শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫ ।। ২৮ চৈত্র ১৪৩১ ।। ১৩ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
নিজেকে ইমাম মাহদী দাবি করা মাদরাসা শিক্ষক কারাগারে হারামাইনে আজ জুমার নামাজে ইমামতি করবেন যাঁরা ‘মার্চ ফর গাজা’য় অংশগ্রহণকারীদের জন্য জরুরি ৫ নির্দেশনা তালিবুল ইলমের আবশ্যকীয় পাঁচটি কাজ পাকিস্তানের সব সমস্যার পেছনে ইহুদি ষড়যন্ত্র থাকে: মাওলানা ফজলুর রহমান বাড়িতে বাবার লাশ রেখে এসএসসি পরীক্ষা দিল নাহিদ মানবতার জন্য আপনিও আসুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে: শায়খ আহমাদুল্লাহ ইসরায়েলকে প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ দরকার: বিএনপি মাদরাসাছাত্রদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে কাজ করছে এনসিপি : নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী মুসলিম রাষ্ট্রের ওপর এখন সশস্ত্র ল’ড়াই ফরজ: মুফতি তাকি উসমানি

সেবার অাড়ালে যা হচ্ছে হাসপাতালে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

অাশিকুল ইসলাম খান
আওয়ার ইসলাম

হাসপাতাল বলতেই অামরা বুঝি মানবতার সেবায় সদা উন্মুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান। তদ্রুপ ডাক্তার শব্দটা শোনা মাত্রই চোখের সামনে ভেসে উঠে সাদা এপ্রোন পরিহিত কর্মব্যস্ত নিবেদিত প্রাণ। যাদের উপর ভরসা করে সস্থির নিঃশ্বাস ফেলে একজন রোগীর অভিভাবক। যাদের সেবায় ফুটে উঠে এতটি পরিবারের মুখে প্রশান্তির হাসি।

যদের মানুষ সর্বদায় দেখে শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে। যারা তাদের নিজস্ব পরিবার পরিজন থাকার পরও অানন্দঘন মুহূর্তেও একজন মুমুর্ষ রোগীর সংবাদ পেয়ে সমস্ত অানন্দ বিসর্জন দিয়ে ছুটে অাসে হাসপাতালে।

এটা এমনি একটা পেশা যা যতটাই না নিঃস্বার্থ ততটাই পবিত্র। কিন্তু কিছু অসাধু চক্র এবং কিছু সার্থান্বেষীর কারণে ক্রমান্বয়ে মানুষ অাস্থা হারিয়ে ফেলছে ডাক্তারদের উপর থেকে। যে হাসপাতাল, ডাক্তার একটা সময় ছিল শান্তির মূর্ত প্রতীক। কালক্রমে তা পরিণত হচ্ছে জন সাধারণের ত্রাশ রূপে।

মানুষ এক সময় যদের স্মরণ করতো শ্রদ্ধার সাথে এখন তাদের দিকে তাকায় ঘৃনা ভরে। কালের অাবর্তে যেমনটা বাড়ছে লোক সংখ্যা ঠিক তেমনি বাড়ছে রোগ ব্যাধি। অার এর সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে স্বার্থান্বেষী ডাক্তারদের অবহেলা। যে অবহেলায় জর্জরিত অাজ প্রায় প্রতিটি হাসপাতালের রোগীরা।

কেবল মাত্র বেসরকারি ব্যক্তি মালিকানাধীন কিছু বিলাস বহুল হাসপাতালে রোগীরা যথাযথ সেবা পাচ্ছে তবে সেটাও টাকার দাপটে। যেখানে চিকিৎসার ব্যায় ভার বহন করার মত সচ্ছলতা নেই অনেকেরই।

বাংলাদেশের নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও অধিকিংশ মধ্যবিত্তের অাশ্রয়স্থল হলো সরকারি হাসপাতাল। যার জন্য সরকার প্রতি বছরই প্রায় কোটি কোটি টাকা বাজেট করেন এবং মন্ত্রণালয় থেকে তার অনুমোদনও দেখানো হয়। কিন্তু সাধারণ জনগন তা থেকে কতটুকু উপকৃত হয়?

এসব বিষয় নিয়ে সরেজমিনে পর্যবেক্ষন করতে কথা বলেছিলাম ময়মনসিংহ জেলার একটি সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জনৈক রোগীর অভিভাবকেরর সাথে। তিনি জানালেন, তার রোগী তিন দিন যাবৎ হাসপাতালে ভর্তি। কিন্তু এর মাঝে ডাক্তারের দেখা পেয়েছেন মাত্র একবার। বাকী সময় নার্সরাই দেখাশুনা করেছে। তাও অাবার তাদের কে না ডাকলে পাওয়া যায় না।

রোগীর ওষুধ খাওয়ানো সেবা যত্ন এমনকি স্যালাইন চলাকালীন দেখাশুনা সব নিজেদেরই করা লাগে। অার কোন সমস্যা হলে নার্সদের ডাকলে দু এক ডাকে তারা অাসে না বরং বারবার ডাকার পর যদিও বা অাসে এসেই শুরু করে ধমক।

তিনি অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে জানালেন, তিনদিন ভর্তি থাকার পরও যে ডাক্তারের দেখা মিললো মাত্র একবার সেই সরকারি ডাক্তার অাবার প্রতিদিনই শহরে উনার নিজস্ব চেম্বারে রোগী দেখছেন নিয়মিত। ফলে হাসপাতাল থেকে চেম্বারেই উনার রোগী বেশি।

এতো শুধু একটি মাত্র সরকারি হাসপাতালের একজন ভুক্তভোগীর কথা বাংলাদেশে এরূপ অারো হাজারো সরকরি হাসপাতালে রয়েছে লাখো ভুক্তভোগী।
সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি প্রাইভেট চিকিৎসাতেও ডাক্তারদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলছে। একজন রোগী পাঁচশ বা হাজার টাকা ভিজিট দিয়ে ডাক্তার দেখান তখন ডাক্তার মহোদয় অতীব যত্নের সাথে রোগ নির্ণয়ের নামে অযথা নানা রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা দিয়ে ভারী করে তুলেন চুক্তিবদ্ধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একাউন্ট।

সর্বশেষ ‘তেমন কিছু না’ রোগের তকমা দিয়ে এক গাদা বস্তা পঁচা বেনিফিট পাওয়া নিম্নশ্রেণি কোম্পানির ওষুধ লিখে দিয়ে রোগীকে রিক্ত হস্তে বিদায় দিয়ে ওষুধ কোম্পানি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে নিজের প্রাপ্য যথাযথ অাদায় করে নেন।

এ ব্যাপারে সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করতে কথা বললাম ফেনী জেলা শহরের একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের জনৈক রোগীর অভিভাকের সাথে তিনি বললেন, ছয়শ টাকা ডাক্তারের ভিজিট দিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর ডাক্তার মহোদয় সর্বসাকুল্যে মাত্র তিন মিনিট সময় দিলেন। এবং প্রায় ষোল প্রকার পরীক্ষা ও তিন মাসের ওষুধ দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন।

উক্ত রোগীকেই পরবর্তীেতত ঢাকায় দেখানো হলো এখানে ডাক্তার রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে মাত্র এক মাসের ওষুধ লিখে দিলেন কোন প্রকার পরীক্ষা ছাড়াই। পর সংবাদ হলো, রোগী এখন অনেকটাই সুস্থ। হর হামেশাই এধরনের নির্যাতনের স্বীকার রোগীরা।

এ সমস্ত বিষয় থেকে কিভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যায় এ সম্পর্কে জানতে কথা বলেছিলাম বিশিষ্ট অালেমে দ্বীন, মানবতার সেবায় সদা নিয়োজিত ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক, দাঈ মুফতী জহীরুল ইসলামের সাথে।

তিনি বললেন, এসব বিষয় থেকে রক্ষা পেতে হলে সর্ব প্রথম ডাক্তারদের মাঝে সেবার মন মানসিকতা তৈরি করতে হবে। সেই সাথে তিনি অারো কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেন যার দ্বারা এ সমস্যা থেকে সমাধান হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

এক. ডাক্তারি পড়ার খরচ অারো কমিয়ে দিতে হবে।

দুই. প্রাইভেট মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তির ব্যাপারে অারো কঠোর হতে হবে এবং প্রাইভেট মেডাকেল কলেজ থেকে লেখাপড়া শেষ করে বাধ্যতামূলকভাবে কোন না কোন সরকরি হাসপাতালে ইন্টার্নি করতে হবে।

তিন. প্রতিজন রোগীর জন্য ডাক্তার কর্তৃক নির্দিষ্ট সময় বরাদ্ধ থাকতে হবে এবং একজন ডাক্তার দৈনিক কতজন রোগী দেখতে পারবে তা অাইনানুপাতে নির্ধারিত করে দিতে হবে।

চার. ওষুধ কোম্পানি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ডাক্তারদের দেওয়া পারসেন্টিসের উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে।

পাঁচ. সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা শতভাগ নিশ্চিত করতে প্রশাসন কর্তৃক অাইন প্রনোয়ন করত এর বাস্তবায়ন ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সব ডাক্তারকে সরকার কর্তৃক প্রণীত কানুনের অাওতাধীন অানতে হবে।

ছয়. ডাক্তারের যোগ্যতা অনুযায়ী সরকার কর্তৃক ভিজিট নির্ধারণ করে দিতে হবে।

এ বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা হলে সাধারণ মানুষ যথাযথ সেবা পেতে পারেন বলে তিনি অাশা ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশের বিপদে সর্বোচ্চ দানকারী যে ব্যক্তি


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ