আওয়ার ইসলাম: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৬ ডিসেম্বর পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস (জেরুসালেম) শহরকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে যে স্বীকৃতি দিয়েছেন তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস।
সেইসঙ্গে হামাস বলেছে, ইসরাইল নামে কোনো রাষ্ট্রের অস্তিত্ব নেই। ফলে এর কোনো রাজধানী থাকতে পারে না।ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা শহরে হামাস প্রতিষ্ঠার ৩০তম বার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে সংগঠনটির প্রধান ইসমাইল হানিয়া তার সমর্থকদের সামনে বক্তব্য রাখেন।
ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার জিইয়ে রাখতে হামাস সদস্যরা যে ত্যাগ স্বীকার করেছে তার প্রশংসা করেন তিনি। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণ বিশেষ করে পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস শহরকে সুরক্ষা দিতে হামাস সৃষ্টি করা হয়েছিল।
হানিয়া আরো বলেন, বিশ্বের সব মুক্তিকামী মানুষ ফিলিস্তিনি জাতির অধিকারের পাশাপাশি বায়তুল মুকাদ্দাসের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
হামাসের এ শীর্ষস্থানীয় নেতা ইসরাইল-আমেরিকার নতুন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ফিলিস্তিনিদের প্রশংসা করে বলেন, বায়তুল মুকাদ্দাস বিষয়ে মার্কিন ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় বিশ্বব্যাপী যে ঐক্য দেখা যাচ্ছে তা ফিলিস্তিনি জাতির জন্য একটি বিরাট বিজয়।
চলছে ফিলিস্তিনিদের তৃতীয় ইন্তিফাদা; কী বার্তা পাচ্ছে বিশ্ব?
ফিলিস্তিনে তৃতীয় ইন্তিফাদা বা তৃতীয় গণঅভ্যুত্থান শুরু হয়েছে বলে ঘোষণা করেছে ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। সংগঠনটির মুখপাত্র আব্দুল লাতিফ আলকানু গত মঙ্গলবার এ ঘোষণা দিয়েছেন।
বায়তুল মুকাদ্দাস বা জেরুজালেমকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতির প্রতিবাদে এই ইন্তিফাদা শুরু হয়েছে। হামাসের মুখপাত্র বলেছেন, বায়তুল মুকাদ্দাস হচ্ছে ফিলিস্তিনের রাজধানী। ফিলিস্তিনের রাজধানীকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনিরা তৃতীয় ইন্তিফাদা শুরু করেছেন বলে তিনি জানান।
তৃতীয় ইন্তিফাদার অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনিরা ইসলাইলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জোরদার করেছেন। পশ্চিম তীর ও গাজায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ হচ্ছে। তারা বায়তুল মুকাদ্দাস ইস্যুতে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলার ঘোষণা দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনিদের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিবেকমান মানুষেরাও ট্রাম্পের স্বীকৃতির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। আমেরিকার মিত্র দেশগুলোও ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারে নি। কারণ এর মাধ্যমে তিনি শান্তির সব সম্ভাবনা নষ্ট করে দিয়েছেন এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছেন।
ফিলিস্তিনিরা বলছেন, ট্রাম্প বায়তুল মুকাদ্দাসকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্নের মৃত্যু ঘটাতে চাইছেন। এ সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল।
'প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভ' বা পিএনআই'র মহাসচিব মোস্তফা আল বারগুসি বলেছেন, ইন্তিফাদা শুরু হয়ে গেছে এবং ফিলিস্তিনিরা ইহুদিবাদী ইসরাইল ও তার মিত্রদেরকে নয়া ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের অনুমতি দেবে না।
ফিলিস্তিনিরা এর আগেও দু'টি ইন্তিফাদার মাধ্যমে ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিভিন্ন ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে। ১৯৮৭ সালের ৮ ডিসেম্বর প্রথম ইন্তিফাদা শুরু হয়। প্রথম ইন্তিফাদায় ফিলিস্তিনিদের প্রধান হাতিয়ার ছিল পাথর।
এ কারণে ওই ইন্তিফাদা 'পাথর ইন্তিফাদা' নামে পরিচিতি পায়। সে সময় আধুনিক অস্ত্রের মোকাবিলায় পাথর ব্যবহার করে ফিলিস্তিনিরা সারা বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিলেন। সেই ইন্তিফাদার কারণে গোটা বিশ্বের মানুষ আরও বেশি সচেতন হয়ে উঠেছিল এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ জোরদার হয়েছিল।
দ্বিতীয় ইন্তিফাদা শুরু হয় ২০০০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে। ওই ইন্তিফাদা ‘আল আকসা’ নামে পরিচিতি লাভ করে। দখলদার ইসরাইলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল শ্যারন বেশ কিছু ইহুদিবাদী সেনাকে সঙ্গে নিয়ে আল আকসা মসজিদে প্রবেশ করলে ফিলিস্তিনিরা দ্বিতীয় ইন্তিফাদা শুরু করেন।
সেই ইন্তিফাদার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিরা জানিয়ে দেয়, আল আকসা মসজিদের বিষয়ে তারা কোনো ছাড় দেবেন না। আল-আকসা মসজিদ খ্যাত বায়তুল মুকাদ্দাস ইস্যুতে এবার শুরু হয়েছে তৃতীয় ইন্তিফাদা। অবশ্য চলমান ইন্তিফাদা শুরুর ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল ২০১৫ সালেই।
আল-আকসা মসজিদসহ অন্যান্য মুসলিম ঐতিহ্য ধ্বংস করে বায়তুল মুকাদ্দাসকে ইহুদিবাদীদের শহর হিসেবে চিহ্নিত করার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ২০১৫ সাল অক্টোবর থেকে জোরালো প্রতিবাদ শুরু করে ফিলিস্তিনিরা। এ সংক্রান্ত প্রতিবাদ অব্যাহত থাকার মাঝেই ট্রাম্পের সাম্প্রতিক ঘোষণা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে এবং ফিলিস্তিনিরা তৃতীয় ইন্তিফাদা শুরু করতে বাধ্য হয়েছেন।
চলমান তৃতীয় ইন্তিফাদা গত দু'টি ইন্তিফাদা এবং অতীতের অন্যান্য আন্দোলনেরই ধারাবাহিকতা। ফিলিস্তিনিরা যে তাদের মাতৃভূমি মুক্ত করার আন্দোলন থেকে পিছু হটে নি এবং প্রতিবাদের শক্তি হারিয়ে ফেলে নি এর মধ্যদিয়ে আবারও তা সবার সামনে স্পষ্ট হয়েছে।
এইচজে