নেছার আহমেদ: প্রতিটি ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি বা মেশিনই গরম হয়। যেমন- গাড়ি, কম্পিউটার ইত্যাদি সব কিছুই গরম হওয়া থেকে বিরত নয়। গাড়ি ঠাণ্ডা রাখতে পানি ঢালা হয়, কম্পিউটার ঠাণ্ডা রাখতে ফ্যান ব্যবহার করা হয়।
স্বাভাবিক ভাবে স্মার্টফোন একটি ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র হওয়ার কারণে এটি গরম হয়। তবে অনেকের কাছেই অজানা ঠিক কী কারণে মোবাইল অল্প সময়ে গরম হয়ে যায় এবং এর থেকে বাঁচতে কী করণীয়? আসুন জেনে রাখি বিষয়গুলো।
প্রসেসর: স্মার্টফোন গরম হওয়ার জন্য প্রথম যে দায়ী তা হলো প্রসেসর। প্রসেসর আপনার ফোন এর প্রধান অঙ্গ সরূপ। যেটি আপনার ফোনের প্রতিটি কাজ করে থাকে। আপনি ফোন ব্যবহার করেন আর নাই করেন প্রসেসর কিন্তু সবসময় চলতে থাকে এবং তার কাজ করতে থাকে।
এই প্রসেসর নির্মাণ করা হয় অর্ধপরিবাহী পদার্থ দিয়ে এবং এর ভেতর অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইলেকট্রন থাকে। যখন প্রসেসর তার কাজ করে তখন এই ইলেকট্রনগুলো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করে (সহজ ভাষায়)।
এই দৌড়াদৌড়ি করার সময় ইলেকট্রন গুলো নিজেদের ভেতর সংঘর্ষ ঘটায় এবং তাপ উৎপাদন করে। অর্থাৎ আপনার প্রসেসর যত বেশি কাজ করে তাপ ও ততো বেশি উৎপাদন হয়।
অত্যাধিক লোড: অত্যাধিক লোডের ফলে আপনার ফোনটি দ্রুত এবং বেশি গরম হতে পারে। স্বাভাবিক কাজ যেমন কথা বলা, এসএমএস সেন্ড করার মত ছোট কাজে কম গরম হবে।
কিন্তু আপনি যখন অনেকগুলো কাজ এক সাথে করবেন বা কোনো বড় কাজ করবেন তখন আপনার ফোনটি অত্যাধিক লোড এর সম্মুখিন হবে। অত্যাধিক গরম হবে।
ব্যাটারি: স্মার্টফোনগুলো দিনদিন চিকন হয়েই চলছে। কিন্তু ব্যাটারি প্রযুক্তিতে তেমন একটা বিশেষ উন্নতি আনা হচ্ছে না। তারপর ফোনটি অনেক চিকন হওয়ার কারণে যন্ত্রপাতিগুলোর একে অপরের মধ্যে খুব বেশি দূরত্ব থাকে না। ব্যাটারি চার্জ বা ডিসচার্জ হওয়ার সময় কম বেশি গরম হয়েই থাকে।
আর যন্ত্রপাতিগুলোর একে অপরের মধ্যে খুব বেশি দূরত্ব না থাকার ফলে এই ব্যাটারির গরম সব দিকে ছড়িয়ে পরে এবং আপনার স্মার্টফোন অত্যাধিক গরম হয়ে পরে।
পরিবেষ্টিত তাপমাত্রা: স্মার্টফোন অত্যাধিক গরম, হওয়ার আরেকটি বড় কারণ কিন্তু পরিবেষ্টিত তাপমাত্রা হতে পারে। সাধারণভাবে গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশের তাপমাত্রা ৩৫-৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়ে যায়। এই পরিবেশে আপনি ঘরে বসে থাকলেও আপনার আশেপাশের তাপমাত্রা থাকে প্রায় ৩৫-৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আর এই তাপমাত্রার ভেতর আপনি স্মার্টফোন ব্যবহার করলে এটি আরো দ্রুত গরম হয়ে পরবে।
দুর্বল নেটওয়ার্ক সিগনাল: মনে করুন আপনি এমন এক জায়গায় আছেন, যেখানে নেটওয়ার্ক সিগনাল খুব দুর্বল। অথবা আপনার ওয়াইফাই সিগনাল অনেক কষ্টে আপনার স্মার্টফোন অবধি আসছে। এই অবস্থায় আপনার স্মার্টফোন এ বেশি চার্জ খরচ হয়।
দুর্বল নেটওয়ার্ক সিগনাল পাওয়ার জন্য আপনার ফোনটি অ্যান্টেনাতে বেশি পাওয়ার প্রয়োগ করে, যাতে ফোনটি ভালো সিগনাল ধরতে পারে। এতে স্মার্টফোনটির প্রসেসরকে অনেক বেশি কাজ করতে হয় এবং স্মার্টফোন অত্যাধিক গরম হয়ে পরে।
কতটা গরম হওয়া স্বাভাবিক এবং কতটা গরম হওয়া অস্বাভাবিক
এখন চলুন কথা বলি স্মার্টফোন স্বাভাবিক এবং অস্বাভাবিক গরম হওয়া নিয়ে। স্বাভাবিক অবস্থায় কাজ করতে করতে আপনার স্মার্টফোনটি ৩৫-৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত গরম হতে পারে। আর বিশ্বাস করুন এটা শুধু আপনার ফোনের ক্ষেত্রে না, বরং সবার ফোনই গরম হয়।
আপনার ফোনটি কম দামী বলেই যে বেশি গরম হচ্ছে, তা কিন্তু মতেও ঠিক নয়। স্যামসাঙ বলুন আর অ্যাপেল, সব ফোনই কিন্তু গরম হয়। তবে হাঁ, আপনি যদি লক্ষ্য করে দেখেন যে আপনার ফোনটি সবসময়ই ৩৫-৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত গরম থাকছে।
এমন কি যখন আপনার ফোনটি স্ট্যান্ড-বাই মোড এ থাকে তখনও, তবে আপনার ফোন এ সমস্যা আছে।
স্মার্টফোন অত্যাধিক গরম হওয়াতে কি কি অসুবিধা হতে পারে?
কর্মক্ষমতা হ্রাস পাওয়া: স্মার্টফোন অত্যাধিক গরম হওয়াতে আপনার ফোন এর কর্মক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে।
অত্যাধিক গরম হওয়া থেকে স্মার্টফোনকে কীভাবে রক্ষা করবেন
স্মার্টফোনে বেশি কাজ করা যাবে না বা বেশি গেম খেলা যাবে না, আসলে ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। অত্যাধিক গরম হওয়া থেকে স্মার্টফোনকে বাঁচাতে চাইলে আপনার ফোন এর সফটওয়্যার গুলোকে আপডেট রাখুন।
অনেক সময় ফোন এর সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার সমকক্ষতা রাখতে বার্থ হয়। সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
নিয়মিত অনুসন্ধান করে দেখুন যে কোন কোন অ্যাপস ব্যাকগ্রাউন্ড এ বেশি জায়গা নিচ্ছে। সে অ্যাপসগুলো সনাক্ত করে অস্থায়ী ভাবে বন্ধ করে রাখুন।
মোবাইলের প্যাটার্ন লক ভুলে গেলে খোলার উপায়