অনলাইন ডেস্ক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উপনির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ঢাকায় বিজয় নিশ্চিত করতে জাতীয় নির্বাচনের শুভ সূচনা করতে চায় আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকার জয় দিয়ে প্রাক-নির্বাচনী প্রস্তুতিতে এগিয়ে থাকতে চায় মাঠের বিরোধী দল বিএনপি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এই উপনির্বাচনের ফলাফল একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও প্রভাব ফেলবে— এমনটাই মনে করছেন প্রধান দুই দলের নীতিনির্ধারকরা। সে কারণে দুই দলই সদ্য প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের মতো ক্লিন ইমেজের প্রার্থী দেওয়ার পাশাপাশি ফলাফল নিজেদের ঘরে তুলতে চায়। কে হচ্ছেন নতুন মেয়র, কে শেষ করবেন প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের অসমাপ্ত কাজগুলো— সেসব নিয়ে আলোচনা এখন গলির মোড়ে চায়ের দোকান থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে। প্রধান দুই দলের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু না হলেও ভিতরে ভিতরে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী খোঁজা হচ্ছে। প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে এক ডজন প্রার্থীর নাম আলোচনায় এসেছে। তবে দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, এবারও ডিএনসিসি নির্বাচনে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সিটি নির্বাচনের মতোই উত্তরে প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বড় কোনো চমক দিতে পারেন। গতকাল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই নির্বাচন করতে হবে।
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল নির্দলীয় ভোট হলেও এবার দলীয় প্রতীকে ভোট হবে। আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা। সে কারণে এমন কাউকে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চাইছেন যিনি জনপ্রিয়তা ও ভোটব্যাংকের ভিত্তিতে সবার থেকে এগিয়ে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক সূত্রগুলো বলছে, এ রকম পরিস্থিতিতে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পরিবারকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। আনিসুল হকের পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও প্রার্থী খোঁজা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় প্রথমেই উঠে আসছে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হকের নাম। এ ছাড়া আনিসুল হকের একমাত্র ছেলে নাভিদুল হকও রয়েছেন এই আলোচনায়। পরিবারকে প্রাধান্য দেওয়া হলে তাদের মধ্য থেকেই যে কোনো একজন প্রার্থী হতে পারেন বলে জোর আলোচনা রয়েছে দলের ভিতরে। তবে প্রয়াত মেয়র পরিবারের বাইরেও কয়েকজনের নাম ঘুরেফিরে আলোচনায় আসছে। আলোচনায় রয়েছেন ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সভাপতি ও ঢাকা-৯ আসনের এমপি সাবের হোসেন চৌধুরী, আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগরী উত্তরের সভাপতি এ কে এম রহমত উল্লাহ এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, দলের দুঃসময়ে শেখ হাসিনার পাশে থাকা নেতা আলাউদ্দিন আহমেদ নাসিমের নাম আলোচনায় উঠে আসছে।
এবার এই সিটিতে উপনির্বাচনে অংশ নিতে পারেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বিগত সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন, এমন জোর আলোচনা ছিল। তবে জেলে থাকায় তার প্রার্থী হওয়া হয়ে ওঠেনি। এবার তিনি প্রার্থী হচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের বিকল্প হিসেবে খুব হিসাব-নিকাশ করেই প্রার্থী মনোনয়ন দেবে বিএনপি। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক ফোরামের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে এমন অভিমতই ব্যক্ত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। শনিবার রাতে গুলশানে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সিনিয়র বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে ঘণ্টাখানেক আলোচনা করেন তিনি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিষয়টিও স্থান পায় এতে। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস ও ড. মঈন খান উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিগত মেয়র নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল এবার দলীয় মনোনয়নের প্রথম দাবিদার। তবে এর পাশাপাশি তার বাবা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর নামও জোরালোভাবেই শোনা যাচ্ছে। যদি কোনো কারণে তাবিথ মনোনয়ন না পান, কিংবা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আরও ভালো, যোগ্যতাসম্পন্ন এবং প্রবীণ ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হয় সে ক্ষেত্রে তার বাবা আবদুল আউয়াল মিন্টুও চলে আসতে পারেন বলে জানা গেছে।
এদিকে আউয়াল পরিবারের বাইরে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও এ এলাকা থেকে একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক এমপি এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর (অব.) কামরুল ইসলামের নামটিও আলোচনায় এসেছে। অন্যদিকে ২০-দলীয় জোটের পক্ষ থেকে ডিএনসিসি মেয়র পদে নির্বাচনে আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ডিএনসিসির মেয়র নির্বাচনের জন্য দলীয় নেতাদের মধ্য থেকে স্বচ্ছ ইমেজ, দক্ষ, যোগ্য ও ব্যক্তিগতভাবে ক্যারিশম্যাটিক প্রার্থী খুঁজছে বিএনপি। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ডান-বামসহ সব দলের নেতাদের সঙ্গে বৃহত্তর পরিসরে আলোচনার মাধ্যমেও প্রার্থী দিতে পারে বিএনপি। সে ক্ষেত্রে দল ও জোটের বাইরেও বিকল্পধারা, নাগরিক ঐক্য, জেএসডিসহ বাম ঘরানার আরও বেশকিছু দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করতে পারেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। দলের সাবেক এমপি মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানও ডিএনসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে লড়তে চান। সুত্র: বাংলাদশে প্রতিদিন।
এসএস/