মাল্টাকে বিদেশি ফল হিসেবেই চেনে সবাই। কিন্তু মাল্টা এখন আর বিদেশি ফল নয় এখন। দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে প্রচুর পরিমাণ মাল্টা। দেশে মাল্টার চাহিদার অনেকাংশই পূরণ হচ্ছে দেশি খাত থেকে।
দেশে মাল্টা চাষ শুরু হয় সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চলে। কিন্তু জনপ্রিয়তা পায় নি সেখানে। জনপ্রিয়তা পেয়েছে সমতলে। শুধু পিরোজপুর জেলায় রয়েছে ৭০০ মাল্টা বাগান।
পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মো. খায়রুল আলম সেখ জানান, গত দুই বছরে জেলায় মাল্টা চাষে বৈপ্লবিক যে পরিবর্তন এসেছে তার উপরে ভিত্তি করে সরকার জেলার ব্র্যান্ডিং করেছে মাল্টাকে। দেশের মধ্যে পিরোজপুরকে মাল্টা চাষের মডেল হিসাবে গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রায় সাতশ বাগান এ জেলায় গত ২/৩ বছরে গড়ে উঠেছে।
কৃষকদের মাঝেও সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। শুধু পিরোজপুর পৌর এলাকার একটি নার্সারিসহ নেছারাবাদের (স্বরূপকাঠি) বিভিন্ন নার্সারি থেকে ১০ লাখেরও বেশি চারা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়েছে। আগামীতে দেশে পিরোজপুর মাল্টার জেলা হিসাবে গৌরবময় পরিচিতি অর্জন করবে।
পিরোজপুরের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আবুল হোসেন তালুকদার জানালেন, জেলার একটি কৃষি প্রকল্পের মাধ্যমে মাল্টা চাষকে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় করা সম্ভব হয়েছে মাত্র দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যে। ২০০৭-২০০৮ সালে এ জেলায় মাত্র একটি মাল্টা বাগান ছিল যা এখন ৬৭০টি।
শুধু সদর উপজেলায় চাষিরা ২১২টি মাল্টা বাগান সৃজন করেছেন। এছাড়া নেছারাবাদে ১৭০, নাজিরপুরে ১২০, মঠবাড়িয়ায় ৫৪, কাউখালীতে ৫০, ভান্ডারিয়ায় ৩৮ এবং ইন্দুরকানিতে ২৬টি বাগান রয়েছে। জেলার ৬৭ হেক্টর জমি মাল্টা চাষের আওতায়। এসব বাগানে প্রায় ৭৫ হাজার মাল্টা চারা রয়েছে। এসব চারা এই জেলারই নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন নার্সারি থেকে সংগৃহীত। নেছারাবাদের নার্সারি চাষিরা অনেক দিন ধরে অন্যান্য ফুল-ফলের সাথে মাল্টার চারাও উত্পাদন করে আসছেন।
প্রসঙ্গত, মাল্টা লেবু জাতীয় জনপ্রিয় মিষ্টি ফল। এ ফলটির ইংরেজি নাম ‘সুইট অরেঞ্জ’ এবং বৈজ্ঞানিক নাম ‘সাইট্রাস সিনেসিস’। বিশ্বে উত্পাদিত লেবু জাতীয় ফলের দুই-তৃতীয়াংশ হচ্ছে মাল্টা। ব্রাজিল ও আমেরিকায় মাল্টার ফলন হয় বেশি। আমাদের দেশে সাধারণত ফাল্গুন মাসে ফুল আসার পর প্রায় পাঁচ মাস অপেক্ষা করতে হয় পরিপক্ব ফল তোলার জন্য।