শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
অ্যাডভোকেট আলিফের কবর জিয়ারত ও পরিবারের পাশে হেফাজতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ  প্রাইমারি স্কুলে আলেম ধর্মীয় শিক্ষক বাধ্যতামূলক করতে হবে: মাওলানা ইসলামাবাদী বগুড়ায় ছাত্র আন্দোলনে আহত ও শহীদদের স্মরণে স্মরণসভা শেরপুরে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে স্মরণসভা শেরপুরে শেখ হাসিনাসহ ৫৯ জনের নামে মামলা কাল বাদ জুমা বায়তুল মোকাররমে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে যা বললেন জামায়াত আমীর হজ নিবন্ধনের সময় বাড়ল ১৫ দিন রাষ্ট্রদ্রোহী সংগঠন চলতে দেয়া হবে না: মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী ২২৫০০ কোটি নতুন টাকা ছাপিয়ে ৬ ব্যাংককে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

বিমানবন্দর থেকে মেয়েকে আনতে গিয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত দুদিন ধরে নিখোঁজ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম. মারুফ জামান নিখোঁজ হওয়ার পর ৪৮ ঘণ্টা পার হলেও এখনো তার খোঁজ মেলেনি। এই ঘটনায় থানা পুলিশের পাশাপাশি তদন্ত শুরু করেছে গোয়েন্দারাও।

তবে পেশাদার লোকজনই এই ঘটনার পেছনে রয়েছে বলে পুলিশ ও পরিবার সন্দেহ করছে। মারুফ জামানের রহস্যময় অন্তর্ধানের ঘটনাসহ গত কয়েকমাসে বেশ ক'জন ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক, সাংবাদিক এবং শিক্ষক নিখোঁজ হয়েছেন।

এই সব ঘটনার অনেকগুলোর ক্ষেত্রেই নিখোঁজের ধরনে মিল রয়েছে বলে পুলিশ ধারণা করছে ।

ধানমণ্ডির যে বাড়িতে থাকতেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম মারুফ জামান, বুধবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা গেলো একই সঙ্গে ভয় আর উদ্বেগের পরিবেশ।

সোমবার সন্ধ্যায় এই বাড়ি থেকেই নিজে গাড়ি চালিয়ে বিদেশ ফেরত মেয়েকে আনতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রওনা হয়েছিলেন মি. জামান, কিন্তু এরপর থেকেই তার আর খোজ পাওয়া যাচ্ছে না। এর কোন কারণও খুঁজে পাচ্ছেন না মেয়ে সামিহা জামান।

তিনি বলছেন, ''আমরা সবাই মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছি। আমরা চিন্তাও করতে পারছি না যে, এরকম একটি ঘটনা আমাদের ক্ষেত্রে ঘটতে পারে। আমি শুধু চাই আমার আব্বু ফিরে আসুক।''

এ রকম একটি ঘটনার পেছনে কি কারণ থাকতে পারে?

সামিহা জামান বলছেন, ''এটাও আমার ধারণার বাইরে। আবার আব্বু বেশি একটা বাসার বাইরে যেতো না, সামাজিকভাবেও বেশি একটা মিশতো না। কারো কাছ থেকে ঋণ নিতো না, কারো সাথে শত্রুতাও ছিল না। আমার আব্বুকে ধরে নেয়ার কোন কারণ বুঝতে পারছি না।''

বেলজিয়াম প্রবাসী বোনের সঙ্গে দেখা করে সোমবার বিকালে ঢাকায় ফেরেন সামিহা জামান। তাকে আনতেই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে একা গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিলেন মারুফ জামান। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ বিমানবন্দরে বসে থেকেও যখন বাবার সাক্ষাৎ পাননি, তখন আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ করে বাবার নিখোঁজ হবার কথা জানতে পারেন।

মঙ্গলবার ধানমণ্ডি থানায় তারা একটি সাধারণ ডায়রি করেন। সেদিন রাত ১০টার দিকে পূর্বাচলের ৩০০ ফিট সড়কের একটি অংশে তার গাড়িটি পাওয়া যায়।

তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, মি. জামানের সর্বশেষ অবস্থান ছিল ঢাকার দক্ষিণ খান এলাকায়। এরপর থেকেই তার সব মোবাইল বন্ধ রয়েছে।

তবে সোমবার সন্ধ্যার কিছু পরেই অপরিচিত নাম্বার থেকে আসা ফোনে মি. জামানের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয় বাসার পুরনো গৃহকর্মী লাকি আক্তারের। ফোন কলের দুইটির একটিতে ছিল এলোমেলো সংখ্যা, আরেকটিতে লেখা উঠেছে শুধুমাত্র পি বা প্রাইভেট।

লাকি আক্তার বলছেন, ''সাড়ে ৭টার দিকে একটি এলোমেলো নাম্বার থেকে ফোন করে স্যার বলেন, আমার বাসায় কয়েকজন লোক যাবে। তাদের কাছে ল্যাপটপ আর কম্পিউটার দিয়ে দিও। তারপর থেকেই ফোন বন্ধ পেয়েছি।''

তিনি বলেন, ''আটটার পর তিনজন লোক এসে বলেন স্যার, আমাদের পাঠিয়েছেন। এরপর তারা ল্যাপটপ, কম্পিউটার, দুইটি ক্যামেরা আর দামী মোবাইল নিয়ে যায়। তারা বাসায় তল্লাশিও চালান। তারা বেশ লম্বা চওড়া, অনেক স্মার্ট, বোঝা যায় চাকরি বাকরি করে।''

ধানমণ্ডির এই বাড়িতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বা সিসি ক্যামেরা রয়েছে। সেসব ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। কিন্তু ক্যামেরায় এই ব্যক্তিদের চেহারা পরিষ্কার নয়।

পুলিশের ধারণা, পেশাদার ব্যক্তিরাই এর সাথে জড়িত, কারণ আসা যাওয়ার সময় তারা সিসি ক্যামেরার বিষয়ে সতর্ক ছিলেন, যাতে তাদের চেহারা বোঝা না যায়।

নিরাপত্তা রক্ষীরা জানালেন, পায়ে হেঁটে এসেছিলেন তিনজন ব্যক্তি। প্রায় নয় মিনিট পরে আবার তারা পায়ে হেটেই চলে যায়। ভেতরে প্রবেশের পর তারা সিসি ক্যামেরা দেখতে পেয়ে মাথা নিচু করে রাখেন। বাসা থেকে বেরিয়ে যাবার সময় তাদের মাথায় ছিল ক্যাপ বা হুডি।

মারুফ জামান নিখোঁজ হবার পর ৪৮ ঘণ্টা পার হলেও এখনো তার বিষয়ে পরিষ্কার কোন বক্তব্য জানাতে পারেনি পুলিশ। তবে তার সন্ধানে পুলিশ পুরো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে বলছেন ঢাকা পুলিশের মুখপাত্র মাসুদুর রহমান।

পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলছেন, ''এই ঘটনার পর ধানমণ্ডি থানায় যে জিডি হয়েছে, তার আলোকেই আমরা তদন্ত শুরু করেছি। ঘটনাস্থল থেকে সিসিটিভির কিছু ফুটেজ পেয়েছি, সেগুলোও বিশ্লেষণ চলছে। থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশও তাকে উদ্ধারে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।''

এ নিয়ে গত কয়েকমাসে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক, শিক্ষক আর সাংবাদিক নিখোঁজের ঘটনা ঘটলো, যাদের কেউ কেউ পরবর্তীতে ফিরে এলেও, অনেকের এখনো খোঁজ মেলেনি।

তাদের নিখোঁজ ঘটনাগুলোর সঙ্গে মি. জামানের নিখোঁজ এবং বাসায় তল্লাশির মতো ঘটনায় অনেক মিল দেখতে পাচ্ছেন তদন্তকারীরা। সূত্র: বিবিসি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ