আওয়ার ইসলাম : জেরুসালেম কোনদিনই ইসরায়েলের একছত্র অধিকার ছিলো না। এমনকি তা শুধুই ইসরায়েলের রাজধানী নয়। এরই প্রেক্ষিতে পবিত্র এই শহরটিকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসাবে ঘোষণা করার মার্কিন সিদ্ধান্তকে খারিজ করে দিয়েছে জাতিসংঘ।
মুসলমান, ইহুদী ও খ্রিস্টান এই তিন ধর্মের কাছে পবিত্র পৃথীবির প্রাচীন এই শহর নিয়ে অনেক ধরে ফিলিস্তিন ও ইসরাইয়েলের মধ্যে বিরোধ চলছে । সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের দেওয়া বিতর্কিত ঘোষণাকে খারিজ করে দিয়ে জাতিসংঘ এবার মধ্যস্থতার চেষ্টায় নামল।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি পাঁচ দেশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিদের পারস্পারিক আলোচনা ও মধ্যস্থতাতেই জেরুজালেমের অবস্থান নির্ণয় করা হবে। যতক্ষণ না পারস্পারিক আলোচনায় বসছে দুই যুযুধান দেশ, ততক্ষণ মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাবিকে কোনওভাবেই স্বীকৃতি দেওয়া হবে না।
ইইউয়ের এই সিদ্ধান্ত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হিসাবে গৃহীত হয়েছে।
ঐতিহাসিক, পৌরাণিক ও রাজনীতিক স্মৃতি বিজড়িত জেরুসালেম। প্রাচীন এই শহরটিকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসাবে ঘোষণার হিটলারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় বিশ্বজুড়ে। প্রতিবাদে কট্টর অবস্থান নিয়েছে আরব বিশ্বের অন্য মুসলিম দেশ।
আমেরিকা জেরুজালেমকে ইজরায়েলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ শুক্রবার একটি বৈঠক ডাকে। বৈঠকের শুরুতে পশ্চিম এশিয়ায় জাতিসংঘের বিশেষ দূত নিকোলাই ম্লাজেনভ জেরুজালেম থেকে এক ভিডিও কনফারেন্স করেন।
সেখানে তিনি জানান, রাগের আগুনে জ্বলছে জেরুসালেমের ইসলামি ধর্মাবলম্বীরা। যেকোনও মুহূর্তে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। কোনও প্রকার সহিংসতা ছড়ানোর আগে যেন সব পক্ষ একটি আলোচনায় বসে তার পরামর্শ দেন তিনি। এরপর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে কেবল ইইউ-কেই সংঘবদ্ধ মতামত দিতে দেখা যায়।
ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে আবারো বিষয়টির মীমাংসায় দুই দেশের আলোচনার প্রতি জোড় দেন। আর ফরাসী প্রতিনিধি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থান পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্যেই আরো ভয়ানক পরিণতি নিয়ে আসছে। জরুরি বৈঠকে কার্যত যুক্তরাষ্ট্র সবার প্রতিপক্ষে পরিণত হয়।
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনে মদদ দেবার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেন।
তিনি বলেন, "এখানে খারাপ কাজের সহযোগিতাকে স্বীকার করতে হবে। অঞ্চলটিতে ইসরায়েলের দমন পীড়ন আর বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত আরো উস্কে দিয়েছে। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তার শান্তির মধ্যস্থতাকারীর অবস্থান হারিয়েছে।"
তারা পরিষ্কার করে দেয়, জেরুজালেম এখনও পর্যন্ত দু'দেশের রাজধানী হিসাবেই স্বীকৃত। তার উপর তৃতীয় কোনও দেশের মতামতের ভিত্তিতে দখলদারি খাটবে না। কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।তবে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেছেন, জাতিসংঘ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি রক্ষা করার বদলে শান্তি নষ্টের চেষ্টা করছে। আরএম