আওয়ার ইসলাম: সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আর হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে অবশেষে দুই দশকের বেশি সময় ধরে গড়ে তোলা ‘গুজরাট মডেল’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ধরে রাখতে পেরেছেন।
একদিকে তিন তরুণ তুর্কির স্থানীয় ‘জাতভিত্তিক’ লড়াইয়ের সঙ্গে জাতীয় কংগ্রেসের মেলবন্ধ আর অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদির নিজস্ব ‘ক্যারিশমা’—এ দুইয়ের মধ্যে শেষ পর্যন্ত বিজেপিকেই বেছে নিয়েছে গুজরাটের ভোটাররা। ১৮২ আসনের গুজরাট বিধানসভায় টানা ষষ্ঠবারের মতো জয় পেল বিজেপি।
৯ আর ১৪ ডিসেম্বর দুই দফা ভোট শেষে বুথফেরত সমীক্ষা আগে থেকেই যে ইঙ্গিত দিয়েছিল, আজ সোমবার সকালে ভোট গণনার পর থেকেই তার ফল মিলতে শুরু করে। তবে দিনের আলো বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ওপরে উঠতে থাকে কংগ্রেসের এগিয়ে থাকা আসনের সংখ্যা।
একপর্যায়ে লড়াই একেবারে হাড্ডাহাড্ডিতে গিয়ে ঠেকে। বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী আর উপমুখ্যমন্ত্রী দুজনই কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়েন। যদিও শেষ পর্যন্ত দুজনই অল্প ভোটের ব্যবধানে উতরে গেছেন।
ভারতের গণমাধ্যম টাইম অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি, ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের প্রকাশিত সর্বশেষ ফলে দেখা যায়, গুজরাট রাজ্যের নির্বাচনে বিজেপি তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের চেয়ে ৩৪-৩৫টির বেশি আসনে জয় পেয়েছে।
২০১২ সালের ভোটে ১১৫ আসনে জিতে ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি, কংগ্রেস পেয়েছিল ৬১ আসন। এবার স্বভাবতই জোট গড়ে আসনসংখ্যা বাড়িয়ে নিতে পেরেছে কংগ্রেস।
টাইম অব ইন্ডিয়ার ফলে বলা হচ্ছে, বিজেপি ১০৩ আর কংগ্রেস ৭৪ আসনে এগিয়ে রয়েছে।
এনডিটিভির ফলে বলা হচ্ছে, ১০৮ আসনে বিজেপি আর কংগ্রেস এগিয়ে আছে ৭৩ আসনে। একই ফল দিচ্ছে ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস।
১৮২ আসনের গুজরাটে ৯২ আসনে জয় পেলেই সরকার গঠন করা যায়। গুজরাটে এবার সরকার গঠন করে নরেন্দ্র মোদি জামানায় বিজেপি সব মিলিয়ে ১৯টি রাজ্যে ক্ষমতায় স্বাদ পাবে। তবে হিসাবের এখানেই বোধ হয় শেষ নয়।
কারণ, আজ হিমাচল প্রদেশের নির্বাচনেও ফল প্রকাশিত হচ্ছে। প্রাথমিক ফলে হিমাচল কংগ্রেসের বেহাত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, ৬৮ আসনের হিমাচল প্রদেশে বিজেপি ৪৪ আর কংগ্রেস ২২টি আসনে এগিয়ে আছে।
এখানেও বিজেপি জয় পেলে বলার অপেক্ষা রাখে না নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ জুটি ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের জন্যও অনেকটা এগিয়ে থাকবেন। যদিও আগামী বছর আরো কয়েকটি রাজ্যে ভোটের কথা রয়েছে।
কংগ্রেসপ্রধান হিসেবে মাত্র দুদিন হয় দায়িত্ব নিয়েছেন রাহুল গান্ধী। গতকাল রোববার পাঞ্জাবে তিনটি পৌরসভায় জাতীয় কংগ্রেস ভালোই ফল করেছে। কিন্তু গুজরাট পুনরুদ্ধারে ব্যর্থতার পাশাপাশি হিমাচল হারানোর এক কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়লেন সোনিয়া-তনয়।
‘নোটবন্দি, জিএসটি আর অসম উন্নয়নের’ ক্ষোভে ফুটতে থাকা নরেন্দ্র মোদি আর অমিত শাহ জন্মভূমিতে গত দুই দশকের মধ্যে এমন বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়নি বিজেপিকে।
ওবিসি আন্দোলনের অল্পেশ ঠাকোর, পাতিদার আন্দোলনের হার্দিক প্যাটেল এবং দলিত আন্দোলনের জিগনেশ মেহভানি—এই তিন তরুণ নেতা নিঃসন্দেহে এবার কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছিল বিজেপির কপালে।
তবে শেষ হাসি হাসলেন নরেন্দ্র মোদি। আজ সকালে সংসদে প্রবেশের মুখে ‘ভি’ চিহ্ন দেখান। বিজেপির সাবেক সভাপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, গুজরাট আর হিমাচলে সরকার গঠন করতে চলেছেন তাঁরা।
এইচজে