স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সাম্প্রতিক মিয়ানমার সফর উপলক্ষে একটি ‘যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশ করা হয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজে। বাংলাদেশের কোনও অনুমোদন ছাড়াই মিয়ানমার বৃহস্পতিবার এই ‘যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশ করে। তবে বিজ্ঞপ্তিতে গত ২৪ অক্টোবর উভয় দেশের গৃহীত ১০টি বিষয়ে একমত পোষণ করার তথ্য বিকৃত করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে মিয়ানমারে দায়িত্বপালন করে আসা বাংলাদেশের সাবেক ডিফেন্স অ্যাটাশে শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘মিয়ানমারের ছলচাতুরীর শেষ নেই।’
উল্লেখ্য, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খাঁন কামাল ২৩ থেকে ২৫ অক্টোবর মিয়ানমার সফর করেন। সফরকালে ২৪ অক্টোবর সকালে দেশটির সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে এবং বিকালে মন্ত্রীপর্যায়ে বৈঠক করেন।
সকালের বৈঠকে দুই পক্ষ আলোচনার পরে ১০-দফা প্রস্তাব সংবলিত একটি সমঝোতা পাঠালে সেটি মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে গৃহীত হয়। এরপর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। পরদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় চলে আসেন। এরপর ২৬ অক্টোবর বিকালে মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজে একটি ‘যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশ করা হয়, যেটি বাংলাদেশ অনুমোদন করেনি।
এ প্রসঙ্গ জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের সঙ্গে যুক্ত একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা ২৩ অক্টোবর আমাদের একটি যৌথ বিবৃতির খসড়া দেয়। আমরা সেটি সংশোধন করে তাদের দেই। ওই খসড়ায় কফি আনান কশিমশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়টি ছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকের পরে তারা একটি ‘এগ্রিড মিনিটস’-এর প্রস্তাব করলে বাংলাদেশ ‘ব্রিফ রেকর্ড অব ডিসকাসনস’-এর প্রস্তাব করে। কিন্তু সেটি এখন পর্যন্ত মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেনি।’’
সরকারের এই সিনিয়র কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘২৪ অক্টোবর যে ১০টি বিষয়ে উভয় দেশ একমত হওয়ার পর মন্ত্রীপর্যায়ে গৃহীত হয়েছিল, মিয়ানমারের প্রকাশিত ‘যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে’ সেটিকে বিকৃত করা হয়েছে। সেখানে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ-বিষয়ক পয়েন্টটি উল্লেখই করা হয়নি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক ডিফেন্স অ্যাটাশে শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘মিয়ানমারের এই চাতুরীতে এবার নতুন নয়। এই কাজটি তারা যে শুধু বাংলাদেশের সঙ্গে করেছে, এমন নয়। এ অভিযোগ অন্য দেশেরও আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমার যে শুধু মিথ্যা বলে, তাই নয়। তারা কথার মারপ্যাঁচ দিয়ে অন্যদের ঘায়েল করতে চায়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফায়েজ আহমেদ বলেন, ‘যে বিষয়গুলোয় দুই পক্ষ সম্মত হয়নি, সেগুলো যৌথভাবে প্রচার করা উচিত নয়। এটি একটি খারাপ প্র্যাক্টিস। এরফলে দুই দেশের মধ্যে অনাস্থার পরিবেশ তৈরি না হলেও একটি অস্বস্তি তৈরি হয়, যা সুস্থ সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, ‘মিয়ানমার সবসময় ধাপ্পাবাজির আশ্রয় নেয়।’ এরফলে পরবর্তী সময়ে আলোচনার সময়ে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, ‘সবাইকে জানানো এবং রেকর্ড ঠিক রাখার জন্য সরকারের উচিত হবে এ ঘটনার প্রতিবাদ করা। নাহলে অনেকে মনে করতে পারে, মিয়ানমার ঠিক কাজটিই করেছে।’
(আরএম- বাংলাট্রিবিউন)