আওয়ার ইসলাম: ইসলামি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কলরব শিল্পীগোষ্ঠী নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভ্রান্তি শুরু হয়েছে। একই নামে দুটি কলরব একসঙ্গে পরিচালিত হওয়ায় বিভ্রান্তিতে পড়েন সঙ্গীতপ্রেমীরা। কোনটা আসল আর কোনটা নকল এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলে আসছে বাকবিতণ্ডাও।
চলমান এ বাকবিতণ্ডা ভিন্ন মোড় পায় ‘নতুন কলরব’ সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্বীকৃত হওয়ার পর। তারা বলতে থাকেন আমাদের সংগঠন সরকারি রেজিষ্ট্রেশনপ্রাপ্ত, সুতরাং এ নামে আর কোনো সংগঠন তারা চলতে দিবেন না।
কিন্তু মূল দল থেকে বহিস্কৃত একজন কিভাবে একই নামে সংগঠন রেজিষ্ট্রেশন করে ফেলেন এ নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয় মূল সংগঠনে। শেষ পর্যন্ত এটি নিয়ে তদন্ত করার পর উঠে এল ভয়ংকর তথ্য।
জানা যায়, রেজিস্ট্রেশনের কাগজে যাদের স্বাক্ষর আছে তারা নাকি স্বাক্ষরই দেননি। এমনকি শিক্ষা সংস্কৃতি বিষয়ক অধিদপ্তর নামে কোনো অধিদপ্তরই নেই।
এসবের নেপথ্যে যিনি তার নাম আবু সুফিয়ান। যিনি একসময় কলরব শিল্পীগোষ্ঠীতেই ছিলেন। কিন্তু বিতর্কিত কিছু কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনে তাকে বহিস্কার করা হয়। এ বহিস্কারের ক্ষোভ থেকেই তিনি একই নামে আরেকটি দল ঘোষণা করেন। যাকেই তারা মূল দল বলে অভিহিত করে আসছিলেন।
অভিযোগ উঠেছে, সংস্কৃতি সচিব ইব্রাহিম হোসেন খানের স্বাক্ষর জাল করে ‘ধাপ্পাবাজি’ করছেন আবু সুফিয়ান। বানিয়েছেন ভুয়া নিবন্ধন সনদ। সেটা দিয়ে তার ‘কলরবকে’ সরকার নিবন্ধিত একমাত্র সংগঠন বলে দাবি করছেন। বিষয়টি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নজরে আনা হলে আবু সুফিয়ানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশকে চিঠিও দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
জানা যায়, কলরব শিল্পীগোষ্টীর যুগ্ম নির্বাহীপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন আবু সুফিয়ান। সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী নানাকর্মকাণ্ড ও আর্থিক কেলেংকারির অভিযোগে গত বছরের ৫ নভেম্বর তাকে বহিস্কার করা হয়। চলতি বছরের আগষ্ট মাসে নিজেকে প্রধান পরিচালক ঘোষণা করে ‘কলরব’ নামে নতুন সংগঠন ঘোষণা করেন আবু সুফিয়ান। এরমধ্যে বানিয়ে নিয়েছেন সংস্কৃতিমন্ত্রণালয়ের ভুয়া নিবন্ধন সনদ। যার কথিত নম্বর: ০৯-৭২৫৩।
নতুন কমিটি করার পর আবু সুফিয়ান একটি সংবাদ সম্মেলনও করেন। সেখানে তিনি তাকে বহিস্কারের ক্ষোভ থেকে মূল কলরবের অনেককে বহিস্কারের ঘোষণা দেন। যদিও বিষয়টি ফেসবুক ছাড়া কোথাও প্রচারে দেখা যায়নি।
শিল্পী আবু সুফিয়ানের নিবন্ধন ফরমে সংস্কৃতি সচিবইব্রাহিম হোসেন খানের নাম ও স্বাক্ষর ছাড়াও আরও রয়েছে এবিএম আবুল কালাম নামের এক ব্যক্তির নাম ও স্বাক্ষর। তার পদবী উল্লেখ করাহয়েছে, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-নির্বাহী।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা যায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে শিক্ষা ও সংস্কৃতি অধিদপ্তর নামে কোনো অধিদপ্তর নেই। এমনকি মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সাংস্কৃতিক সংগঠনকে নিবন্ধন সনদ দেয়া হয় না। এছাড়া এবিএম আবুল কালামনামে ওইমন্ত্রণালয়ে কোনো কর্মকর্তা নেই।
পুরো বিষয়টিই অবৈধ প্রক্রিয়ায় করা হয়েছে।আবু সুফিয়ানের এ জালিয়াতির খবর পেয়ে মন্ত্রণালয় থেকে গত ৩০ আগস্ট রাজধানীর পল্টন থানায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে একটি চিঠি পাঠানো হয়। উপ-সচিব (প্রশাসন-২) সায়মা ইউনুস স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে ভুয়া রেজিস্ট্রেশন' সনদে সংস্কৃতি সচিবের নাম ব্যবহার করার জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরনির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি কলরবের পক্ষ থেকে বহিস্কৃত সুফিয়ানের
একর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সিএমএম কোর্টে একটি জালিয়াতি মামলাও করা হয়েছে যা সিআইডির কাছে তদন্তাধীন। এছাড়াও পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
এবিষয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (প্রশাসন-২) সায়মা ইউনুস বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সাংস্কৃতিক সংগঠনকে নিবন্ধন দেয়া হয় না। সচিব স্যারের স্বাক্ষরের তো প্রশ্নই আসে না। একটি সংগঠন এ ধরনের কাজ করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পল্টন থানাকে আমরা জানিয়েছি।
আবু সুফিয়ানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্বাক্ষর জাল করার তো প্রশ্নই আসে না। আমরা সংস্কৃতিমন্ত্রণালয় থেকেই এ নিবন্ধন নিয়েছি।’
‘মন্ত্রণালয়তোএ ধরনের কোনো নিবন্ধন দেয় না’ এ তথ্য জানিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়লে তিনিবলেন, ‘এখনই এ প্রসঙ্গে কিছু বলতে পারবো না। আমরা যাকে দিয়ে এ নিবন্ধন করেছি, তিনি বিস্তারিত বলতে পারবেন।’
অভিযোগ আছে, আবু সুফিয়ান ফেসবুকে তার ‘ভুয়া নিবন্ধন’ সনদের ছবি দেখিয়ে মূল কলরবের দায়িত্বশীলদের দেখে নেয়ার হুমকিও দিচ্ছেন।
স্বাক্ষর জাল করায় আবু সুফিয়ানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পল্টন থানায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চিঠি
এ প্রসঙ্গে কলরবের প্রধান পরিচালক রশিদ আহমদ ফেরদৌস বলেন, দীর্ঘদিন সংগঠনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও আর্থিক কেলেংকারিসহ নানা অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় কয়েকবার তাকে মিটিং-এ সতর্ক করা হয়। কিন্তু সে সংশোধনের পরিবর্তে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। পরবর্তীতে সর্বসম্মতিক্রমে আবু সুফিয়ানকে আমরাবহিস্কার করেছি। তারপরেই সে এ ধরনের অনৈতিক কাজ করে আমাদেরকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সচিবের স্বাক্ষর নকল করে ভুয়া সনদপত্র দিয়ে কলরবের মালিকানাও দাবি করছে। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে পল্টন থানায় আমরা একটি জিডি করার পাশাপাশি সিএমএম কোর্টে একটি মামলা করেছি। যা বর্তমানে সিআইডিতে তদন্তাধীন।
এ ব্যাপারে কলরব শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ. এর বড় ভাই মাওলানা শামসুল আলম বলেন, আমরা তো ভাবতেই পারছি না কলরবের নামে আরেকটি সংগঠন হবে। এর নাম ভাঙিয়ে আর কেউ অর্থ রোজগার করবে।
তিনি বলেন, কলরবের একটি কাঠামো আছে, কর্মী বাহিনী আছে, তারা নিয়মিত তার পরিবারের খোঁজ খবর নিচ্ছে। আইনুদ্দীন আল আজাদের নামে করা গ্রামের মাদরাসার খোঁজ খবরও নিচ্ছে। এরাই তো মূল কলরব।
দুই কলরব হওয়ায় করণীয় কী জানতে চাইলে শামসুল আলম বলেন, অবৈধভাবে কেউ যদি একই নামে আলাদা সংগঠন করে তাহলে তার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। একরম কিছু হলে আমরা আমাদের অভিভাবক চরমোনাই পীর সাহেবের কাছে যাবো। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেন তাই অনুসরণ করবো।
এ বিষয়ে পল্টন থানার ওসি মাহমুদুল হক বলেন, এ বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। প্রমাণিত হলেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রোহিঙ্গা শিবিরের হিরো ৫ : মুফতি হাবিবুর রহমান মিসবাহ