল নয়? তাই কুরআন ও হাদিসের ইলম শিক্ষার ব্যক্তিবর্গের সম্মান হতে চাই একজন আমির তথা মেম্বার, চেয়ারম্যান, এমপি ও মন্ত্রিমহোদয়ের চেয়েও বেশি। যা কুরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
যদিও আলেম সমাজকে তেমন ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার উচ্চাসনে সমাসীন করা না হয়; তবুও তাদের অবদান সমাজ জীবনে অস্বীকার করার নয়। ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবন পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে আলেমগণের ভূমিকা রয়েছে।
উদাহরণ স্বরুপ বলতে হয়- দাম্পত্য জীবনের প্রারম্ভেই আলেমের প্রয়োজন। মসজিদ ও ঈদগাহে নামাজের জন্য আলেমের প্রয়োজন। কোন ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠান উদ্ভোধনে দোয়ায় আলেমের প্রয়োজন। সর্বোপরি স্বাভাবিক মৃত্যুতে জানাজা না পড়ালে তো দাফন কাজ সম্পন্ন করাই হবে না। সওয়াব রেছানি করাতেও আলেমের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
এত কিছু অবদান থাকা সত্ত্বেও কেন আজ আলেম সমাজ অবহেলিত, অসম্মানিত ও দুঃখভরা মন নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়? হাক্কাকি ওলামাগণের শরিয়াহ মোতাবেক সম্মান, ভক্তি ও শ্রদ্ধায় আল্লাহ ও তার হাবিব সা. এর সন্তুষ্টি হতে পারে। যাতে ব্যক্তি হবে দুনিয়া ও আখেরাতেসম্মানিত ও প্রশংসিত।
সবশেষে বলা যায়, ওলামায়ে হাক্কানীগণকে নিজ মনে যেমন উঁচু স্থানে রাখা প্রয়োজন। ঠিক সেইভাবে সমাজে প্রকাশ্য সম্মান প্রদর্শন ও জরুরি। প্রকাশ্য সম্মানে আলেমদের স্থান যেমন উঁচুতে। তেমনি তাদের নামও থাকা চাই পোস্টার, লিফলেট ও ব্যানারের উঁচুতে।
তবে এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় ইদানিং অনেক আলেমকে দেখা যায় তার মর্যাদা ও শান নিজেই রক্ষা করে চলেন না। এর মূলত নিজের ক্ষতি ডেকে আনেন এবং সমাজে আলেমদের মর্যাদাকে হ্রাস করেন। এ জন্য আলেমদের উচিত নিজেকে সে জায়গায় রাখা সে জায়গাটি সর্বোচ্চ নিরাপদ ও ভেজালহীন।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পানাহার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা (প্রাঃ), করিমগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ।