মুফতি মুহাম্মদ আবু সালেহ
হে যুবক! কথার শুরুতেই আমি তোমার পরিচয় জানতে চেয়েছি। কেন জান? তোমাকে যে কথাগুলো বলতে চাচ্ছি, সেগুলো শুনতে হলে এবং মানতে হলে তোমার মাথায় আত্মপরিচয়টা থাকতে হবে। ও ভাল কথা! তোমার বোধহয় আমার উপর রাগ হচ্ছে! বারবার একই কথা বলার জন্য।
হে যুবক! রাগ করনা। তোমাকে তোমার আসল পরিচয়টা মনে করিয়ে দিচ্ছি,তোমাকে অপমাণিত করার জন্য নয়। তোমাকে সজাগ করতে। আমি জানি, তুমি জন্মসূত্রে মুসলমান। কিন্তু তুমিই বল! জন্মের পর থেকে আজকের বয়স পর্যন্ত, তোমার কতবার মনে হয়েছে যে,তুমি মুসলমান। আমি জানি! এ প্রশ্নের উত্তরটা তুমি বুক উঁচিয়ে দিতে পারবে না। আচ্ছা! তুমি কি অনুভব করতে পার? তোমার জীবনের দীর্ঘ এ সময়ে তোমার হৃদয়কোণে কেন বার বার ধ্বনিত হলোনা ; আমি একজন মুসলমান। জাতে মুসলিম। তারও কারণ আছে। এর জন্য তোমাকে দোষী করা বা এর ভাগিদ্বার বানানোর কোন কারণ নেই। তুমি জন্মের পর পর মুসলমান মা বাবা পেয়েছো ঠিক কিন্তু ইসলামী ঘর পাওনি। বিষয়টা উদাহারণ দিয়ে পরিস্কার করছি।
তুমি হয়তো ইউটিউবে দেখে থাকবে অথবা শুনে থাকবে, একটা সিংহের কথা। একজন মহিলা এই সিংহটাকে ছোট থেকে লালন পালন করে। সিংহটা তার পোষ মানে। সে দেশের সরকার বিষয়টা জানতে পারলে সিংহটাকে বাজেয়াপ্ত করে। এবং সেটাকে চিড়িয়াখানায় রেখে দেয়। বিস্ময়ের ব্যপার কি জান? ঐ মহিলা একদিন সিংহটাকে দেখতে যায়। সিংহ মহিলাকে দেখামাত্রই দাড়িয়ে যায়। খাছার শিকল ঘেঁসে দাড়িয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। এই উদাহারণে তোমাকে যে বিষয়টা বুঝাতে চাচ্ছি সেটা হচ্ছে, সিংহ কিন্তু স্বভাবজাত মানুষখেকু প্রাণী। সিংহের বৈশিষ্ট এটা নয় যে, সে মানুষের সাথে গলাগলি করবে। এটা তার আসল পরিচয়ও নয়। এরপরও সে এটাই করছে। কেন? কারণ, সে তার শৈশব থেকে এমন কিছু পায়নি যেটা তার আসল পরিচয় সম্পর্কে অবহিত করবে।
এমন কোন ঘটনাও ঘটেনি, যা তাকে জানান দেবে যে ; তার স্বভাব হচ্ছে, মানুষকে ছিঁড়ে ফেঁড়ে খাওয়া। এটাই তার পরিচয়। মানুষের সাথে গলাগলি করা বা বন্ধু ভাবসম্পন্ন হওয়া তার জাতীয় পরিচয়বিরোধী। ফলশ্রুতিতে সিংহটা তার আসল পরিচয় ভুলে গেছে। এবার তুমি তোমাকে নিয়ে চিন্তা কর। জন্মের পর চোখ মেলেই ড্রয়িংরুমে থাকা বিশালাকার টিভিটা দেখেছো। ওয়্যারড্রবের উপর গিলাফে মোড়ানো কুরআনের উপর তোমার চোখ পড়েনি। তোমার মা তোমাকে কোলে করে সোফায় বসে ঘন্টার পর ঘন্টা টিভি দেখেছে। কখনো কয়েক মিনিটও তোমাকে কোলে করে জায়নামাজে বসে কুরআন পড়েনি। তোমার মা অত্যাধুনিক হয়ে থাকলে, শৈশবে হয়তো তাকে মাঝে মাঝে নাচতেও দেখেছো। কিন্তু ভুলেও কোনদিন তাকে নামাজ পড়তে দেখনি।
তোমার বাবা তোমাকে নিয়ে মাঝে মাঝেই বিভিন্ন জায়গা দেখাতে নিয়ে যেত। কিন্তু কখনো মসজিদে নিয়ে যায়নি। কিংবা সপ্তাহের একদিন জুমআর নামাজ আদায় করতে তোমাকে সাথে নিয়ে মসজিদে গেছেন। তোমার কচিমনে বিষয়টা এভাবে রেখাপাত করেছে, মসজিদ হয়তো প্রতিদিন আসার জায়গা নয়। তা না হলে আব্বু এতদিন পর পর আসেন কেন? ধর্মের যে বিষয়টা তোমার অভ্যাসে পরিণত হওয়ার কথা, সেটাই তোমার কাছে উৎসবজাতীয় বলে মনে হচ্ছে। এখানে তোমার কোন দোষ নেই। তোমার এ মনমানসিকতা তৈরির পেছনে তোমার বাবা-ই দায়ী।তোমার চোখের সামনে তোমার বাবা কতবার যে গলায় ট্রাই ঝুলিয়েছে, সেটা তুমি কল্পনায়ও গুণতে পারবে না।
কিন্তু তার মাথায় কতবার টুপি পাগড়ি পরেছে সেটা তুমি আঙ্গুলে গুণে বলতে পারবে। হয়তো তুমি তোমার বাবার কোন বন্ধুর মাথায় কখনো টুপি পাগড়ি দেখেছো। ভেবেছো, এটা হয়তো আঙ্কেলের ব্যাক্তিগত ব্যপার। সবার পালনীয় নয়। তা না হলে আমার আব্বু এটা পরেনা কেন? ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে যখন তুমি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হলে, সেখানেও তোমাকে জাগানোর মত কিছু পেলে না। বন্ধু বান্ধব সবাই আধুনিকমনা। সবাই আধুনিক হতে চায়। ইসলামকে পেছনে রেখে। নিজের পরিচয়টা ভুলে গিয়ে।
তুমি তোমার শৈশব থেকে আজ পর্যন্ত তোমার ঘর, তোমার আশপাশ, বন্ধু বান্ধব সবখানেই এমন জিনিস দেখেছো যা আমাদের নই। তোমার নই। তাদের মাঝে যেটা দেখেছো সেটাই শিখেছো। ধর্মের প্রতি তাদের উদাসিনতা আর অবহেলার কারণেই ধর্মটাকে তোমার কাছে উৎসবের বিষয় মনে হয়েছে। এখানে তোমার কোন দোষ নেই। দোষ তোমার পরিবেশের। আর এভাবেই তুমি তোমার আসল পরিচয়টা ভুলে গেছো। যদিও তুমি জন্মসূত্রে মুসলমান। তাই আমি তোমাকে সজাগ করলাম। নতুন করে পরিচয় জিজ্ঞেস করে। তোমাকে প্রস্তুত করলাম। তোমার দায়িত্ব সমর্পণের জন্য।
-এজেড