আতিক ফারুক
তরুণ লেখক
বাংলাদেশের কলেজ ভার্সিটিতে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নতুন কিছু নয়। এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। পরীক্ষা মানেই প্রশ্নপত্র ফাঁস; এটিই যেন এখন স্বাভাবিক ঘটনা।
প্রশ্নপত্র ফাঁস এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায়ও এখন তা ঘটতে শুরু করেছে। পাবলিক পরীক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের নিয়োগ পরীক্ষায় একের পর এক ঘটে চলেছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা।
২০০৯ সালের পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যে পরিমাণ প্রশ্নপত্র ফাঁসের যে ঘটনা ঘটেছে তা বাংলাদেশের ইতিহাসে অতীতে আর কখনো ঘটেনি ।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে গত ৪ বছরে বিভিন্ন পরীক্ষায় মোট ৬৩টি বিষয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে।
অপর একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায় একই সময়ে ৩০টিরও বেশি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ও অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত কয়েক বছরে প্রায় সব পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের রেকর্ড সম্পন্ন হয়েছে।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, চাকরি প্রার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যেও দীর্ঘদিন ধরে বিরাজ করছে তীব্র ক্ষোভ এবং হতাশা। বিভিন্ন সময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা প্রমাণিত হলেও বাতিল করা হয়নি পরীক্ষা।
ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সাথে মূল প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া গেলেও অনেক সময় কর্তৃপক্ষ প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। কখনো কখনো সাজেশন বলেও বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ঘিরে গড়ে উঠছে জালিয়াতচক্র।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ চক্র প্রশ্ন ফাঁসসহ উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে পরীক্ষার হলে বাইরে থেকে উত্তর বলে দেয়ার কৌশল রপ্ত করে ভর্তি ইচ্ছুকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে বড় অঙ্কের অর্থ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এ চক্রের অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে ইতোমধ্যে।
২০১৩ এবং ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে এ চক্র প্রযুক্তির সাহায্যে জালিয়াতির আশ্রয় নেয়। ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে গত ছয় বছর ।
১৯৭৯ সালে এসএসসি পরীায় সর্বপ্রথম প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটে। ১৯৭৯ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ২৯ বছরে ৫৫টি পরীার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়।
আর গত ছয় বছরে ৩০টিরও বেশি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস, মামলা ও তদন্ত বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গত ছয় বছরে রাজধানীতে ৭০টি মামলা হয়েছে।
তবে এসব মামলায় শাস্তি পাওয়ার তেমন নজির নেই। অনেকে প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়েছে। অনেক মামলা আর সচল নেই।
প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় অনেক তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্তে অনেক ঘটনা প্রমাণ হয়েছে। তদন্তে প্রশ্ন ফাঁস বন্ধে অনেক সুপারিশও করা হয়েছে। কিন্তু তারও তেমন কোনো বাস্তবায়ন নেই বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রকাশিত একটি তথ্যে দেখা যায়, গত ৩৫ বছরে অন্তত ৭৮টি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও তদন্ত কমিটি হয়েছে ২৩টিতে। আর বাতিল ও স্থগিতের ঘটনা ঘটেছে ১২টির মতো পরীক্ষায় ।
দুই.
বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই এখন প্রশ্নপত্র ফাঁস একদম সাধারণ বিষয় হয়ে গেছে। তবে, সকল প্রতিষ্ঠান থেকে একটিমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমন নির্লজ্জ কার্যক্রম থেকে একেবারেই নির্লিপ্ত আর নির্দোষ।
সেটি হলো ‘কওমি মাদরাসা’ এই কওমি মাদরাসা শিক্ষার শুরু লগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত মাসিক পরীক্ষা থেকে শুরু করে বেফাকুল মাদারিস বা ইত্তেফাকুল মাদারিসে বোর্ড পরীক্ষাগুলোতে কখনো প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে কেউ কখনো কোন দৃষ্টান্ত দেখাতে পারবে না।
বামপন্থী মিডিয়া আর কওমি বিদ্বেষীরা কখনো প্রমাণ করতে পারেনি কওমি মাদরাসায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে! যারা সর্বদা উন্মুখ হয়ে থাকে কওমির দোষ খোঁজার জন্য তারাও এসব বিষয়ে কখনো কোনো দৃষ্টান্ত পায় নি।
এর থেকে বোঝা যায় কওমি মাদরাসার ছাত্ররা নিজ মেধা আর নিরলস শ্রম আর প্রচেষ্টার মাধ্যমে যতটুকু পারে ততটুকু পরীক্ষায় খাতায় লিখে আসে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে কখনো কল্পনাও করতে পারে না।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তির অপব্যবহারকারী নয় কওমি ছাত্ররা। কারণ, তাদের শিক্ষা দেয়া হয় তুমি পৃথিবীতে মানুষকে ফাঁকি দিতে পারলেও আল্লাহ তোমাকে দেখছেন সর্বদা।
তিন.
এমন নাজুক পরিস্থিতিতে সরকার প্রশাসন আর স্কুল, কলেজ, ভার্সিটির সকল দায়িত্বশীলদের সচেতনতা প্রয়োজন।
সবার সম্মিলিত সচেতনতা আর সজাগ দৃষ্টিই পারে সুন্দর একটি দেশ এবং শিক্ষাকার্যক্রমকেও সুন্দরভাবে পরিচালিত করার।
সুশিক্ষায় জাতির মেরুদণ্ড। প্রশ্নপত্র ফাঁস করে কখনো সুন্দর আগামী গড়ার কল্পনা করা যেতে পারে না।
তাই আসুন! আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করি এবং নিজেরা এমন নির্লজ্জ কর্মকাণ্ড থেকে সচেতন থাকি।
আরএম