মাওলানা সাজ্জাদুল ইসলাম। একজন আলেম ও আইটি উদ্যোক্তা। জন্ম খুলনার খালিশপুরে। লেখাপড়া করেছেন দারুল মোকাররম মাদরাসায়। ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ছাত্র জীবন থেকেই আইটি খাতের প্রতি ছিলো তার বিশেষ দুর্বলতা।
মাওলানা সাজ্জাদুল ইসলাম ২০১১ সালে বন্ধুদের নিয়ে খুলনায় নিজ বাসায় খোলেন একটি আইটি সেন্টার। এরপর আর পিছে ফিরে দেখতে হয় নি তাকে। এখন খুলনার প্রথম কল সেন্টারের অন্যতম উদ্যোক্তা ও একজন গর্বিত অংশিদার তিনি।
মাওলানা সাজ্জাদুল ইসলাম স্বপ্ন দেখেন তিনি দেশের প্রথম সারির একজন আইটি উদ্যোক্তা হবেন। তিনি চান, দেশের আলেম সমাজও এগিয়ে আসুক অপার সম্ভাবনাময় এ ক্ষেত্রটিতে। তরুণ এই আলেম আইটি উদ্যোক্তার স্বপ্ন ও পরিকল্পনা আওয়ার ইসলাম পাঠকদের সামনে তুলে ধরেছেন আতাউর রহমান খসরু।
আওয়ার ইসলাম : আপনারা যে কল সেন্টারের বিজনেস করছেন। তার প্রক্রিয়াটি কি?
মাওলানা সাজ্জাদ : কল সেন্টারের মাধ্যমে আমরা বিদেশি বিভিন্ন পণ্য বিদেশিদের নিকট বিক্রি করি। যেমন আমরা আমেরিকান কিছু পণ্য আমেরিকানদের কাছে বিক্রি করছি। বিক্রি করলে আমরা একটি পারসেন্টিস পাই।
আওয়ার ইসলাম : কল সেন্টার ব্যবসার সঙ্গে এ দেশের মানুষ কতোটা পরিচিত?
মাওলানা সাজ্জাদ : কল সেন্টার ব্যবসার সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ খুব বেশি পরিচিত না। তবে বহির্বিশ্বে এ ব্যবসার ধারণা বেশ পুরাতন।ফিলিপাইনে কল সেন্টার তাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। ইন্ডিয়াতেও এ ব্যবহার ধারণা বেশ পুরাতন।
বাংলাদেশে সম্প্রতি কল সেন্টারের প্রসার হচ্ছে। তবে তা ঢাকা কেন্দ্রিক। খুলনাতে আমরাই প্রথম কল সেন্টার করেছি।
আওয়ার ইসলাম : কল সেন্টার ব্যবসার চিন্তা মাথায় কিভাবে আসলো?
মাওলানা সাজ্জাদ : বর্তমান যুগটা ডিজিটাল যুগ। আমরা দিন দিন প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে যাচ্ছি। সরকারও প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করছে। আমাদের দেশেও অনলাইন মার্কেটিংয়ের পরিধি বড় হচ্ছে। রকমারি, বিক্রয়.কম ইত্যাদি অনেকগুলো কোম্পানি হয়েছে। ফেসবুকের মাধ্যমেও অনলাইন মার্কেটিং চলছে। সুতরাং এ ব্যবসার একটি সম্ভাবনা রয়েছে।
আমাদের ধারণা বাংলাদেশেরও দ্রুততম সময়ে কল সেন্টার চালু হবে। মানুষ এখন খুব ব্যস্ত। তাই তারা সহজে কোনো কিছু হলে তা লুফে নেয়। মানুষ দেখছে একটা পণ্য কেনার জন্য তার সারা দিন বা দিনের বড় একটা অংশ নষ্ট হচ্ছে। এর বিপরীতে যদি তার কাছে একটি পণ্যের জন্য ফোন আসে তাহলে তারা অবশ্যই তা গ্রহণ করবে।
আওয়ার ইসলাম : কল সেন্টার ব্যবসার সুবিধাগুলো কি?
মাওলানা সাজ্জাদ : কল সেন্টারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো বিশ্বব্যাপী তার পরিধি। আমি বাংলাদেশে বসেও সারা বিশ্বে পণ্য বিক্রি করতে পারবো। যে কোনো পণ্য বিক্রি করা যায়। কোনো বাধা নিয়ম নেই। একটি পণ্যের চাহিদা কমলে অন্য পণ্য বিক্রি করা যায়।
তাছাড়া পণ্যের চাহিদা তো কমে না। মানুষ দিন দিন আয়েশী হচ্ছে। সুতরাং বেচাকেনা সব সময় থাকবে। এখন আমরা আমেরিকায় কাজ করছি। সেটা আরব বিশ্ব, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও ইউরোপ।
আওয়ার ইসলাম : দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে কল সেন্টারে ভূমিকা কেমন হতে পারে?
মাওলানা সাজ্জাদ : দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে কল সেন্টার বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে। দেশের অনেক উচ্চ শিক্ষিত যুবক কাজ পাচ্ছে না, কল সেন্টারের মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থান হতে পারে। একটি সফল কল সেন্টার তার কর্মীদের ৩৫-৪০ হাজার টাকা দিয়ে বেতন শুরু করতে পারে। ঢাকাতেও এমন কল সেন্টার আছে। দেশের বেকারত্বের অনেক বড় একটা অংশ এর মাধ্যমে দূর করা সম্ভব।
আওয়ার ইসলাম : বাংলাদেশে কল সেন্টার ব্যবসায় কোনো আইনি জটিলতা আছে?
মাওলানা সাজ্জাদ : না কোনো আইনি জটিলতা নেই। বরং সরকার আমাদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। ট্যাক্সসহ বিভিন্ন ধরনের ছাড় আছে।
আওয়ার ইসলাম : কল সেন্টারে কাজ করার জন্য একজন কর্মী কি কি বিষয়ে পারদর্শী হতে হয়?
মাওলানা সাজ্জাদ : আমাদের লেনদেন বহিঃবিশ্বের সঙ্গে তাই ইংরেজির বেসিক ভালো হলেই একজন কর্মী এখানে কাজ করতে পারবে। ছাত্র-ছাত্রীরাও কাজ করতে পারবে। আরবি ভাষায় দক্ষ মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে কাজ করতে পারবে।
আওয়ার ইসলাম : আলেমদের জন্য এ সেক্টরে সাফল্যের সম্ভাবনা কেমন?
মাওলানা সাজ্জাদ : আমাদের দেশের আলেম সমাজের উল্লেখযোগ্য অংশ আর্থিকভাবে স্বাভলম্বী নয়। অথচ আরবি ভাষায় তাদের দক্ষতা আছে। তারা তাদের ভাষার দক্ষতা কাজে লাগিয়ে এ ক্ষেত্রে ভালো পারফরমেন্স করতে পারবে। এ ব্যবসার সুবিধা হলো, এখানে যে কোনো সময় কাজ করা যায়। এখানে চব্বিশ ঘণ্টা কাজ হয়। তারা দীনের খেদমতের পাশাপাশি এখানে কিছু সময় বিনিয়োগ করে ভালো উপার্জন করতে পারেন।
আওয়ার ইসলাম : এ ব্যবসা নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
মাওলানা সাজ্জাদ : যেহেতু এ ব্যবসার পরিধি অনেক বিস্তৃত এবং কর্মী নিয়োগের সুযোগ অনেক বেশি তাই ধীরে ধীরে এ ব্যবসা আরও বিস্তৃত করতে চাই। বিশেষত একজন আলেম হিসেবে আমি অবশ্যই চাইবো মাদরাসা পড়ুয়ারা এখানে সম্পৃক্ত হোক।
আওয়ার ইসলাম : মাদরাসা পড়ুয়াদের এখানে সম্পৃক্ত করতে আপনার বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে?
মাওলানা সাজ্জাদ : আমরা খুব শীঘ্রই অ্যারাবিক কল সেন্টার খুলবো। সেখানে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। বিশেষত কওমি পড়ুয়াদের। কেননা তারা আরবি ভাষায় এগিয়ে।
মাদরাসা শিক্ষার্থীরা যেনো সহজে সম্পৃক্ত হতে পারে সেজন্য সংক্ষিপ্ত একটি ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থাও করা হবে। বিষয়টি আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে। যেমন, আমরা একটি ল্যাংগুয়েজ ক্লাব করবো। সেখানে আরবি ভাষার চর্চা হবে। যারা ভালো পারফর্ম করবে তাদেরকে নিয়োগ দেয়া হবে।
আওয়ার ইসলাম : মাদরাসা পড়ুয়ারা আইটি সেক্টরে কাজ করত চাইরে কি কি বাধা রয়েছে?
মাওলানা সাজ্জাদ : মৌলিক কোনো বাধা নেই। এখানে ভাষাগত দক্ষতাই মূল। সার্কিফিকেটের খুব একটা দরকার হয় না। কোনো ধরনের সার্টিফিকেট ছাড়াই তারা কেবল ভাষাগত দক্ষতা কাজে লাগিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে। যতো সময় দিবে, ততো দক্ষ হয়ে উঠবে, ততো বেশি আয় করবে।
আমি মনে করি, আইটি সেক্টর বা আউট সোর্সিং মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জন্য বিকল্প আয়ের উৎস হতে পারে।
আওয়ার ইসলাম : কর্ম ক্ষেত্র হিসেবে এখানে ঈমান, আমল ও সততার নিরাপত্তা কতোটুকু?
মাওলানা সাজ্জাদ : আমি কোন পণ্য বিক্রি করবো সেটা আমার ইচ্ছাধীন। আমি না চাইলে কেউ আমাকে জোর করতে পারবে না। আমি যদি কোনো হারাম পণ্য বিক্রি না করি তাহলেই তো হলো।
এখানে যাবতীয় লেনদেন আন্তর্জাতিক ও দেশীয় আইন মেনে করা হয়। সুতরাং অস্বচ্ছতা বা অসততার সুযোগ নেই।
তাছাড়া কখন কাজ করবেন তাও আপনার ইচ্ছাধীন। এমনকি ক্লাইন্টের সঙ্গে আমাদের সরাসরি দেখা বা কথাও হয় না। আমি অন্তত এখানে ইসলাম বিরোধী কিছু দেখি না।
হ্যা, ব্যক্তি সৎ না হলেও যে কোনো ভালো কাজের মধ্যেও খারাপ হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
আওয়ার ইসলাম : মাদরাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা আইটি সেক্টরে যারা আসতে চায়, তাদের ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কি?
মাওলানা সাজ্জাদ : মাদরাসা শিক্ষার্থীদের আমি স্বাগত জানাবো। বলবো, মুক্ত এ বিশ্বে আপনার জন্য অপার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে একটা পরামর্শ থাকবে আউট সোর্সিং বিষয়টি যেমন উন্মুক্ত তেমন ব্যাপক প্রতিযোগিতার। আপনার মেধা ও যোগ্যতা দিয়েই এখানে টিকে থাকতে হবে। যদি আপনার রুচি ও অভিরুচি ভিন্ন হয় তাহলে আপনি এখানে সফল হতে পারবেন না। তাই এ সেক্টরে আসার আগেই অবশ্যই নিচের সঙ্গে বোঝাপড়া করে নিবেন।