আওয়ার ইসলাম: নভেম্বর মাসে সারা দেশে ৪৪ শিশু হত্যার শিকার হয়েছে। একই সময়ে ৬১ নারী ও শিশু ধর্ষণেরও শিকার হয়েছেন।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার কমিউনিকেশন অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন কর্মকর্তা ফাতেমা ইয়াসমিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সংস্থাটির সারা দেশে এ ধরনের ঘটনা মনিটরিং করে থাকে।
গত মাসের মনিটরিংয়ে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা গেছে:
ধর্ষণ : নভেম্বর মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৬১ জন নারী ও শিশু। এদের মধ্যে শিশু ২৪ জন। ২৭ জন নারী। ৭ জন নারী গণধর্ষণের শিকার হন ও ৩ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে ধর্ষণের ঘটনা বেশি। নারায়ণগঞ্জে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে গণধর্ষণ করে তার কথিত প্রেমিক ও বন্ধুরা। বরিশালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন দুই নারী।
আত্মহত্যা : নভেম্বর মাসে সারা দেশে আত্মহত্যা করেছেন ৬৫ জন। এদের মধ্যে ১৯ জন পুরুষ, ৪১ জন নারী ও শিশু ৫ জন। পারিবারিক দ্বন্দ্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, অভিমান, রাগ ও যৌন হয়রানি, পরীক্ষায় খারাপ ফলের কারণে এসকল আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। ঢাকা বিভাগে আত্মহত্যার ঘটনা সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে ঢাকা, ফরিদপুর ও নারায়ণগঞ্জে আত্মহত্যার হার বেশি।
শিশু হত্যা : নভেম্বর মাসে ৪৪ শিশুকে হত্যা করা হয়। এদের মধ্যে মা-বাবার হাতে নিহত হয় ৪ জন। এ মাসে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয় ১৬ জন শিশু। সাতক্ষীরায় পারিবারিক কলহে নিজের ৭ মাস বয়সী সন্তানকে আছাড় মেড়ে হত্যা করে পাষণ্ড পিতা।
পারিবারিক কলহ : পারিবারিক কলহে নভেম্বর মাসে নিহত হন ৩৪ জন, এদের মধ্যে পুরুষ ১৫ জন, নারী ১৯ জন। এদের মধ্যে স্বামীর হাতে নিহত হন ১৫ জন নারী। পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে দ্বন্ধ, রাগ, পরকীয়াসহ বিভিন্ন পারিবারিক কারণে এসব মৃত্যু সংগঠিত হয় বলে জানা গেছে।
রাজধানীতে টুম্পা নামের এক গৃহবধূকে পারিবারিক কলহের কারণে হত্যা করে স্বামী। নেশার টাকা না পেয়ে নরসিংদীতে নিজের স্ত্রী ও মেয়েকে গলাটিপে হত্যা করে পালায় মাদকাসক্ত ব্যক্তি।
সামাজিক অসন্তোষ : সামাজিক অসন্তোষের শিকার হয়ে এই মাসে নিহত হয়েছেন ১৬ জন। আহত হয়েছেন ৩০৬ জন। সামাজিক সহিংসতায় আহত ও নিহতের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিশোরগঞ্জে বাঁধ দেয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিন সহোদরসহ ৫ জন নিহত ও ৪০ জন আহত হয়।
ক্রসফায়ার : নভেম্বর মাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ক্রসফয়ারে নিহত হয় ১৩ জন। পুলিশের ক্রসফায়ারে ৪ জন ও র্যাবের ক্রসফায়ারে ৯ জন নিহত হন। বিভিন্ন কারণে পুলিশ ও থানা হেফাজতে নিহত হয় ৪ জন।
খুন : নভেম্বর মাসে দেশে সন্ত্রাসীদের দ্বারা নিহত হন ৯২ জন। গোপালগঞ্জে রিক্তা নামের এক গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ঢাকায় একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
অন্যান্য সহিংসতার ঘটনা : নভেম্বর মাসে মাদকের প্রভাবে বিভিন্নভাবে নিহতের সংখ্যা ১ জন, আহত হয় ১৩ জন। পানিতে ডুবে, অসাবধানবশত, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে, বজ্রপাতে, মৃত্যুবরণ করেছে ৪৩ জন। গণপিটুনিতে নিহত হয় ৪ জন, আহত ৮। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৮২ জন, আহত ২৫৭ জন। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয় ১৩ জনের।
রাজনৈতিক সহিংসতায় আহত হয় ৪১০ জন যার অধিকাংশ ঘটনা সরকারি দলের অন্তকলহের জেরে। অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার হয়েছে ২৬টি। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দমন অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয় ৭০২ জনকে।