জাকারিয়া হারুন: ভারতের তাবলিগ জামাতের মূলকেন্দ্র নিজামুদ্দীনের মজলিসে শূরা সদস্য মওলানা সাদ কান্ধলভি। তাঁর সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্যগুলো নিয়ে ঘোর আপত্তি জানায় দারুল উলুম দেওবন্দ।
মাওলানা সাদ তার বক্তব্যে নিজামুদ্দিন মারকাযকে মক্কা-মদিনার পর ইসলামের সবচেয়ে বড় কর্তৃপক্ষ দাবি করে দেয়া মন্তব্যে বেজায় নাখোশ হয় দেওবন্দ।
ভারতীয় দৈনিকগুলোতেও মাওলানা সাদের বক্তব্যগুলো নিয়ে নানা শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম বা প্রধান মাওলানা আবুল কাসেম নোমানি, নদওয়াতুল উলামার প্রিন্সিপাল মাওলানা সাইয়্যিদ সালমান আহমদ নদভি ও দিল্লির আইম্মা পরিষদের চেয়ারম্যান, মুফতি ওয়াজাহাত কাসেমি এক যৌথ বিবৃত দেন।
এই বিবৃতি ভারতের জাতীয় দৈনিকগুলো ‘তাবলিগ জামাতের আমির মৌলবি সাদের কুফুরি কালিমা’ নিয়ে মুসলমানদের মাঝে তোলপাড় শিরোনামে হাইলাইট করে প্রকাশ করা হয়।
জামিয়া বারিধারার মুহাদ্দিস মাওলানা উবাইদুল্লাহ ফারুক জানান, মাওলানা সাদ বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যা করার সময় বলেন, আমি এই আয়াতের তাফরির এভাবে করি, এটা শুনো, এটা সঠিক তাফরির। মনোযোগ দিয়ে শুনো। মনোযোগ দিয়ে শুনো। যেটা সম্পূর্ণরূপে ভুল।
এর বাইরে মাওলানা সাদ ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল ফোন রাখাও হরাম বলেছেন। তিনি বলেন, কারো পকেটে ক্যামেরা বিশিষ্ট মোবাইল রেখে নামাজ পড়লে নামায শুদ্ধ হবে না। যে উলামায়ে কেরাম ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল রাখেন, তাঁরা উলামায়ে ছূ (নিকৃষ্ট)। বারবার কসম করে বলেন, তাঁরা হলেন উলামায়ে ছূ।
তিনি বলেন, মোবাইলে কুরআন শরীফ পড়া এবং শোনা, প্রশ্রাবের পাত্র থেকে দুধ পান করার মতো। উনার শব্দ হল, পেসাবদানী ছে পানি পিনা হাঁয়’। কুরআন শরীফ শিখিয়ে যাঁরা বেতন গ্রহণ করেন, তাঁদের বেতন বেশ্যার উপার্জনের চেয়ে খারাপ। যেই ইমাম এবং শিক্ষকরা বেতন গ্রহণ করেন, তাদের আগে বেশ্যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন।
রাসূল সা. এর পর কেবল তিনজনের বাই’আত পূর্ণতা পেয়েছেন, বাকি সবার বাই’আত অপূর্ণ। তিন জন হলেন; শাহ ইসমাঈল শহীদ রহ., মাওলানা ইলিয়াছ রহ. ও মাওলানা ইউসুফ রহ.।
তিনি আজমগড়ের ইজতিমায় একাধিকবার সুন্নাতকে তিন প্রকার বর্ণনা করেছেন- ইবাদাতের সুন্নাত, দাওয়াতের সুন্নাত এবং আচার-আচরণের সুন্নাত। এটা তার নতুন পদ্ধতির প্রচলন।
নবিদের বিষয়ে মাওলানা সাদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, হযরত ইউসূফ আ. ‘উযকুরনি ইনদা রাব্বিক’ বলে গাইরুল্লাহ’র দিকে নযর দেয়ার কারণে অতিরিক্ত সাত বছর জেলখানায় থাকতে হয়েছে।
হযরত মুসা আ. দাওয়াত ছেড়ে দিয়ে কিতাব আনতে চলে গেছেন। দাওয়াত ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণে পাঁচলক্ষ সাতাত্তর হাজার লোক মুরতাদ হয়ে গেল। হযরত মূসা আ. থেকে এক বড় ভুল হয়ে গেছে এবং তিনি অপরাধ করে বসছেন। এই জন্য তিনি ক্বওমকে ছেড়ে আল্লাহর সান্বিধ্য লাভের জন্য নির্জনতা গ্রহণ করলেন।
দেশে এই প্রথম আধুনিক চিকিৎসার সমন্বয়ে নববি চিকিৎসা হিজামা
আমাদের কাজের (তাবলিগী) সাথে লেগে থাকা এবং মাওলানা ইলিয়াছ ও মাওলানা ইউসূফ সাহেবের কিতাব পড়বে, অন্য কোন কিতাব পড়বে না। হযরত মূসা আ. কর্তৃক একটি বড় ভুল হয়েছে যে, তিনি উম্মতকে ছেড়ে নির্জনতা অবলম্বন করেছেন। হযরত মূসা আ. কর্তৃক হারুন আ. কে নিজের স্থলাভিষিক্ত বানানো উচিত হয়নি।
দারুল উলুম দেওবন্দ এক বিবৃতিতে বিশ্ব তাবলিগের মুরুব্বী মওলানা সাদ কান্ধলভিকে লিখিত আকারে তার বক্তব্য থেকে সরে আসার আহ্বান জানানো হয় এবং এও উল্লেখ করা হয়, যদি এতে তিনি নিজের অবস্থান থেকে ফিরে না আসেন তাহলে আকাবিরে উলামা যে কোনো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে।
কিন্তু তিনি দারুল উলুম দেওবন্দের শর্ত মেনে এখন পর্যন্ত রুজু করেননি। যে কারণে দারুল উলুম দেওবন্দ ও অন্যান্য উলামায়ে কেরাম ও তাবলিগের একাংশের সাথী তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
মশওয়ারা, অন্যের পরামর্শ শোনা নিয়ে যা বলতেন মাওলানা সাদ
মাওলানা সাদ ইস্যুতে একাত্তর জার্নালে বিশেষ টকশো (ভিডিও)