চরমোনাই ময়দান থেকে আবদুল ওহাব
ঐতিহাসিক চরমোনাই মাহফিলের অগ্রহায়ণ পর্ব সমাপ্তির পথে। আজ ২৮ নভেম্বর তৃতীয় দিনের সমাপনী বয়ানের মাধ্যমে পীর সাহেব চরমোনাই তার সাতটি মৌলিক বয়ানের ৬ টি সমাপ্ত করলেন।
আজকের বয়ানে অশ্রুঝরা কণ্ঠে পীর সাহেব চরমোনাই নসীহত করে বলেন, হেদায়েত হলো মানুষের জন্য সর্বোত্তম নেয়ামত। এজন্যই হেদায়েত নামক অমূল্য সম্পদটি আল্লাহপাক তার নিজের হাতে রেখেছেন। এই সম্পদটি তিনি বান্দাকে নিজ হাতে দিতে চান।
তবে এজন্য আমাদের শুধু মাওলার কাছে চাইতে হবে। মন থেকে কেউ হেদায়েত চাইলে আল্লাহপাক অবশ্যই তাকে হেদায়েত দিয়েই দিবেন। এজন্য বেশি বেশি হেদায়েত চাইতে হবে।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, যার কপাল পুড়ে গেছে তার বুঝ উল্টা হয়ে থাকে। সঠিক কথাকেও সে উল্টা ব্যাখ্যা করতে থাকে।
তিনি বলেন, আমি উদ্বোধনী বয়ানেই বলেছি সকল কিছু দেওয়ার মালিক আল্লাহ। মানুষ আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া কিছু করতে পারে না। যারা চরমোনাইতে তিনদিন অবস্থানের পরেও নিয়ত পরিশুদ্ধ করতে পারেননি, আখেরী মুনাজাতের আগেই নিয়ত পরিশুদ্ধ করে নিন।
মানুষের বিবেকের দ্বারে প্রশ্ন রেখে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, বর্তমানে একদল টাকার বিনিময়ে ভোট বিক্রি করে, ওটা গরু ছাগলের চেয়েও খারাপ। গরু ছাগল টাকায় বিক্রি হয়, মানুষ কখনো টাকায় বিক্রি হতে পারে না।
ধর্মীয় কুসংস্কারে আবদ্ধ জনতাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, একদল এখন বাবার দরবারে যায়। বাবার দরবারে যাওয়ার পরে বলে অামি ধনী হয়েছি। বাবার দরবারে যাওয়ার পরে অামার ছেলে-সন্তান হয়েছে। বাবার দরবারে যাওয়ার পরে অামার ফসল হয়েছে।
বাবার দরবারে যাওয়ার পরে অামার এই হয়েছে সেই হয়েছে! যারা এই বিশ্বাস করবে ওদের ঈমান থাকবে না! ওরা জাহান্নামি!!
আল্লাহর প্রতি আস্থা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, বাবারা ধনি বানানোর মালিক কে? অাল্লাহ!
ছেলে-সন্তান দেওয়ার মালিক কে? অাল্লাহ! সবকিছু দেওয়ার মালিক কে? অাল্লাহ!
সাংবিধানিক ব্যবস্থার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, জনগণ সকল ক্ষমতার মালিক এই কথা কোন মুসলমান বিশ্বাস করতে পারে না। চরমোনাই'র মুরিদ হয়ে যারা জনগণ সকল ক্ষমতার মালিক এ কথা বিশ্বাস করবে অথবা কাজে বাস্তবায়ন করবে ওরা চরমোনাই'র না।
একদল লোক অাছে নিজেরা নামায পড়ে বেনামাজিদেরকে ভোট দেয়। বুঝা গেছে তাদের নামায কবুল হয়নি।
জাতীয় জীবনে সৎলোকের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি যখন চরমোনাই ইউনিয়ন নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলাম, তখন বিপক্ষ দলের এক নেতা বলেছিলেন, রেজাউল করীম চেয়ারম্যান হলে উন্নয়ন হোক আর নাই হোক, নামাজীর সংখ্যা বাড়বে।
চেয়ারম্যান হওয়ার পর আমি কোন এক সালিসে বসলাম। আজান হলে আমি মসজিদের দিকে চললাম। উপস্থিত লোকজনও লজ্জায় মসজিদে নামাজ পড়তে রওয়ানা দিল। চেয়ারম্যান সাহেব নামাজ পড়তে যাচ্ছেন আর তারা বসে থাকবে, এমনটা কেউ মানতে পারল না।
এজন্য বলি, আপনি নামাজ পড়েন আর আপনার সমর্থন/ভোট নামাজ কায়েমকারী পায় না। বুঝতে হবে, আপনার নামাজে গলদ আছে। আল্লাহ বলেছেন, তায়াঅনু আলাল বিররি ওয়াত...। অর্থাৎ, সৎকাজে তোমরা সহযোগিতা কর।
জাতীয় মুক্তির সন্ধান দিতে গিয়ে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, অা'লীগ নৌকা নিয়ে অাসবে শেখ মুজিবের অাদর্শ বাস্তবায়ন করতে। বিএনপি ধানের শীষ নিয়ে জিয়াউর রহমানের অাদর্শ বাস্তবায়ন করতে। অার ইসলামী অান্দোলন বাংলাদেশ হাতপাখা নিয়ে অাসবে অাল্লাহ এবং অাল্লাহর রাসূলের সা. নীতি-অাদর্শ বাস্তবায়ন করতে।
এবার চিন্তা করুন, অাপনি কোন প্রতীকে ভোট দিবেন? ইসলামের পক্ষে রায় না দিলে ময়দানে মহাশরে আপনি খেয়ানতকারী হিসেবেই মাওলার দরবারে উত্থিত হবেন।
‘আগামী নির্বাচনে ইসলাম বিরোধী শক্তি ও ইসলামী শক্তির লড়াই হবে’