শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫ ।। ২৮ চৈত্র ১৪৩১ ।। ১৩ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
হারামাইনে আজ জুমার নামাজে ইমামতি করবেন যাঁরা ‘মার্চ ফর গাজা’য় অংশগ্রহণকারীদের জন্য জরুরি ৫ নির্দেশনা তালিবুল ইলমের আবশ্যকীয় পাঁচটি কাজ পাকিস্তানের সব সমস্যার পেছনে ইহুদি ষড়যন্ত্র থাকে: মাওলানা ফজলুর রহমান বাড়িতে বাবার লাশ রেখে এসএসসি পরীক্ষা দিল নাহিদ মানবতার জন্য আপনিও আসুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে: শায়খ আহমাদুল্লাহ ইসরায়েলকে প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ দরকার: বিএনপি মাদরাসাছাত্রদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে কাজ করছে এনসিপি : নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী মুসলিম রাষ্ট্রের ওপর এখন সশস্ত্র ল’ড়াই ফরজ: মুফতি তাকি উসমানি ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান শায়খে চরমোনাই’র

কাছ থেকে দেখা রোহিঙ্গাদের কিছু দুর্ভোগ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবিদ আল আহসান

নিচ থেকে চূড়া অবদি বিশাল পাহাড় জুড়েই প্রায় ৫০/৬০ হাজার রোহিঙ্গার বসবাস। পাহাড়ের সরু পথ কেটে কেটে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই গড়ে উঠেছে ঝুপড়ি। ওদের তাদের মাথা গোঁজার ঠায়। কোথাও ঘন বসতি, আবার কোথাও ফাঁকা ফাঁকা বাসস্থান।

আমরা স্থানীয় একজন আলেমের সাহায্যে শুরু করলাম পথচলা। যাওয়ার পথে চোখে পড়লো হাজারো রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-যুবক-যুবতী ও শিশুদের অসহায়ত্বের করুণ দৃশ্য। কোনো কোনো ঝুপড়ির বাইরে দেখা মিললো নতুন আসা রোহিঙ্গাদের আতংকগ্রস্থ চিন্তামগ্ন দৃষ্টি। কারও সেই দৃষ্টির মাঝে আবার হতাশা ও দুঃখের ছাপ।

তবে কিছুটা অবাক হলাম রোহিঙ্গা শিশুদের আদর্শ দেখে। প্রতিটি শিশুর মুখেই সালাম। আর যুবক ভাইদের আচার-ব্যবহারও অত্যন্ত অমায়িক।

প্রধান সড়ক থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার পাহাড়ি রাস্তা অতিক্রম করে অবশেষে পাহাড়ের একদিকের শেষ সীমানায় পৌঁছে গেলাম। এখানে সচারচর কেউ আসে না। কারণ আসতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়। যাও আসে তা হচ্ছে বিভিন্ন এনজিও গ্রুপ ও আলেম ওলামা।

আমরা ওখানে গিয়ে দাঁড়াতেই আমাদের কাছে ছুটে এলো কয়েকজন। তাদের খোঁজ খবর নিতে শুরু করলাম।

একটা খালি যায়গায় পলিথিন বিছিয়ে ওখানকার মুরব্বীদের সাথে কথা বললাম। তারা যা বললেন তার সারমর্ম হচ্ছে- কিছুদিন ধরে তারা ওখানে এসেছে। কেউ কেউ সাথে করে আনতে পেরেছে কিছু মালপত্র। আর কেউ কেউ জীবন নিয়ে কোনো মতে পালিয়ে এসেছে।

আবার কেউ এসেছে স্বজন প্রিয়জন সব হারিয়ে একদম একা। এখানে কারো হাত নেই। কারো পায়ে বুলেটের দাগ। কারো পায়ে ব্যান্ডেজ। আবার কারো পিঠে আগুনে পোড়া ক্ষত চিহ্ন।

ঘর-বাড়ি আর স্বজন হারানোর অতীত ইতিহাস বলতে গিয়ে অনেকেই কাঁদছে। আবার কেউ অধিক শোকে পাথর হয়ে হয়তো কাঁদতেই ভুলে গেছে।

ছোট ছোট বাচ্চারা চেয়ে আছে শূন্য দৃষ্টিতে! ওদের নিষ্পাপ চাহনি থেকে যেন অসহায়ত্বের চিৎকার শোনা যাচ্ছে।

ওই জায়গাটাতেই প্রায় ৭/৮ শ রোহিঙ্গার বসবাস। অবাক হয়ে শুনলাম, ওখানকার রোহিঙ্গা নারীরা নাকি নিজেদের পরিহিত স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করে খাবারের চাহিদা মেটাচ্ছে। তারপরও খাদ্য নিয়ে তাদের আফসোস নেই।

তাদের প্রয়োজন হচ্ছে মসজিদ, বাথরুম ও নলকূপের। পানির বড়ই অভাব। খাবার পানি আনতে হলে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে যেতে হয়। তাও আবার পাহাড়ি রাস্তা অতিক্রম করে। তাই তারা চায় কয়েকটা নলকূপ।

আলহামদুলিল্লাহ আমরা একটা মসজিদ ও কয়েকটা বাথরুমের ব্যবস্থা করলাম। আমাদের সাথী মুফতি শামসুদ্দোহা আশরাফী সাহেব স্থানীয় লোকদের সাথে কথা বলে মসজিদ ও বাথরুম বাবদ টাকা দিলেন। সাথে সাথে স্থাপনের কাজও শুরু করে দিলেন।

তারপর তারা আমাদের কয়েকটা ফ্যামিলির আহত লোকজনদের কাছে নিয়ে গেলেন। তাদের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটানোর পর বৃষ্টিতে ভিজেই রওনা হলাম পাহাড়ি পথ দিয়ে আবার আপন গন্তব্যে...

আশেপাশের রোহিঙ্গাদের মধ্যে কয়েকজন বললো তাদের খাদ্যের তেমন কোনো প্রয়োজন নেই। আর কাপড়ের বিন্দুমাত্রও প্রয়োজন নেই। কারণ ওদের পোশাকের সাথে আমাদের পোশাক মিলে না। তাই তারা আমাদের পোশাক পরেই না।

এখন যেহেতু বৃষ্টি হচ্ছে তাই ত্রিপল পলিথিন ও ছাতা তাদের খুব দরকার। পাশাপাশি নলকূপ ও বাথরুমেরও অনেক প্রয়োজন। ৪/৫ শ মানুষের জন্য বাথরুম মাত্র ১টা। এটাই তাদের বড় সমস্যা। এ জন্য যারা আগামীতে ত্রাণ নিয়ে আসতে চাচ্ছেন তারা রোহিঙ্গাদের স্থায়ী কিছু করে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করে আসুন। অহেতুক কাপড় আর খাদ্য নিয়ে আসার কোনো দরকার নেই।

সম্পাদক: পাক্ষিক নবডাক


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ