শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫ ।। ২৮ চৈত্র ১৪৩১ ।। ১৩ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
হারামাইনে আজ জুমার নামাজে ইমামতি করবেন যাঁরা ‘মার্চ ফর গাজা’য় অংশগ্রহণকারীদের জন্য জরুরি ৫ নির্দেশনা তালিবুল ইলমের আবশ্যকীয় পাঁচটি কাজ পাকিস্তানের সব সমস্যার পেছনে ইহুদি ষড়যন্ত্র থাকে: মাওলানা ফজলুর রহমান বাড়িতে বাবার লাশ রেখে এসএসসি পরীক্ষা দিল নাহিদ মানবতার জন্য আপনিও আসুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে: শায়খ আহমাদুল্লাহ ইসরায়েলকে প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ দরকার: বিএনপি মাদরাসাছাত্রদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে কাজ করছে এনসিপি : নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী মুসলিম রাষ্ট্রের ওপর এখন সশস্ত্র ল’ড়াই ফরজ: মুফতি তাকি উসমানি ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান শায়খে চরমোনাই’র

কাজের মানুষকে দিনে সত্তর বার ক্ষমা করো!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: একবার এক সাহাবী এসে নবীজীকে জিজ্ঞেস করলেন,আল্লাহর রাসূল! আমি খাদেমকে (কাজের লোক বা গোলামকে) কতবার ক্ষমা করব? নবীজী চুপ থাকলেন। সাহাবী আবার জিজ্ঞাসা করলেন। এবার নবীজী বললেন, প্রতিদিন সত্তরবার। জামে তিরমিযী,হাদীস ১৯৪৯

আমাদের প্রায় প্রত্যেকের বাসায় কাজের মানুষ আছে। যারা আমাদের জীবনের সাথে ওঁতপ্রোতভাবে জড়িত। আমরা যাদের সেবা গ্রহণ করে চলেছি প্রতিনিয়ত। যারা আমাদের সংসারে সাহায্য করছে, আমাদের সন্তানদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে।

যারা নিজেদের আরাম হারাম করে আমাদের আরামের খেয়াল রাখছে। রাত নেই দিন নেই যারা আমাদের ফরমায়েশ খেটে চলেছে। সেই সকালে ঘুম থেকে উঠে শুরু,আবার রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত চলবে হুকুম তামিল করা। নিরলস সেবা দিয়ে যেতে হবে।

ওদের যেন কোনো ক্লান্তি নেই,বিশ্রামের কোনো প্রয়োজন নেই। হুকুম করা মাত্রই তামিল করতে বাধ্য। একগ্লাস পানি আনা থেকে শুরু করে যে কাজটা নিজে স্বচ্ছন্দে করতে পারি সেটাও ওকে দিয়েই করাতে হবে। আর যেটা ওর কাজ সেক্ষেত্রে তো কথাই নেই। এতকিছুর পরও যদি পান থেকে চুন খসে তাহলে আর রক্ষে নেই।

একটু ভেবে দেখেছি,ওর স্থানে যদি আমি হতাম। আমার কী অবস্থা হত। সুতরাং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি। সবচেয়ে বড় শুকরিয়া হল,ওদের সাথে ভালো আচরণ করা। ওদেরকে কম খাটানো; প্রয়োজন ছাড়া খামোখা না খাটানো। ওদের সুবিধা-অসুবিধা অনুধাবন করে ওদের প্রতি সদয় হওয়া। ভুল হলে ক্ষমার আচরণ করা।

ভুল তো মানুষেরই হয়। একজন কাজের লোকেরও ভুল হয়। সেক্ষেত্রে তাদের সাথে কেমন আচরণ হবে উপরের হাদীস থেকে তা আমরা জানতে পারলাম। সত্তরবার পর্যন্ত ক্ষমা করতে হবে। এখানো সত্তর মানে সত্তর সংখ্যা উদ্দেশ্য নয় বরং উদ্দেশ্য হল,যতবার ক্ষমা করার প্রয়োজন দেখা দিবে ততবার ক্ষমা করবে।

কার ভুল হয় না? ভুল হবেই। সুতরাং তাদের ভুল হয়ে গেলে রাগ দমন করা চাই। রাগ দমন করা তো মুমিনের গুণ। আল্লাহ তাআলা মুমিন-মুত্তাকীর গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন,(তরজমা) ‘...যারা ক্রোধ দমন করে,ক্ষমা করে দেয়।’

সুতরাং শুধু ক্রোধ দমন করাই নয় বরং ক্ষমা করে দিতে হবে। আর গায়ে হাত তোলার তো প্রশ্নই ওঠে না। অসহায়ের গায়ে হাত তোলা কত বড় অন্যায় তা আপনার বিবেককে প্রশ্ন করুন।

তাদের সাথে সুন্দর আচরণ করা উচিত। এমন কোনো কথা বলা উচিত নয়,যার দ্বারা সে মনে কষ্ট পায়। এমন কোনো আচরণ করা উচিত নয়,যার কারণে সে হীনম্মন্যতায় ভোগে। যেমন তাদেরকে সোফায় বসতে না দেওয়া। সোফায় বসতে দিন,কীভাবে বসতে হয় তাও শিখিয়ে দিন।

অনেক মানুষকে দেখা যায় রিক্সায় উঠেছে তো কাজের মানুষকে রিক্সার মধ্যে পায়ের কাছে বসিয়েছে। আপনি পারতেন আপনার সন্তানকে এভাবে বসাতে। বা কেউ আপনার সন্তানকে এভাবে বসালে আপনার কেমন লাগত। যদি বলেনÑওরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে না,তাই রুচি হয় না।

ওদের পরিচ্ছন্ন থাকা না থাকা তো আপনার উপর নির্ভর করে। কারণ,আপনি ওদের দায়িত্বশীল। আপনি চাইলেই ওদেরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে পারেন। কিছু এমন পরিবারও মাশাআল্লাহ আছে, যারা কাজের মানুষকে এমনভাবে রাখেন যে, বোঝার উপায় নেইÑ এ কাজের মানুষ,না এ বাড়ির সন্তান। আপনি অতটা না পারেন অন্তত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি রাখুন।

কাজের মানুষের কথা তো দূরে থাক। টাকায় কেনা গোলাম-বাদির ব্যাপারে রাসূল কী বলেছেন শুনুনÑ

...جَعَلَهُمُ اللَّهُ تَحْتَ أَيْدِيكُمْ، فَمَنْ كَانَ أَخُوهُ تَحْتَ يَدِهِ، فَلْيُطْعِمْهُ مِمَّا يَأْكُلُ، وَلْيُلْبِسْهُ مِمَّا يَلْبَسُ، وَلاَ تُكَلِّفُوهُمْ مَا يَغْلِبُهُمْ، فَإِنْ كَلَّفْتُمُوهُمْ مَا يَغْلِبُهُمْ فَأَعِينُوهُمْ.

...আল্লাাহ তাদেরকে তোমাদের অধীন করেছেন। তোমাদের কারো অধীনে যদি কেউ থাকে তাহলে সে যেন নিজে যা খায় তাকেও তা থেকে খাওয়ায়। নিজে যা পরিধান করে তাকেও তা থেকে পরিধান করায়। এবং তোমরা তাদের উপর সাধ্যের বেশি কাজ চাপিয়ে দিও না। যদি দাও তাহলে নিজেও সে কাজে তাকে সাহযোগিতা কর। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ২৫৪৫

তারা আপনার জন্য ভালো কোনো খাবার প্রস্তুত করে আনলে এমন যেন না হয় যে, সে কষ্ট করে খাবার প্রস্তুত করল আর ঘ্রাণ নেওয়া ও দেখা ছাড়া তার ভাগ্যে কিছুই জুটল না। নবীজী বলেছেন,

إِذَا أَتَى أَحَدَكُمْ خَادِمُهُ بِطَعَامِهِ، فَإِنْ لَمْ يُجْلِسْهُ مَعَهُ، فَليُنَاوِلْهُ لُقْمَةً أَوْ لُقْمَتَيْنِ أَوْ أُكْلَةً أَوْ أُكْلَتَيْنِ، فَإِنَّهُ وَلِيَ عِلاَجَهُ.

যখন খাদেম খাবার প্রস্তুত করে তোমার সামনে পেশ করে,তখন (পারলে তাকে তোমার সাথে বসিয়ে খাওয়াও) তাকে যদি তোমার সাথে বসিয়ে খাওয়াতে না পার অন্তত তার হাতে এক দুই লোকমা তুলে দাও। কারণ এ খাবার প্রস্তুত করতে গিয়ে (আগুনের তাপ ও) সকল কষ্ট তো সেই সহ্য করেছে। Ñসহীহ বুখারী,হাদীস ২৫৫৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬৬৩

আর বাড়ির শিশুরাও ওদের সাথে অনেক সময় অন্যায় আচরণ করে। তাদেরকেও শেখানো দরকার কাজের মানুষের সাথে কেমন আচরণ করতে হয়। অনেক সময় আমাদের অসতর্কতায় আমাদের কাছ থেকেই বাড়ির শিশুরা কাজের মানুষের সাথে অন্যায় আচরণ করা শেখে।

আমরা যদি বিষয়টি শুধরে না দিই তাহলে আমাদের সন্তানেরা এখান থেকে যুলুম করা শিখবে,যার দায়ভার আমাদের ওপরই বর্তাবে।

যা হোক মোদ্দাকথা হল,কাজের মানুষের সাথে ভালো আচরণ করতে হবে। ভুল হলে ক্ষমা করতে হবে।

মুহাম্মাদ ফজলুল বারী/আল কাউসার

এইচজে


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ