মুফতি সালাহ উদ্দীন
ওরা নিচু ভূমিতে নিজেদের ঘরগুলো করে মাওলার ঘর মসজিদের জন্য সবচেয়ে উঁচু জায়গাটা রেখে দিয়েছে।
ওদের একটাই কথা আমরা ত্রাণ নয় শুধু চাই আমাদের একটা মসজিদ করে দিন।
আমরা তাদের দীনপ্রেম দেখে সত্যিই অবাক হয়েছি। দীনের প্রতি এই ভালোবাসা যাদের আছে তারা সত্যিই মহৎ।
আমরা রোহিঙ্গাদের দেখতে গিয়েছিলাম। যা দেখলাম তাতে আমরা অভিভূত। আমরা এখানে কুতুপালংয়ে ৩৫ হাত দৈর্ঘ ২৫ হাত প্রস্থ একটা মসজিদের নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাদের আকুতি ও আবদার শুনে। আলহামদুলিল্লাহ আমরা কাজ শুরু করেছি। শেষও হবে শিগগির।
আমাদের ইচ্ছা রয়েছে এখানে একটা নূরানি মাদরাসা এবং একটা নলকুপ স্থাপনের। এছাড়াও কিছু টয়লেট করার চেষ্টাও রয়েছে। যদি আল্লাহ কবুল করেন।
দোয়া করি আমাদের হাতে যেসব ভাই তাদের কষ্ট অর্জিত টাকা পয়সা উঠিয়ে দিয়েছেন আল্লাহ যেন তাদের দান কবুল করেন। আমীন।
...............................................................................
রোহিঙ্গা যুবকরা কোথায়? এক আলেমের সাক্ষাৎকার
উখিয়া থেকে ফিরে মুহাম্মাদ শোয়াইব
গত ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর ২৯টি চৌকিতে হামলা চালায় দীর্ঘদিনের নীপিড়নের শিকার স্বাধীনতাকামী একদল যুবক। এরপর থেকেই দেশটির সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে কথিত ক্লিয়ারেন্স অপারেশন চালায়।
মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়া, নারীদেরকে ধর্ষণ করা, শিশু ও বৃদ্ধদের ওপর পৈশাচিক নৃশংসতাসহ সব ধরনের নিপীড়ন চালিয়ে আসছে। প্রাণ বাঁচাতে ২৫ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। ইতোমধ্যে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশের টেকনাফ, উখিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে। এই আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত আলেম পরিবারও রয়েছে প্রচুর।
কুতুপালংয়ের একটি শরণার্থী শিবিরে দেখা হয় দুই দিন আগে আসা এমনই একজন আলেমের সঙ্গে। তার নাম মাওলানা নুর হোসেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু এলাকার বাসিন্দা তিনি। ৫০ বছর বয়সী এই আলেম তার দীর্ঘ জীবনে মক্তবের শিক্ষকতাসহ নানা ধর্মীয় কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু এলাকায় এখনো অনেক মুসলিম রোহিঙ্গা বন জঙ্গলে পালিয়ে আছেন৷ তারা লোকালয়ে যেতে পারেন না৷ তাদের ছেলেমেয়ে, ভাইবোন কোথায় কিভাবে আছেন তাও তারা জানেন না৷ তিনিও একটি জঙ্গলে লুকিয়ে ছিলেন আট দিন।
তিনি জানান, হামলাকারীরা নারীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করে৷ অনেককে ধরে নিয়ে গেছে৷ বনে জঙ্গলে যারা আছেন তাদেরও ধরে নিয়ে যায়। বন-জঙ্গলে পেলেই তারা মনে করে, এরা ‘হারাকাতুল ইয়াকিন’ এর লোক। তখন তাদের ওপর চালানো হয় ভয়াবহ নৃশংসতা।
নুর হোসেনের কয়েজন আত্মীয় এখনও আত্মগোপন করে আছেন সীমান্তবর্তী কোনো এক জঙ্গলে। তিনি তাদের সঙ্গে মাঝে মধ্যে মোবাইলে কথা বলেন। তবে সব সময় মোবাইলে তাদের পাওয়া যায় না। কেননা বাংলাদেশের মোবাইল ফোন কোম্পানির সিম সেখানে নেটওয়ার্ক পেলেও ঠিক মতো কাজ করে না।
তারা বাংলাদেশে আশ্রয়ের জন্য আসার চেষ্টা করছেন। সুযোগ পাচ্ছেন না। কারণ তারা যে জঙ্গলে লুকিয়ে আছেন তার পাশেই মিলিটারীদের একটি ক্যাম্প রয়েছে। জঙ্গল থেকে আসতে দেখলেই তাদের ‘হারাকাতুল ইয়াকিন’ এর লোক ভেবে গ্রেফতার করতে পারে মিলিটারীরা।
এই আলেমের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতায় এক পর্যায়ে জানতে চাওয়া হয়, গত ২৫ আগষ্ট থেকে যে হারে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা বাংলাদেশে এসেছে, সে তুলনায় যুবকদের সংখ্যা খু্বই কম।
সরেজমিনে উখিয়া কুতুপালং এর বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ঘুরে ঘুরে দেখা যায়, নারীদের তুলনায় যুবকদের সংখ্যা খুবই কম। একেকটি পরিবারে গড়ে প্রায় পাঁচ ছয় জন করে শিশুই রয়েছে রোহিঙ্গা পরিবারগুলোতে। কিন্তু যুবকদের পাওয়া যাচ্ছে না।
যুবকরা কোথায় এমন প্রশ্নের জবাবে এই আলেম বলেন, অধিংকাশ যুবককে সেনাবাহিনী হত্যা করে ফেলেছে। আর বাকিদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। পরিবারের কারও সঙ্গে তাদের যোগাযোগ নেই। তার সাত ছেলের মধ্যে সবচেয়ে ছোট জন তার সঙ্গে এসেছে।
বাকিরা কোথায় জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, তিনজনকে সেনাবাহিনী মেরে ফেলেছে। বাকি তিনজন কোথায় আছেন তা তিনি জনেন না। তবে তার ধারণা, হয়তবা তারা মিয়ানমারের কোনো জায়গায় লুকিয়ে আছে।
তাছাড়া অনেক যুবক রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) বা হারাকাতুল ইয়াকিনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে সে দেশের সেনাবাহিনী। গ্রেফতারকৃতরা আদৌ বেঁচে আছে না তাদেরও মেরে ফেলা হয়েছে তা পরিবারের লোকেরা কিছুই জানে না।
উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, ও পালংখালী এবং টেকনাফের হোয়াইক্যং, নয়াপাড়া, উনছিপ্রায় ও দমদম এলাকায় যেসব ক্যাম্প রয়েছে, সেসব ক্যাম্পে ঘুরে ঘুরে দেখা যায়, ত্রাণ সংগ্রহের জন্য কোনো পুরুষ নেই। সবাই নারী।