মুফতি হেলাল উদ্দীন হাবিবী
বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে নির্যাতিত ও অবহেলিত জাতীর নাম রোহিঙ্গা মুসলিম। শত শত বছর যাবত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে তারা বসবাস করে আসছে। পূর্বকাল থেকেই তারা মিয়ানমারের অধিবাসি বা বৈধ নাগরিক।
১৯৪৮সালে মিয়ানমার স্বাধীনতা লাভ করে। তারপর ১৯৬০সালে মিয়ানমারে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাতে রোহিঙ্গা মুসলিমদের থেকে তিনজন পার্লামেন্ট মেম্বারও নির্বাচিত হয়েছিল। কিন্তু ১৯৮২সালে মিয়ানমারের সৈরাচার জান্তা সরকার সম্পূর্ণ অবৈধভাবে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিকত্ব বাতিল করে এবং তাদের প্রতি অমানুবিক আচরণ শুরু করে। অসহায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দেশ থেকে বিতারিত করতে বিভিন্ন অজুহাতে তাদের উপর চালায় নির্যাতনের স্টিমরোলার। নির্বিচারে তাদের প্রতি চালায় গণহত্যা। পুড়িয়ে দেয় তাদের বসতবাড়ী, জ্বলিয়ে দেয় শস্যক্ষেত, লুণ্ঠন করে গবাধি পশু ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী।
হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে পাখির মত গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। অধিকন্তু লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে রোহিঙ্গা মা বোনদের ধর্ষণ করে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী আজ ধর্ষক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। মিয়ানমারের হানাদার বাহিনীর এ নির্যাতনের মুখে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে নিজেদের সাজানো সংসার, ঘর-বাড়ি সব ছেড়ে দিয়ে আমাদের দেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। তারা আজ বড়ই অসহায়, এক মুঠো খাবারের জন্য কতই না হাহাকার, তাদের চোখে-মুখে এখনো আতংকের ছাপ। সম্বলহীন মানুষগুলো এখন কঠিন মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের একটি মাত্র অপরাধ, তারা মুসলমান।
সম্মানিত পাঠক! এহেন পরিস্থিতে রোহিঙ্গাদের জন্য সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব।
মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, নিশ্চয় মুমিনগণ একে অপরের ভাই। (সূরা হুজরাত, আয়াত ১০)
হযরত নোমান ইবনে বশীর রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, সকল মুমিন একটি দেহের মতো। যদি কোনো ব্যক্তির চক্ষু ব্যথিত হয়, তবে তাঁর সর্বাঙ্গ ব্যথিত হয়। আর যদি তাঁর মাথা ব্যথিত হয়, তাহলে তাঁর সারা শরীর ব্যথিত হয়। (মুসলিম)
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য প্রাচীরের ন্যায়; যার এক অংশ অপর অংশকে সুদৃঢ় করে। অতঃপর তিনি এক হাতের আঙুল অন্য হাতের আঙুলের মাঝে প্রবেশ করালেন। (বুখারী, মুসলিম)
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. ইরশাদ করেন, যে (মুসলমান) ব্যত্তি কোনো বস্ত্রহীন মুসলমানকে কাপড় পরিধান করায়, আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতে সবুজ পোশাক পরিধান করাবেন। যে ব্যক্তি কোনো ক্ষুধার্ত মুসলমানকে খানা খাওয়ায়, আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতের ফলসমূহ খাওয়াবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো পিপাসার্ত মুসলমানকে পানি পান করায়, মহান আল্লাহ তা’আলা তাকে এমন শরাব পান করাবেন যার উপর মোহর লাগানো থাকবে। (আবু দাউদ)
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোনো অসহায়, বিধবা ও মিসকিনদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে, তার মর্যাদা ঐ সকল ব্যক্তির ন্যায় যারা রাত জেগে নফল নামায পড়েন এবং অবিরাম রোজা রাখেন। (মিশকাত)
প্রিয় পাঠক! পৃথিবীর যে প্রান্তেই হোক, এক মুসলমান ভাইয়ের ব্যথায় অন্য মুসলমান ব্যথিত হওয়া নবী আদর্শের অনুপম শিক্ষা। তাই আসুন, প্রত্যেকে নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী অসহায় রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াই। মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে এই পুণ্যময় কাজে শামিল হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: খতিব, মাসজিদুল কুরআন জামে মসজিদ কাজলা, যাত্রাবাড়ী ও প্রিন্সিপাল, মারকাযুল উলূম আজিজিয়া মাদরাসা কাজলা (ভাঙ্গাপ্রেস),যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।