এইচ. এম. ময়নুল হক
এক সময় প্রিন্সিপাল বলতে একজনকেই বুঝানো হত তিনি সিলেট কাজির বাজার মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা হাবিবুর রহমান।
আজ অনেকের নামের আগে (প্রিন্সিপাল) উপাধি দেখা যায় কিন্তু হাবিবুর রহমানের মত প্রিন্সিপাল শব্দের আকর্ষণ আর নেই।
যাকে সিলেটের আলেম সমাজ (সিংহ পুরুষ) উপাধি দিয়ে ছিলেন, যার হুংকারে কেঁপে উঠত সিলেটের রাজপথ। তিনি ছিলেন তসলিমা নাসরিন বিরোধী আন্দলনের অগ্রনেতা। সেই সময় দুই মেরুর দুই বুযুর্গ (আল্লামা নূর উদ্দীন গহরপুরী রহ. ও আল্লামা আব্দুল লতিফ চৈধুরী ফুলতলী র.) এক মঞ্চে বসে ছিলেন।
আহা কি সুন্দর ছিল সেই দৃশ্য, এমন দৃশ্য কি আর দেখতে পাব? বিশেষ করে আরেক বুযুর্গ আল্লামা আবদুল্লাহ হরিপুরী রহ. এর সঙ্গে উনার ছিল আধ্যাত্মিক সম্পর্ক। প্রিন্সিপালকে যখন বন্দি করা হয় তখন আবদুল্লাহ রহ. জৈন্তা থেকে গাড়ি বহর নিয়ে মিছিল সহকারে সিলেটে এসে প্রিন্সিপাল হাবিবকে মুক্ত করেছিলেন যা ইতিহাস হয়ে থাকবে চিরকাল।
একজন আলেমের প্রতি আরেকজন আলেমের কি আন্তরিক মহব্বত ছিল সেটা আর বলে বুঝাতে হবে না। আজ সেই মহব্বতের বড়ই অভাব। সরকারি মাদরাসায় পড়েও কওমি অঙ্গনে যার রয়েছে বিশাল অবদান।
আজ থেমে গেছে সে আওয়াজ। সিটি পয়েন্টে শোনা যায় না আর সেই হুংকার। কিন্তু কেন- শুধুই কি বার্ধক্যের কারণে? না। এই হুংকার থামানোর পেছনে রয়েছে এক বিশাল ষড়যন্ত্র। আর সেই ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে গেলেন আমাদের প্রিন্সিপাল।
আওয়ামী লীগের নৌকাকে নুহ আ. এর কিস্তিতে রুপান্ত্রিত করা হলো, তাদের হরতালের সমর্থনে পাঞ্জাবি পরা কিছু লোক যখন রাস্তায় নেমে এলো তখনই শুরু হলো বিপত্তি। ইসলাম প্রিয় তৌহীদি জনতা নুহ আ. এর নব্য কিস্তিতে উঠতে রাজি হয়নি। তারা ছুটে গেলো অন্য দিকে।
যদিও শেষ পর্যন্ত ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে তৌহিদি জনতার মধ্যে ফিরে এলেন প্রিন্সিপাল হাবিব কিন্তু তথক্ষণে অনেক ক্ষতি হয় গেল।
সিলেটের ইসলাম প্রিয় জনতাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য হাল ধরলেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান জামেয়া মাদানিয়া আংগুরার দীর্ঘ দিনের নাজিমে তালিমাত (বর্তমান মহা পরিচালক) জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি, আজাদ দ্বীনি এদারায় তা’লিম বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাওলানা শায়খ জিয়া উদ্দিন।
আশায় বুক বাঁধলাম আমরা। এখনো সেই আশায় আছি। শায়খ জিয়া উদ্দিনের একটি বড় পরিচয় রয়েছে নাযিম সাহেব হিসেবে। অনেক মাদরাসা আছে নাযিম সাহেবও আছেন কিন্তু আংগুরার নাযিম সাহেবের মত (নাযিম) আজও পায়নি সিলেটবাসী।
শায়খ জিয়া উদ্দিন তার ইলমি জ্ঞান ও রাজনৈতিক বিচক্ষণতায় আজ আলেম সমাজের রাহবার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। তিনি যেমন মাদরাসা পরিচালনা করছেন ঠিক তেমনি আলেম সমাজের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।
যার সমাদর শুধু সিলেট কিংবা বাংলাদেশের আলেমদের মধ্যে নয় বরং ভারত ও পাকিস্তানের আলেমদের মধ্যেও রয়েছে। যতটুকু মনে পড়ে সিলেটের আলিয়া মাঠে দস্তারবন্দী সম্মেলনে আওলাদে রাসুল আল্লামা সায়্যিদ আরসাদ মাদানি বা পাকিস্তানের আল্লামা ফজলুর রহমান (দু জন থেকে এক জন) বয়ানের শুরুতে শায়খ জিয়া উদ্দিনের প্রশংসা করে ছিলেন।
এতেই বোঝা যায় শায়খ জিয়া উদ্দিনের যোগ্যতার পরিধি। এমন মহান ব্যক্তির কাছে আমরা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার আশা করতেই পারি।
‘নাযিম সাহেব ধরেছেন হাল
নিশান উড়াবেন প্রিন্সিপাল’