শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী শীত ও শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে আসবে, সতর্ক থাকতে হবে: গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা

ইসলাম ও আমাদের মহান স্বাধীনতা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

জুবায়ের রশীদ
তরুণ লেখক

স্বাধীনতা। একটি শব্দ। চেতনার উৎস। কোটি প্রেরণার বাতিঘর। অনিঃশেষ আলোর গোলক। সভ্যতার সূতিকাগার। স্বাধীনতা প্রতিটি ব্যক্তির প্রাণের আকুতি। আত্মার ঘোষণা। চিরকালীন মুক্তির ঠিকানা। শান্তির ফল্গুধারা। সুখের বার্তা বহে আনা কোকিলের কুহু ডাক। স্বাধীনতা একটি গনগেন সূর্য। যে সূর্য থেকে সর্বদা ঠিকরে বের হয় বিজয়ের পতাকা। যে আলো ছড়িয়ে পড়ে জনপদের পথে পথে। হাটে হাটে। গাঁয়ে গাঁয়ে। নগরে শহরে। বিস্তৃত মানচিত্রে।

স্বাধীনতা প্রতিটি নাগরিকের মনন ও চিন্তার উঠোনে ছড়িয়ে দেয় অফুরন্ত সুবাস। প্রতিটি জাতি প্রতিটি রাষ্ট্র মাথা উঁচিয়ে দাঁড়ানোর পূর্বশর্ত হলো স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। পরাধীনতারর শিকল ভেঙে বেরিয়ে আসা। পর গোলামীর খাঁচা থেকে মুক্ত হওয়া। তারপর উন্নতি উৎকর্ষের সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে সফলতার শিখরে পৌঁছোয়। নিজেদের দেশ নিজেদের স্বপ্নের রঙে রাঙিয়ে তোলে। পৃথিবীর ইতিহাসের দিকে দিকে তাকালে এই তো দেখি আমরা।

অপরদিকে যারা আজও পর গোলামির জিঞ্জির থেকে মুক্ত করতে পারেনি নিজেদের তাদের দুর্দশা দুর্গতি চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে বৈকি। জাগতিক দৃষ্টি থেকে শুধুই নয় ইসলামের উদার ও প্রসারিত আঙিনায়ও স্বাধীনতার স্বতন্ত্র গুরুত্ম রয়েছে। রয়েছে অনন্য বৈশিষ্ট্য। দিয়েছে অনুপম শ্রেষ্ঠত্ম।

ইসলামের সোনালি ইতিহাসের পাতায় চোখ ফিরালে আমরা এমন দৃষ্টান্ত অনেক অনেক খুঁজে পাই। জ্বলন্ত ও জাজ্জ্বল্য একটি উদাহরণ পেশ করা যাক। মক্কা বিজয়ের কথা। হিজরী অষ্টম বর্ষ। রমযান মাস। নবীজি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপন মাতৃভূমি মক্কাকে শত্রুদের হাত থেকে মুক্ত করবেন। অভিপ্রায় করেছেন আবার ফিরে যাবেন জন্মনিবাসে।

আজ থেকে আট বছর আগে মক্কার কাফির মুশরিকদের অকথ্য নিপীড়নের শিকার হয়ে হিজরত করেন তারা মদিনায়। পিয়ারা নবী যখন জন্মভিটা মক্কা ছেড়ে মদিনায় পাড়ি জমাচ্ছিলেন তখনকার দৃশ্যটি ছিল বড়ই করুণ। নিদারুণ কষ্টে ভরা।

হাদিসের কিতাবগুলোতে এর চিত্র আঁকা আছে নববী ব্যঞ্জনায়। বারবার নবী ফিরে তাকাচ্ছিলেন মক্কার দিকে। ঘাড় ফিরিয়ে দেখে নিচ্ছিলেন আখেরিবারের মতো পবিত্র কাবার নয়নমুগ্ধ দৃশ্য। আর বারবার মুখ দিয়ে উচ্চারণ করছিলেন বিভিন্ন আবেগি বাক্য। রাতের অন্ধকারে নবী দেশ ত্যাগ করেন। পাড়ি দেন আরেক পবিত্রতমম নগরী মদিনায়। সেখানে কেটে যায় সুদীর্ঘ দশ বছর। দশ বছরের প্রতিটি মুহূর্তে নবীকে দংশন করেছে জন্মভূমির বিচ্ছেদ।

তারপর একদিন দশ হাজার সাহাবার একটি কাফেলা নিয়ে মদিনা থেকে বের হলেন। মক্কা অভিমূখে। যুদ্ধ করবেন। অবশেষে বিনা রক্তপাতে স্বাধীন হল মক্কা। বিজয় বেশে রাসুল প্রবেশ করলেন মক্কায়। নিজ জন্মভিটিতে। মুসলমানরা বিজয়োল্লাসে মাতলেন। আনন্দের সঙ্গীত গেয়ে ফিরছেন সবাই। হৃদয়ে হৃদয়ে, ঘরে ঘরে সে কী আনন্দ! সে কী উৎফুল্লতা। সে কী ধ্বনি প্রতিধ্বনি।

পৃথিবীর ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে মুসলমানদের মক্ক বিজয়ের কাহিনী। একটি সফল মুক্তিযুদ্ধের অদ্বিতীয় উপমা হয়ে জেগে আছে। রাসুল সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হয়েছেন একজন সংগ্রামী বিজেতা। সাহসী বীর। যিনি জন্মভূমিকে শত্রুদের কালো হাত থেকে মুক্ত করে হয়েছেন স্বাধীনতার স্থপতি। তিনি আমাদের নবী। আমাদের ধ্যান ও জ্ঞান। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। মানবতার আশিষ।

১৯৭১ আমাদের জাতীয় ইতিহাসের স্মারক অধ্যায়। হাজার বছরের বাঙালির শ্রেষ্ঠতম বছর। আনন্দের। বিয়োগের। সুখের। কষ্টের। বিজয়ের। আত্মত্যাগের। আমাদের বিগত ও অনাগত সমস্ত সফলতার শিকড় এই ৭১। দীর্ঘ নয়টি মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর অত্যাচারী পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী হাত থেকে মুক্ত হয় সুজলা সুফলা শষ্যের আকর এই কাংলাদেশ। বাংলাদেশের সাতচল্লিশ হাজার গ্রাম। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের মানচিত্র। বিনিময়ে রক্তের গঙা বহেয়ে। লাশের পাহাড় জমেছে। আগুনে পুড়েছে মাটি ও মানুষ আমদের সম্পত্তি।

মহান এই মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গীত সকল শহীদের মাগফিরাত কামনা করছি। স্বদেশ ও মাতৃভূমির তরে জীবন দানকারী শহীদানের কবরে বর্ষিত হোক প্রভুর অনন্ত রহম করম। আমাদের একনিষ্ঠ প্রার্থনায় সুবাসিত হোক জাতীয় বীরদের আত্মা। মিনার সংস্কৃতি এবং অধুনা গানবাদ্যের বিপুল অশ্লীল মহরা থেকে মুক্তি পাক তারা।

যারা আমাদের কল্যাণে রক্ত খুইয়েছেন বুক থেকে। জীবন বিলিয়েছেন অকাতরে। হযরত রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার প্রিয় সাহাবায়ে কেরাম জন্মভূমি মক্কাকে জালিম শাসক আর অত্যাচারীদের হাত থেকে মুক্ত করেছেন।

৭১ সালে লাখো বাঙালি তাদের জীবন ও রক্তের বিনিময়ে মুক্ত করেছেন বাংলাদেশ। অর্জন করেছেন স্বাধীনতা। এ দুটো ইতিহাস ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে শুধু সময়ের ব্যবধানই পরীলক্ষিত হয়। স্বাধীনতা সর্বকালে সর্বযুগে একই আবেদন নিয়ে উপস্থিত হয়। আরএম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ