হাওলাদার জহিরুল ইসলাম: তাবলিগ জামাত ও চরমোনাই সিলসিলার মধ্যে অদৃশ্য এক দূরত্ব দীর্ঘ দিন ধরেই চলে আসছে। যদিও প্রকাশ্যে কেউ দাবি করেন না কিন্তু দাওয়াতি এ মারকাজ দুটির মুরব্বি থেকে শুরু করে কর্মী পর্যায়ের সবার কাছেই বিষয়টি স্পষ্ট। তবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা একটু ভিন্নতা তৈরি করলো।
জানা যায়, বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দিনে আজ শুক্রবার বাদ জুমা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম ইজতেমায় যান। এ সময় তাবলিগের শীর্ষ মুরব্বি ও আলেমদের সঙ্গে তার মতবিনিময় হয়।
সৈয়দ ফয়জুল করীমের সঙ্গে থাকা মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক মোবাইলে আওয়ার ইসলামকে জানান, বাদ জুমা রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে তিনি বিশ্ব ইজতেমার উদ্দেশ্যে রওনা হন। বিকেল সাড়ে তিনটায় ইজতেমার ময়দানে পৌঁছেন।
তিনি বলেন, প্রথমে মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম বর্ষীয়ান আলেম মাওলানা মুজ্জাম্মিল হকের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর একে একে দেশি বিদেশি আলেম ও তাবলিগের মুরুব্বীদের সঙ্গে সাক্ষাত হয়।
সাক্ষাত করেন তাবলীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য আল্লামা আশরাফ আলী’র সঙ্গে। এ সময় হুজুরকে তিনি আগামী ফাল্গুনের মাহফিলের দাওয়াতও দেন বলে জানা যায়।
জানা যায়, আল্লামা আশরাফ আলী তার ব্যক্তিগত ডায়রিতে চরমোনাই মাহফিলের তারিখও লিখে রাখেন। এরপর সাক্ষাত হয় তাবলিগের শুরা সদস্য মাওলানা যুবায়ের আহমদের সঙ্গে।
এছাড়াও তিনি ফরিদাবাদ মাদরসার মুহতামিম ও শায়খু হাদিস এবং বেফাকের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুসের সঙ্গে সক্ষাত ও মতবিনিময় করেন। আরব, মরক্কো, ভারতের উলামা, জিম্মাদারসহ দেশি বিদেশি ওলামায়ে কেরামদের সঙ্গেও তার সক্ষাত হয় বলে জানা যায়।
দীর্ঘ দিন ধরে তাবলিগের সাথী এবং চরমোনাই পীরের সমর্থকদের মাঝে গ্রাম পর্যায়েও বিতর্ক সীমিত আকারে ছাড়িয়ে আছে বলে মনে করা হয়। মসজিদে মসজিদে তাবলিগের গাশত আর চরমোনাই সাপ্তাহিক হালকায়ে জিকির নিয়েও কোথও কোথাও কিছুটা কথা কাটাকাটি দেখা গেছে ইতোপূর্বে।
তবে দুই দলেরই নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা মনে করেন এসব ছোট খাট বিরোধ যা কর্মীদের থেকে হয়ে থাকে। মূলত দুটি দলের পন্থা বিভক্ত হলেও উদ্দেশ্য অভিন্ন। সে দিক থেকে বিরোধ নেই বলেই মনে করেন তারা।
এর আগে গত বছর চরমোনাইর ফাল্গুনের মাহফিলে মুফতি ফয়জুল করীমের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। বক্তব্যে তিনি তাবলিগের প্রচলিত কিছু নেজামের সমালোচনাও করেন। যা নিয়ে দুটি দলের মধ্যেই চরম ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছিল।
তবে চরমোনাই পীরের নেতৃত্ত্বাধীন ইসলামী আন্দেলন বাংলাদেশের কয়েকজন শীর্ষ নেতা গত বছর আওয়ার ইসলামকে দেয়া সাক্ষাতকারে দাবি করেছেন, তাবলিগের সাথে চরমোনাইর কোন বিরোধ নেই।
মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক আওয়ার ইসলামকে জানান, আল্লামা আশরাফ আলী’র সঙ্গে সাক্ষাতের সময় মুফতি ফয়জুল করীমকে তিনি বলেন, শীর্ষ আলেমদের তত্ত্বাবধানে এবারের ইজতেমা খুবই উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। যে এখতেলাফ তৈরি হয়েছিলো আশা করি খুব শিগগির তা দূর হবে এবং এ মুবারক মেহনত বিশ্বব্যাপী আরো বেগবান হবে ইনশাল্লাহ।
‘মিডিয়া ও নাস্তিকরা আমার কথার মর্মার্থ বুঝতে পারেনি’