আওয়ার ইসলাম:
সমস্যা: আমি জামাতে শরহেজামী পড়ি। নাহু, ছরফ, বালাগাতে আমার কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে। ফারেগ হওয়ার পর ফিকহ পড়ার ইচ্ছা আছে।
তাই আগামী বছর আদব পড়ার সাথে সাথে শরহে বেকায়া জামাতে পড়ার ইচ্ছা করেছি। এ বিষয়ে আপনার পরামর্শ কামনা করছি।
পরামর্শ: শরহে বেকায়া জামাতের সাথে সাথে আদবও পড়ার আপনার এই পরিকল্পনাটি আমার বোধগম্য হচ্ছে না। আর আদব তো একটি স্বতন্ত্র বিষয়। এই বিষয়টি নাহু-ছরফের দুর্বলতা দূরীকরণের জন্য নয়।
যেকোনো ভাষার সাহিত্য এক জিনিস আর ব্যাকরণ ভিন্ন জিনিস। যাই হোক, এখন আপনার প্রধান কর্তব্য হল, কিতাবী ইসতিদাদ তৈরিতে মনোনিবেশ করা। এক্ষেত্রে প্রশ্নে বর্ণিত সমস্যাটিকে যদি বাধা মনে হয় তাহলে আলকাউসার জুমাদাল উলা ৩১, মে ১০ সংখ্যার পরামর্শ অনুযায়ী আমল শুরু করুন।
আপনার পূর্ণ ইতমিনানের জন্য প্রয়োজনে ০১৭১২-৮৪১৮৪৭ নাম্বারে শুক্রবার ছাড়া অন্য যেকোনোদিন বেলা ১১টা থেকে ১২ টার মধ্যে যোগাযোগ করতে পারেন।
সমস্যা:
ক) আমি কামিল ১ম বর্ষের একজন ছাত্র। আমাদের নেসাবের একটি কিতাব তিরমিযী শরীফ। তিরমিযী শরীফের শরাহ হিসেবে দরসে তিরমিযী ও মাআরিফুস সুনান নিয়েছি। কিন্তু কোনোটিই পূর্ণ শরাহ হিসেবে বের হয়নি। তাই একটি পূর্ণাঙ্গ আরবী শরাহ হিসেবে তোহফাতুল আহওয়াযী নিয়েছি।
কিন্তু তাতে বিভিন্ন স্থানে ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর মাযহাব সম্পর্কে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করা হয়েছে। তাই তিরমিযী শরীফের কিছু পূর্ণাঙ্গ আরবী শরাহর নাম জানতে চাই, যা আমাদের মাযহাবের মুয়াফিক। শরাহ হিসেবে তোহফাতুল আহওয়াযী থেকে ফায়েদা হাসিলের প্রয়োজনীয় দিকগুলো জানানোর আরজ করছি।
খ) সুনানে আবু দাউদের শরাহ হিসেবে ‘বাযলূল মাজহূদ’ ও ‘আওনুল মাবূদ’ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানতে চাই। বর্তমানে যে সমস্ত কুতুবখানা থেকে কিতাব দুটি ছাপা হয়েছে তাদের কোনটি নির্ভরযোগ্য এবং সংগ্রহে রাখতে পারি। উপরোক্ত দুটি শরাহ ছাড়া আমাদের জন্য মুফীদ আরবী শরাহ আর কী আছে তাও জানানোর আবেদন রইল।
পরামর্শ:
ক) মাআরিফুস সুনানের তাকমিলা লেখা হচ্ছে। ফয়সালাবাদের মাওলানা যাহিদ ছাহেব লিখছেন। এর এক খন্ড প্রকাশিত হয়েছে, মাশাআল্লাহ চকৎকার কিতাব।
দরসে তিরমিযী যদিও পুরা হয়নি, কিন্তু যদ্দুর জানি, মুফতী সায়ীদ আহমদ পালনপুরী দামাত বারাকাতুহুমের তুহফাতুল আলমায়ী’ পুরা হয়েছে। তা থেকে ইস্তিফাদার চেষ্টা করুন।
‘তোহফাতুল আহওয়াযী’ শরহ হিসেবে মাঝারি মানের মনে হয় তবে ইখতিলাফী মাসায়েলের ক্ষেত্রে আদব ও ইনসাফের সাথে আলোচনা করার তাওফীক সবার হয় না। এরপরও ইলমী মুনাকাশা ও বিতর্ক দেখে বিরক্ত হওয়া কিংবা কারো সম্পর্কে কুধারণা পোষণ করা ও নিন্দা-সমালোচনা করা ঠিক নয়। এসবের দ্বারা চিন্তা-ভাবনার সুযোগ হয়। আর ইখলাস থাকলে উভয় পক্ষের জন্য প্রান্তিকতা পরিহারের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
খ) এ বিষয়ে আপনি ‘বযলুল মাজহূদের’ শুরুতে শায়খ বানূরী রাহ. (মৃত্যু : ১৩৯৬ হি.) ও শায়খ আবুল হাসান আলী নাদাভী রাহ. (মৃত্যু : ১৩২০ হি.)-এর ভূমিকা মনোযোগের সাথে পাঠ করুন। আর সব ক্ষেত্রে তুলনার কী প্রয়োজন। যেখানে যে ফায়েদা পাওয়া যায় সেখান থেকে তা গ্রহণ করুন।
বাযলুল মাজহূদের সাহারানপুরের ছয় খন্ডের নুসখাটিও ভালো। বৈরুত থেকে তাকী উদ্দীন নদভী ছাহেবের তাহকীককৃত নুসখাও সম্ভবত মুনাসিব।
আউনুল মাবূদের প্রাচীন হিন্দুস্তানী নুসখা পাওয়া গেলে ভালো হত। এখন আমার জানা মতে, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ বৈরুতের নুসখা ভালোই হবে।
শুনেছি, ইবনে রাসলানের শরহটি সুনানে আবু দাউদের ভালো শরহ, যার একটি মাখতূতা (পান্ডুলিপি) মাযাহিরুল উলূম সাহারানপুরে সংরক্ষিত আছে। সম্প্রতি প্রকাশিত‘আলমানহালুল আযবুল মাওরূদ’ শরহটিও মুনাসিব হবে। খাত্তাবী রাহ. (মৃত্যু : ৩৮৮ হি.)-এর ‘মাআলিমুস সুনান’ দ্বারা তাফাককুহের ক্ষেত্রে সহযোগিতা হয়।
সমস্যা:
আমি মাদানী নেসাবের চতুর্থ বর্ষের একজন ছাত্র। এ বছর দ্বিতীয় ছয় মাসে আমাদের নেসাব অনুযায়ী আমরা ‘মুখতাসারুল মাআনী’ পড়ব। হেফযখানা থেকেই শুনে আসছি, এ কিতাব খুবই দুর্বোধ্য। এজন্য কিতাবটি কীভাবে পড়লে বেশি ফায়েদা পাব এবং কিতাবের উদ্দেশ্যও অর্জিত হবে সে সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিলে খুব উপকৃত হব ইনশাআল্লাহ।
আরেকটি বিষয় হল, কোনো কোনো মাদরাসায় কিতাবটি থেকে শুধু মুকাদ্দামাই পড়ানো হয় (যেমন আমাদের এখানে)। আবার কোনো কোনো মাদরাসায় মুকাদ্দিমা রেখে মূল আলোচনা পড়ানো হয়। তাহলে আসলে কোনটি উচিত ও মুফীদ জানালে খুশি হব। আল্লাহ তাআলা আপনার খায়র করুন। আমীন।
পরামর্শ:
‘মুখতাসারুল মাআনী’ খুব মজাদার কিতাব। উসলুব কিছুটা কঠিন হলেও কিছুদিন পর যখন ভাব হয়ে যাবে তখন শুধু আনন্দ আর আনন্দ। আপনি যা শুনেছেন তা সঠিক নয়। এর শরহ তাজরীদ ও শায়খুল হিন্দ রাহ.-এর হাশিয়া কিতাব হল্ করার জন্য যথেষ্ট। এর পর কোথাও কিছু বুঝে না আসলে অন্যান্য কিতাবের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।
এই কিতাব সম্পর্কে মূল প্রশ্ন হচ্ছে, এর দ্বারা ফন্নী যওক পয়দা হয় কি না। এই প্রশ্নের সমাধানের জন্য মাআনী ও বায়ানের অনুশীলনযুক্ত কোনো কিতাব সাথে রাখতে পারেন। ইবনুল কাইয়্যিমের দিকে মানসূব-‘আলফাওয়াইদ’ও মুতালাআ করতে পারেন।
আমি বারবার বলেছি, নেসাব কী হবে-এ বিষয়ে তালিবে ইলমের চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন নেই। এটা বড়দের ও দায়িত্বশীলদের কর্তব্য।
من حسن إسلام المرء تركه ما لا يعني
সমস্যা: ক) আমরা যে উদ্দেশ্যে মাদরাসায় পড়ছি তার অন্যতম হল মানুষের কাছে আল্লাহর দ্বীনকে পৌঁছে দেওয়া। বর্তমানে আমাদেরকে সাধারণত ৪টি ভাষায় এই ইলম শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। আরবী, উর্দূ, বাংলা ও ফার্সী। প্রশ্ন হল, যুগ চাহিদানুযায়ী কোনটির উপর কী পরিমাণ দক্ষতা অর্জন করা উচিত।
খ) ইলমে মানতেক কতটুকু প্রয়োজন? কিতাব বোঝার জন্য এই ইলম বোঝা শর্ত কি না?
গ) নাহু-ছরফে কী পরিমাণ পাণ্ডিত্য অর্জন করা জরুরি।
পরামর্শ: ক) আপনাদের মাদরাসায় যে ভাষাটিকে যতটুকু পরিমাণে পড়ানো হয় এই মুহূর্তে ততটুকু ভালোভাবে পড়া আপনাদের কর্তব্য। আরবী ভাষা দ্বীন ও ইলমের ভাষা। আরবী ভাষা কুরআন, সুন্নাহ ও শরীয়ার মৌলিক জ্ঞান অর্জনের জন্য চাবিকাঠি।
তাই তা একজন তালিবে ইলমের কাছে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়ার দাবী রাখে। সাথে সাথে আপনার আর আপনার কওমের মধ্যকার দাওয়াতী ও দ্বীনী সম্পর্ক তৈরি করতে বাংলা ভাষারও কোনো বিকল্প নেই। আর ভারত উপমহাদেশের আকাবিরদের লেখা অসংখ্য উলূম ও মাআরিফ এখনও রয়ে গেছে উর্দূ ভাষায়।
তাদের সাথে আত্মিক সম্পর্ক গড়ার জন্য উর্দূ ভাষারও প্রয়োজন। বাকি রইল ফার্সী ভাষা। দ্বীনের মৌলিক পর্যায়ের কোনো বিষয় এর উপর মাওকূফ নয়, কিন্তু তাসাওউফ, মারেফাত ও হিকমতের অনেক কিছু ফার্সী রচনাবলিতেও রয়েছে। উৎসাহী কারো জন্য এই ভাষা শিক্ষা করাও ফায়দা থেকে খালি নয়।
যাই হোক, প্রত্যেক ভাষা অর্জনের মূল মাকসাদ বলে দেওয়ায় আপনি সহজে বুঝতে পারবেন যে, কোনটি অর্জনে কতটুকু মেহনত করা দরকার। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন। আমীন।
খ) এ বিষয়ে আলকাউসারে আকাবিরদের হাওয়ালায় লেখার তাওফীক হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। অনুগ্রহ করে আপনারা উভয়ে তা পড়ে নিন।
গ) নাহু-ছরফ অসীলা পর্যায়ের ইলম। সঠিকভাবে আরবী পড়া, বোঝা ও নির্ভুলভাবে লিখতে পারা তথা আরবী ভাষাজ্ঞানকে সু-সংহত করার জন্যই আরবী ব্যাকরণ বা নাহু-ছরফের প্রয়োজন হয়। অতএব কিতাবী ইসিদাদকে পাকা করার জন্য যতটুকু ব্যাকরণ প্রয়োজন তা প্রত্যেক আলেমে দ্বীনের অর্জন করা জরুরী।
মাসিক আল কাউসার