মিয়ানমারের রাখাইনে গণহত্যা ও নির্মম নির্যাতন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ তাদের সাদরে গ্রহণ করলেও স্থায়ী সমাধানের জন্য তাদের একসময় ফিরে যেতে হবে রাখাইনেই। কারণ সেখানেই তাদের বাড়িঘর ও জীবিকা।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য সাধারণ জনগণ ও আলেম-ওলামার করণীয় কী হতে পারে? তাদের জন্য স্থায়ী সমাধানের পথ কী? এসব নিয়ে আওয়ার ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং জামিয়া ইকরার পরিচালক (শিক্ষা) ড. মাওলানা হুসাইনুল বান্না।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিশেষ প্রতিবেদক রকিব মুহাম্মাদ
আওয়ার ইসলাম : রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ইস্যুতে মিয়ানমার যেসব আলোচনা ইতোমধ্যে করেছে, সেসব দেখে আপনার কি মনে হয় রোহিঙ্গাদের তারা ফেরত নেবে?
মাওলানা হুসাইনুল বান্না : মিয়ানমার সরকারের হাবভাবে মনে হয় না তারা রোহিঙ্গাদের ফিরেয়ে নিবে। নিলেও হয়তো সবাইকে নেবে না। ১৯৬০-১৯৬২ সাল থেকে রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
আমার সাথে কয়েকজন রোহিঙ্গা আলেমের কথা হয়েছে। তারা বলেছে, জানুয়ারি মাস থেকেই সেনাবাহিনী তিনটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তারা রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে সম্পদশালী, শিক্ষিত জনগণ, আলেম ওলামাদের টার্গেট করে হত্যা করেছে। যাতে করে তারা আর্থিকভাবেও সাপোর্ট পাচ্ছে না।
আলেম ও বুদ্ধিজিবীদের হত্যা করায় বর্তমান তারা নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় আছে। এ অবস্থায় তাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করা অবান্তর। এক্ষেত্রে পরিকল্পিতভাবে আমাদের সরকারের ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন। এজন্য, স্থায়ী সমাধান নিয়ে ভাবতে হবে আমাদের।
আওয়ার ইসলাম : সে স্থায়ী সমাধানটা কেমন হতে পারে বলে মনে করছেন?
মাওলানা হুসাইনুল বান্না : বাংলাদেশ সরকার তাদের জন্য স্থায়ীভাবে আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারে। খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা সহায়তা দিতে পারে। আমরা দেখেছি, তুরস্ক সিরিয়ার শরাণার্থীদের এভাবেই সাহায্য করেছিল।
এভাবে তাদের মাধ্যমে তুরস্কের সরকার অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে। আমরাও এমনটা করতে পারি। তাদের মাধ্যমে আয়ের একটা পথ খুলতে পারি।
আওয়ার ইসলাম : স্থায়ীভাবে তাদের আশ্রয় দিলে দেশে বিপর্যয় ঘটতে পারে বলেও অনেকের ধারণা, বিষয়টা নিয়ে আপনার মতামত কী?
মাওলানা হুসাইনুল বান্না : এ বিষয়টাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। তাদের দ্বারা কেউ যেন অনৈতিক কাজ করাতে না পারে, সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
তারা যেহেতু নিজের চোখের সামনে স্বজনদের হত্যা হতে দেখেছে, এজন্য তাদের ভেতর থেকে মানবতাবোধের কমতি দেখা যেতে পারে। অল্প টাকার বিনিময় খারাপ কাজ করতে পারে অনেকে। আমাদের সতর্ক হতে হবে এবং পরিকল্পনামাফিক তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
আওয়ার ইসলাম : আরেকটা বিষয়, অনেকে রোহিঙ্গাদের নৈতিক শিক্ষার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলছে এ বিষয়টা নিয়ে আপনি ভেবেছেন কিনা?
মাওলানা হুসাইনুল বান্না : আমি বলবো এটা তাদের দোষ নয়, বরং তাদের অপারগতা। তারা কুরআন পড়তে পারে ঠিক কিন্তু ইসলামের মৌলিক আকিদাগত শিক্ষা এবং নৈতিক শিক্ষা থেকে তারা অনেক দূরে।
আমি দেখেছি একজনই অনেকবার ত্রাণ নিচ্ছে, টাকা নিচ্ছে তারা বুঝতেও চেষ্টা করছে না এটা খারাপ। এজন্য আমাদের দরকার তাদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা। বিশেষত ইসলামি শিক্ষা দেওয়া। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেশিবেশি মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ করা।
অবশ্য কিছু সংখ্যক আলেম তাদের মধ্যে আছে। আনুমানিক ৩ হাজার হবে যাদের মাঝে অনেকে হাটহাজারী কিংবা পটিয়া মাদরাসা থেকে পড়াশোনা করেছেন।
স্পেনের সবচেয়ে বেশি মুসলিম কাতালোনিয়ায়; স্বাধীনতার প্রশ্নে তারা কি লাভবান হবে?