শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী শীত ও শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে আসবে, সতর্ক থাকতে হবে: গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা ‘কোনো রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেয়ার ইচ্ছা জামায়াতের নেই’ শরীরে রক্ত বাড়াতে যেভাবে পালং শাক খাবেন

চক্ষু হেফাযত করুন, জান্নাত অনিবার্য রয়েছে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাও. এসএম আরিফুল কাদের

মানুষের এই সুন্দর শরীরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো-চক্ষু। যা দ্বারা সে এই পৃথিবীর সুন্দর অবয়ব ও নাজ-নিয়ামত সহ সকল প্রকার ভালো ও খারাপ দেখতে পায়। ভালো দেখলে যেমন সওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়, তেমনি খারাপ দেখলে দুনিয়া ও পরকালের অশান্তি অনিবার্য।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-হে রাসুল সা. আপনি বলুন! মু’মিন পুরুষগণ যেন তাদের দৃষ্টিকে (নিম্নগামী) সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে, এটাই হচ্ছে তাদের জন্য উত্তম পন্থা। (সূরা নূর:৩০)

অনুরুপভাবে অপর আয়াতে বলা হয়েছে, হে রাসুল সা. আপনি বলুন! মু‘মিন মহিলাদের জন্য উচিত তাহাদের দৃষ্টিকে (নিম্নগামী) সংযত রাখা এবং তাদের লজ্জাস্থানকে হেফাজত করা, তারা যেন তাদের সৌন্দর্য্য প্রদর্শণ করে না বেড়ায়, তবে তার শরীরের যে অংশ (এমনিই) খোলা থাকে (তার কথা আলাদা), তারা যেন তাদের বক্ষদেশ মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত্ব করে রাখে”। (সূরা নূর:৩১)

কুরআনে কারীমের এই দুটি আয়াতের বিশেষ হেকমত বা উপকার দেখতে পাওয়া যায়। আমাদের বর্তমান সমাজে যে সকল গোনাহ বা খারাপ কাজ করা হয়ে থাকে, তার মধ্যে ৯৫% গোনাহ বা খারাপ কাজ হয়ে থাকে চক্ষুর জন্য। তাই মহাকবি শেখ সা’দী রহ. বলেন-তোমার চক্ষু অস্পৃশ্য দৃষ্টি হতে ও জবানকে অহেতুক কথা থেকে বিরত রাখ; তারপরেও যদি তুমি মা’রেফাতের আলো দেখতে না পাও, তাহলে বলবে নাদান কি বলছে।

এই কথার প্রেক্ষিতে ও মহানবীর সা. এর একটি হাদীস পাওয়া যায়। রাসুল সা. বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার রসনা ও যৌনাঙ্গকে খারাপ কাজ হতে হেফাজত রাখলো, আমি রাসুল স্বয়ং তার জান্নাতের জিম্মাদার হবো। (আল হাদীস)

মানুষের খারাপ আত্মা তথা নফস চায় সর্বদাই খারাপ কাজে লিপ্ত থাকতে, যাতে করে বান্দাকে জাহান্নামের দিকে নেওয়া যায়। তাইতো আল্লাহর বানী-হে রাসুল সা. আপনি কি ঐ ব্যক্তিকে দেখেছেন; যে তার নফসকে খোদা বানিয়ে ফেলেছে অর্থাৎ নফস যে কাজ করতে চায়, বান্দা সেই কাজই করে। (হাদীসে কুদসী)

বিজ্ঞানের ভাষায় বলা যায়-মানুষ জাতিকে আল্লাহ পাক বিভিন্ন হরমোন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, পুরুষকে ‘টেস্টোস্টেরণ’ এবং নারী জাতিকে ‘এস্ট্রোজেন’ এবং ‘প্রজেস্টরণ’ দ্বারা সৃষ্টি করেছেন।

আগুনের স্পর্শ দেখলে মোমবাতী যেমন গলে যায়; তেমনি পুরুষের স্পর্শ পেলে নারী এবং নারীর স্পর্শ পেলে পুরুষও গয়ে যায়। পুরুষকে নারী দেখলে এবং নারীকে পুরুষ দেখলে আকর্ষিত হওয়াই স্বাভাবিক। এটা এ জাতির কোন দোষ নয়।

তবে এই আমানত খেয়ানত করা অর্থাৎ খারাপ কাজে এই হরমোন ব্যবহার করা মানুষ জাতির জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সে যে কোন ধর্মের হোক না কেনো। এই আমানত খেয়ানত করলে কি হতে পারে? উত্তর- বর্তমান বিশ্বের যে কোন প্রান্তরে দেখা যায় এই লাগামহীন চক্ষুর কারণে খারাপ আত্মাকে খুশি করতে গিয়ে অবৈধ কাজে লিপ্ত হয় যা এইডস, পিবোলা সহ বড় বড় ব্যাধির কারণ হিসেবে চিহ্নিত।

আমাদের সমাজে আরো দেখা যায় যে, মরণব্যাধি মোকাবিলায় বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করা হয়ে থাকে। কিন্তু ততক্ষন পর্যন্ত এই খারাপ ব্যাধি দূর করা যাবে না, যতক্ষন পর্যন্ত নিজ নিজ ধর্মের অনুশাসন মেনে চলা না হয়। আমাদের ইসলাম ধর্মে আছে যে, কুদৃষ্টি মানুষ জাতিকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। বলা হয়- কুদৃষ্টির কারণে মানব জাতির অন্তরে গোনাহের দাগ বসে, যার কারণে তার কোন ইবাদতই ভাল লাগবে না।

কুদৃষ্টি হতে বিরত থাকার একমাত্র পথ হচ্ছে চক্ষুকে নিয়ন্ত্রন করা। চক্ষুকে নিয়ন্ত্রণ করার একমাত্র পথ হচ্ছে সামনে খারাপ দৃশ্য আসলে পবিত্র কুরআনের ভাষায় চক্ষুর দৃষ্টি নিচে রাখা। আমার কথার সারাংশ হচ্ছে- গোনাহ প্রথম হয় চোখ দ্বারা। তারপর এটা যায় অন্তরে। তারপরে এটা বাস্তবায়ন করে খারাপ আত্মা এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ।

তরুন সমাজকে সংশোধন করার জন্য উর্ধ্ব মহলের প্রতি আমাদের উদাত্ত আহবান হলো- যে ওয়েব সাইট গুলিতে নোংরা কুৎসিৎ, অবৈধ যৌন সম্ভোগের তথ্য পাওয়া যায়, সেই সাইট গুলি বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি চক্ষুর হেফাযত অর্থাৎ পর্দার বিধানের সূচনা করা হোক। আমার বিশ্বাস তাহলে সমাজ থেকে ইভটেজিং সহ সকল প্রকার অনৈতিক নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।।

এই গুলি আপত্তিকর পর্নো ছবি দেখলে শুধু আধ্মাতিক ক্ষতি হয় বটে, শারীরিক ক্ষতিও অনিবার্য। এ ব্যাপারে প্রখ্যাত দার্শনিক ইমাম গাজ্জালী (রহ) তাঁর এয়াহইয়ায়ে উলুমে লিখেছেন- মেয়ে লোকের যৌনাঙ্গের দিখে তাকালে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যায়।

অথচ আজ পর্নো ছবি দেয়ালে দেয়ালে, ঘরে ঘরে, দোকানে দোকানে রাস্তায় রাস্তায়, মোড়ে মোড়ে উম্মোচিত করা হয়ে থাকে, যেখানে মহিলাদের আপত্তিকর স্থানগুলো উম্মোচিত করা হয়। তাতে কি দৃষ্টিশক্তি খর্ব হতে পারে না? তাই বলবো চক্ষু হেফাযত করুন, জান্নাত অনিবার্য রয়েছে। আল্লাহ আমাদের বুঝার তাওফিক দিন, আমিন।

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পানাহার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা প্রা. করিমগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ

যৌতুক ও স্বেচ্ছা উপহার ইসলাম কী বলে?

এসএস/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ