আওয়ার ইসলাম : শনিবার রাতে কলকাতা থেকে ফিরেছেন অপু বিশ্বাস। ফিরেই জানালেন তিনি আর চলচ্চিত্রে অভিনয় করবেন না।
কারণ হিসেবে চিকিৎসকের পরামর্শের কথা জনালেন এই অভিনেত্রী। তিনি জানান, এখন থেকে নামাজ-রোজা নিয়মিত আদায় করবেন, শিগগিরই ওমরাহ হজ পালন করতে যাবেন এবং আগামী বছর হজে যাবেন।
অপুর কাছে প্রশ্ন ছিল কী এমন সমস্যা হয়েছিল যে, চিকিৎসা করাতে দ্রুত তাকে দেশের বাইরে যেতে হলো? এর জবাবে বিস্তারিত জানান তিনি। তার কথায় গত বৃহস্পতিবার রাত প্রায় তিনটার দিকে বাচ্চাকে ফিডার খাওয়ানোর পর তিনি ওয়াশরুমে যান। সেখানে বাথটবের সঙ্গে পা আটকে উল্টে পড়ে গিয়ে পেটে মারাত্মক আঘাত পান।
বাথটবের কোনা গিয়ে লাগে সিজারের স্থানে। সঙ্গে প্রচণ্ড ব্যথা হতে থাকে পেটে এবং প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তপাত শুরু হয়। শ্বাস-প্রশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল। পেটের ব্যথা ক্রমেই বাড়তে থাকায় ভোর রাত ৪টার দিকে অপু তার ড্রাইভার সাইফকে ফোন দিয়ে ডেকে আনেন এবং একটি বেসরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যান।
সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে জানান, সেই মুহূর্তে সেখানে কোনো গাইনোলোজির চিকিৎসক নেই। উপায়ন্তর না দেখে অপু তখন ভারতের শিলিগুড়িতে থাকা তার বড় বোনকে ফোন দিয়ে সব জানান। বড় বোনকে অনুরোধ করেন তাদের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. বিশ্বজিৎ, যিনি অপুর বাচ্চা হওয়ার সময় সিজার করেন তার সঙ্গে যোগাযোগ করে যেন পরামর্শ নেন।
বড় বোন দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ডাক্তার বলেন, আমি তো তাকে না দেখে আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে কিছু বলতে পারব না। যদি সম্ভব হয় দ্রুত তাকে আনানোর ব্যবস্থা করুন।
অপু বলেন, ভাগ্যিস আমার ভিসা আগে থেকেই করা ছিল। সকাল ৭টার দিকে এয়ারপোর্টে রওয়ানা দেই। দিদি বলেছিলেন, শিলিগুড়িতে খুব ঠাণ্ডা পড়ছে, তাই জয়কে না আনলেই ভালো হয়। তাই একাই রওনা দেই। আমার সঙ্গে প্রযোজক মামুনের যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার ব্যক্তিগত সমস্যা থাকায় তিনি যেতে পারেননি।
এয়ারপোর্টে গিয়ে তাত্ক্ষণিক কোনো টিকিট পেলাম না। রিজেন্ট এয়ারওয়েজে সাড়ে দশটার একটি টিকিট পেয়ে রওনা দিলাম। কলকাতা পৌঁছে ইন্ডিগো এয়ারওয়েজে বিকাল ২টা ১০ মিনিটে শিলিগুড়ি গিয়ে পৌঁছলাম। ৩টার দিকে ডাক্তার বিশ্বজিতের চেম্বারে যাই। তিনি আলট্রাসোনোগ্রাম এবং অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানালেন তেমন জটিল কিছু নয়। সিজারের জায়গায় আঘাত লাগায় ইন্টারনাল মাইনর সমস্যা হয়েছে।
তবে এখন থেকে ভারী কোনো কাজ আর শরীরে ঝাঁকুনি লাগে এমন কিছু যেন না করি। জিমের সময় আমি ওয়েট লিফটিং করতাম। সেটি করতেও তিনি নিষেধ করে দেন। এমনকি চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গেলে নাচ বা ছুটাছোটির দৃশ্যে কাজ করতে হয়। তাও যেন না করি। হালকা কাজ করা যেতে পারে। এ কারণে চলচ্চিত্রের কাজ থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগের যে কয়টা ছবির সামান্য কাজ বাকি আছে সেগুলো শুধু শেষ করে দেব।
অপু জানান, বিকাল ৫টার দিকে ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হন তিনি। এরপর ঢাকা ফিরতে গিয়ে বিমানের ওইদিনের কোনো টিকিট পাননি। তখন তার দিদি বললেন তাড়াহুড়া না করে এক দিন এখানে অবজারভেশনে থাক। পরদিন বিকাল সাড়ে ৪টার এয়ার ইন্ডিয়ায় চড়ে রাত সাড়ে ৯টায় শিলিগুড়ি থেকে কলকাতা পৌঁছেন। এরপর রাতে ঢাকা এসে পৌঁছান তিনি।
অপু জানান, তিনি দরজায় তালা দিয়ে যাননি। তার সহকারী শেলীকে বলেছেন, কেউ এলে যেন দরজা না খুলে তার কাছে চাবি নেই বলে দেয়। অপুর কথায় শাকিব যদি দেশে এসেছেন জানতেন তাহলে বাচ্চাটা তার কাছে রেখে যেতেন। শাকিবের মা, বাবা, বোন কখনই অপু বা জয়ের খোঁজখবর নেন না, এমনকি অপুর বাসায়ও আসেন না। তাই তাদের কাছে জয়কে তিনি রেখে যেতে পারেননি।
জয়ের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সে জন্য সহকারী শেলীর সঙ্গে আরেকটি মেয়ে রেখে যান। শেলীর কাছে চাবি দিয়ে যান এবং তার আরেক সহকারী সজল ও ড্রাইভার সাইফকে তিনি ফিরে না আসা পর্যন্ত বাসার নিচে সার্বক্ষণিক অবস্থান করার নির্দেশ দিয়ে যান।
শুক্রবার রাতে যখন অপুর বাসায় শাকিব যান তখন দরজার পিপ হোল দিয়ে শেলী দেখেন শাকিবের সঙ্গে তার বডিগার্ড হারুণ ছাড়াও আরও কয়েকজন লোক ছিলেন। যাদের তিনি চিনেন না। তাই ভয়ে শাকিবকে তিনি জানান অপু দরজায় তালা দিয়ে চাবি নিয়ে গেছেন।
অপু বলেন, আমি এখন আমাদের পুত্র জয়ের উন্নত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শাকিবের সঙ্গে সংসার করতে চাই। ডাক্তার যেহেতু বারণ করে দিয়েছেন তাই আর অভিনয় নয়, নামাজ, রোজা, হজ নিয়মিত আদায় করে স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে সংসার করব, এটিই এখন আমার একমাত্র ইচ্ছা।