আওয়ার ইসলাম: জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, পবিত্র মসজিদুল আকসাকে ঘিরে গড়ে ওঠা জেরুজালেম নগরীকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট অন্যায়ভাবে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করে মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ লাগিয়ে দিয়েছে।
তার সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিশ্ব মুসলিম নেতারা ও জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।জেরুজালেম শুধু ফিলিস্তিনি মুসলমানদের নয়, গোটা মুসলিম উম্মাহর। ইসলামের প্রথম কেবলা বায়তুল মুকাদ্দাসের এ ভূমি মুসলমানদের রক্তের চাইতেও পবিত্র। এটা কখনো কোনো ইহুদি গোষ্ঠীর হতে পারে না।
বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট একজন মস্তিষ্কবিকৃত লোক। তার একের পর এক নানা বিতর্কিত ও আগ্রাসনমূলক সিদ্ধান্তে বিশ্বশান্তি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ গত (৮ ডিসেম্বর) শুক্রবার লুঠনে এক সভায় মিলিত হন এবং উপরোল্লেখিত কথা গুলো বলেন ।
সভায় ইউকে জমিয়তের প্রতিনিধিত্বশীল কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্য অংশগ্রহণ করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউরোপের সহ সভাপতি ও ইউকে জমিয়তের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা শায়খ মুফতি ছাইফুল ইসলাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের সিনিয়র সহ সভাপতি মুফতি আব্দুল মুনতাকিম,জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা সৈয়দ তামিম আহমদ ,জয়েন্ট সেক্রেটারি মাওলানা আশফাকুর রহমান, মাওলানা শামসুল আলম কিয়ামপুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা সৈয়দ নাঈম আহমদ, ট্রেজারার হাফিজ হুসেন আহমদ বিশ্বনাথী, জমিয়ত নেতা মাওলানা ওবায়দুর রহমান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকে লুঠন শাখার সেক্রেটারি মাওলানা আবুল মনছুর, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের যুব বিষয়ক সম্পাদক মুফতি সৈয়দ রিয়াজ আহমদ, হাফিজ মাওলানা ফরহাদ আহমদ।
সভা থেকে এক যৌথ বিবৃতিতে জমিয়ত নেতৃবৃন্দ যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ইসরাইলের জবরদখলকৃত ফিলিস্তিনী শহর জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিবৃতিতে জমিয়ত নেতৃবৃন্দ বলেন, মুসলমানদের প্রথম ক্বেবলা পবিত্র মসজিদুল আকসাকে ঘিরে গড়ে ওঠা জেরুসালেম নগরী ফিলিস্তিনীদেরই ভূমি। এই ভূমি ইসরাইল অবৈধভাবে জবর দখল করে রেখেছে। বিশ্ব সম্প্রদায় ইসরাইলের এই জবরদখলকে মেনে নেয়নি।
তারা বলেন, মার্কিন প্রেসেডিন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী বলে যে ঘোষণা দিয়েছেন, এটা অবৈধ এবং অন্যায়। যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত অন্যায়ের পক্ষে এবং আগ্রাসী অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলকে এক তরফা সমর্থন দেওয়ার শামিল। যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা ও সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই সিদ্ধান্তে শুধু মুসলিমরাই হতাশ হয়নি, বরং বিশ্বের শান্তিকামী সকলেই আঘাত পেয়েছে।
বিবৃতিতে জমিয়ত নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন,পবিত্র কাবাঘর নির্মাণের ৪০ বছর পর হযরত ইয়াকুব আ. জেরুজালেমে আল-আকসা মসজিদ নির্মাণ করেন। তারপর হযরত সুলাইমান আ. এই পবিত্র মসজিদের পুনঃনির্মান করেন। বায়তুল মুকাদ্দাস হচ্ছে ইসলামের প্রথম কিবলা। এবং পবিত্রতার দিক থেকে মক্কা-মদিনা মুনাওয়ারার পরে তৃতীয় পবিত্র স্থান।
জমিয়ত নেতৃবৃন্দবলেন ৬৩৮ ঈসায়ীতে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর রা.-এর খিলাফতকালে পুরো বাইতুল মুকাদ্দাস এলাকা মুসলমানদের আয়াত্বে চলে আসে। ১০৯৬ সনে খৃষ্টান ত্রুসেডারগণ পুরো সিরিয়া ও ফিলিস্তিন দখল করার পর মসজিদে আকসা-এর ব্যাপক পরিবর্তন করে একে গীর্জায় পরিণত করে ফেলে। তারপর ১১৮৭ সালে মুসলিম বীর ও সিপাহসালার সুলতান সালাহ উদ্দীন আইয়ুবি জেরুজালেম শহর মুসলমানদের অধিকারে নিয়ে আসেন।
সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবির হাতে পরাজিত হওয়ার পর খৃস্ট শক্তি কিছুটা পিছু হটলেও ইয়াহুদী চক্র বায়তুল মুকাদ্দাসের প্রতি লোলুপ দৃষ্টি রাখে। এবং তারা ফিলিস্তিন থেকে নিয়ে সুদূর মদিনা পর্যন্ত সমগ্র মুসলিম এলাকা নিয়ে বৃহত্তর ইসরাঈল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করে বসে। এবং এরই প্রেক্ষিতে তারা তুরস্কের তৎকালীন শাসক সুলতান আবদুল হামিদ-এর নিকট ফিলিস্তিনে জমি কেনার অনুমতি চায় এবং এর বিনিময়ে তারা তুরস্কের সকল বিদেশী ঋণ পরিশোধ করে দেবে বলে অঙ্গীকার করে। কিন্তু সুলতান তাদের ষড়যন্ত্রমূলক এ প্রস্তাবে রাজি হননি। তা সত্তে¡ও ইয়াহুদীরা গোপনে জমি কিনতে থাকে।
১৯১৭ সনে ইংরেজরা ফিলিস্তিনে প্রবেশ করে ও ১৯২০ সনে সেখান পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে এবং ‘স্যার হার্বাট স্যামুয়েল’ নামক একজন ইয়াহুদীকে সেখানে বৃটিশ কমিশনার নিযুক্ত করে। এই জমি কেনার ফলে বহিরাগত ইয়াহুদীদের জন্য ফিলিস্তিনের দরজা খুলে যায়। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৪৮ সনের ১৫ ই মে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে যায়নবাদী অবৈধ ইসরাঈল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভের পর ইয়াহুদীরা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং মুসলমানদের কচুকাটা করতে থাকে। তাদের অত্যাচারে জর্জরিত আরবরা জীবন বাঁচাতে দলে দলে দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। এ সত্তে¡ও তখনও বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের দখলে ছিল। ফিলিস্তিনের নির্যাতিত জনগণ দীর্ঘদিন ধরে তাদের আবাসভূমি ও আল-কুদ্স (বায়তুল মুকাদ্দাস) উদ্ধারের জন্য রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।
ইউকে জমিয়ত নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে জেরুসালেমকে নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবী জানিয়ে বলেন, অন্যথায় বিশ্ব মুসলিম ইহুদীবাদী অন্যায় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে এবং এই জন্য যুক্তরাষ্ট্রকেও চড়া মূল্য দিতে হবে।
এসএস/