বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ। আগে যে সময়টুকুতে বিভিন্ন সাহিত্যের আবেগে ভেসে যেত মানুষ, সে সময়টুকু এখন দ্রুতবেগে কেটে যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে। শুধু দ্রুতবেগেই নয়, দৈনন্দিন জীবনের বড় একটা সময় হারিয়ে যাচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে, অন্যের জীবনযাপন দেখতে দেখতে। অথচ এক বছরে যে সময়টুক সামাজিক মাধ্যমে বা টেলিভিশনে অনুষ্ঠান দেখে কাটানো হয়, সে সময়ে পড়া যেত প্রায় এক হাজার বই। ব্যবস্থাপনা সংস্থা মিডিয়াকিক্স-এর সাম্প্রতিক একটি গবেষণার বরাত দিয়ে এমনটাই জানিয়েছে ভ্রমণবিষয়ক গণমাধ্যম ট্রাভেল লেজার।
গবেষণাটিতে জানা যায়, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুক মেসেঞ্জারের ব্যবহারকারীরা প্রতিদিন গড়ে ৫০ মিনিট করে সময় ব্যয় করে এগুলোর পেছনে। অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম, যেমন—স্ন্যাপচ্যাট, টুইটারে গড়ে ২৫ মিনিট করে ব্যয় করেন ব্যবহারকারীরা। অন্যদিকে, ইউটিউবের গান ব্যবহারকারীর দৈনন্দিন জীবন থেকে গড়ে ৪০ মিনিট করে কেড়ে নিচ্ছে। সব মিলিয়ে গড়ে একটি মানুষ তার পুরো জীবনে প্রায় পাঁচ বছর চার মাস বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ব্যয় করে।
অনলাইন গণমাধ্যম ‘বেটার হিউম্যানস’-এর প্রদায়ক চার্লস চু’য়ের মতে, এতটুকু সময়ে আপনি প্রচুর বই পড়তে পারবেন। অপর একটি গণমাধ্যম ‘কোয়ার্টজ’-এ চু লিখেন, এক বছরে তিনি প্রায় ২০০টি বই পড়েছেন। এ জন্য তাঁকে খুব বেশি কষ্ট করতে হয়নি। শুধু তিনি সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার কিছুটা কমিয়ে এনেছেন। শুধু মুখেই এ কথা বলে ক্ষান্ত হননি চার্লস চু। রীতিমতো অঙ্ক কষে প্রমাণ করেছেন নিজের কথার।
চু অঙ্ক কষে বের করেন, একজন মার্কিন নাগরিক প্রতি মিনিটে ২০০-৪০০ শব্দ পড়তে পারেন। ধরে নেওয়া যাক একজন পাঠক প্রতি মিনিটে পড়তে পারেন ৪০০ শব্দ। আর সাধারণ প্রবন্ধের বইগুলো হয় গড়ে ৫০ হাজার শব্দের। চু যতগুলো বই পড়তে চেয়েছিলেন, সেগুলোর সঙ্গে ৪০০ গুণ দেন, এরপর ভাগ দেন ৬০ মিনিট দিয়ে। এরপর দেখা যায় ২০০ বই পড়তে সময় লাগবে ৪১৭ ঘণ্টা।
চু’য়ের অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে, একজন মানুষ প্রতিবছর ৬০৮ ঘণ্টা সামাজিক মাধ্যমে এবং ১,৬৪২ ঘণ্টা টেলিভিশন দেখে কাটায়। যোগ করলে যা দাঁড়ায় ২২৫০ ঘণ্টায়। চু’য়ের হিসাব অনুযায়ী ২২৫০ ঘণ্টায় একজন মার্কিন পাঠক প্রায় ১০০০টি বই পড়তে পারবে, প্রতিবছর।
কোয়ার্টজে চু লিখেছেন, ‘এটি আসলে কঠিন কিছু নয়। আমাদের বই পড়ার যথেষ্ট সময় রয়েছে। এ জন্য আমাদের অবসর সময়গুলোতে টুইটারে তারকা এবং টিভিতে ‘ডেসপারেট হাউস ওয়াইভস’ না দেখে বই পড়া উচিত।’ এ ছাড়া বই পড়ার জন্য একটি নীরব ও শান্তিপূর্ণ জায়গা খোঁজার পরামর্শও দেন চু। সূত্র: এনটিভি