নেছারুদ্দীন কাসেমী
ভারত উপমহাদেশের মুসলমানের মাঝে ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন ও আকিদাগত পরিশুদ্ধি রক্ষার লড়াইয়ে যারা অতুলনীয় অবদান রেখে গেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন সায়্যিদ আতাউল্লাহ শাহ বুখারী রহ. (১৮৯২-১৯৬১খিঃ)।
মির্জা গোলাম আহমাদ রচিত কাদিয়ানি মতবাদের ভয়ংকর ফিৎনা থেকে মুসলমানদের রক্ষা করার জন্য যে সকল মনীষী প্রাণপণ আন্দোলন করে গেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন হলেন আমীরে শরিয়ত আতাউল্লাহ শাহ বুখারী রহ.।
অনেক দিন আগ থেকেই ইউটিউব সহ বেশ কিছু সামাজিক সাইটে ওনার প্রতি সম্বন্ধ করা একটি খুৎবাহর ভিডিও পাওয়া যায়। খুৎবাটির গাঁথুনি যেমন চমৎকার তেমনি শ্রুতিমধুরও বটে। ছাত্রদের মাঝে এটা মুখস্থ করার বেশ প্রবনতা দেখা যায়। কেউ কেউ এটা মুখস্থ করে জুমা'র খুৎবায় ও প্রদান করেন।
তবে খুৎবাটির বক্তব্যে এমন বিষয়ের সংমিশ্রণ রয়েছে যা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সর্বসম্মত আকিদা পরিপন্থী এবং নবী রাসূল ও সাহাবায়ে কেরামের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশের শামিল।
উদাহরণ স্বরূপ এখানে একাংশের বক্তব্য ও তার অসারতা তুলে ধরা হলো-
তাতে বলা হয়েছে
او يتبرك بغيره من نبى وولى وتقى ونقى ونسيم وحسين وجميل وصغير وكبير فعليه الخسران والوبال
অনুবাদ: অথবা যে ব্যক্তি বরকত অর্জন করবে আল্লাহ ছাড়া কোন নবী, ওলী, বুযুর্গ, মুত্তাকী, পরহেযগার, উত্তম, অনুপম, ছোট কিংবা বড় কারো মাধ্যমে তার জন্য রয়েছে ধংস ও কঠিন শাস্তি।অথচ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা এর সম্পূর্ণ বিপরীত।
কারণ সাহাবায়ে কেরাম রা. থেকে রাসূল সা. এর ব্যবহৃত বস্তু দিয়ে তাবাররুক হাসিল করার অসংখ্য ঘটনা হাদিসে বর্ণীত হয়েছে।
যেমন বুখারী শরীফের এক হাদিসে এসেছে-
وَقَالَ أَبُو مُوسَى: دَعَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقَدَحٍ فِيهِ مَاءٌ، فَغَسَلَ يَدَيْهِ وَوَجْهَهُ فِيهِ، وَمَجَّ فِيهِ، ثُمَّ قَالَ لَهُمَا: «اشْرَبَا مِنْهُ، وَأَفْرِغَا عَلَى وُجُوهِكُمَا وَنُحُورِكُمَا
অনুবাদ: রাসূল সা. একবার পানির পাত্র চাইলেন। তারপর ঐ পাত্রে স্বীয় হাত মুবারকও চেহারা মুবারক ধৌত করলেন। সেই সাথে তাতে কুলি করলেন। তারপর সেখানে উপস্থিত দুইজন সাহাবীকে বললেন, এটাকে পান করে নাও, আর নিজের চেহারা এবং ঘাড়ে প্রবাহিত কর। {বুখারী শরীফ-১/৯৩, হাদীস নং-১৮৮, ১৮৫}
খুৎবাহর এ অংশ থেকে পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে এটি আতাউল্লাহ শাহ বুখারীর খুৎবাহ হতে পারে না।
পাকিস্তানের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া বিন্নুরী টাউন করাচীর ইফতা বিভাগ থেকে খুৎবাটি শাহ সাহেবের প্রতি সম্বোধন করাকে প্রত্যাখ্যান করে একটি ফতোয়া প্রকাশ করা হয়।
সেখানে বলা হয়েছে এটির সম্বোধন শাহ বুখারীর দিকে করাটা ভুল ও অন্যায়। বরং আমাদের জানা মতে এটা যার প্রতি সম্পৃক্ত করা হয় তিনি একজন বিতর্কিত ব্যক্তি। তিনি হলেন কাদিয়ানি মতাদর্শী আহমাদ সাঈদ চাতরোরী।
জুমহুর ওলামায়ে কেরাম ও মুফতিয়ানে কেরামের মতে সে পথভ্রষ্ট। সে তার এই খুৎবায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এমন কিছু বাক্য সংযোজন করেছে যা স্পষ্ট ভ্রষ্টতা।
ফতোয়াটি পরবর্তীতে পাকিস্তানের বিশিষ্ট আলেম মাওলানা ইলিয়াস গুম্মানের দিক নির্দেশনায় আহনাফ মিডিয়াসহ বেশ কিছু ব্লগ ও সাইডে প্রকাশ করা হয়।
এছাড়াও দারুল উলূম দেওবন্দের শাইখুল হাদিস ও সদরুল মুদার্রিসীন মুফতী সাঈদ আহমদ পালনপুরী একদিন বুখারি শরীফের দরসে বলেছেন এই খুৎবায় আকিদাগত চরম বিপর্যয় ঘটেছে। এটা কিছুতেই শাহ রহ. এর হতে পারে না।
বিজ্ঞ পাঠক মহলের কাছে বিষয়টি লক্ষ রেখে এটা পাঠ ও প্রচার প্রসার করা থেকে বিরত থাকার বিনীত অনুরোধ রইলো।
আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের আকিদা পরিশুদ্ধ করে দেন এবং বাতিলের সকল কু-চক্রান্ত থেকে রক্ষা করেন ৷
আহনাফ মিডিয়া প্রকাশিত বিন্নুরী টাউন করাচীর পূর্ণ ফতোয়ার কপি
লেখক: শিক্ষার্থী, উচ্চতর ইসলামী গবেষণা অনুষদ হায়দরাবাদ, ইন্ডিয়া।