বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :

ভারত থেকে রোহিঙ্গাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত: ব্যাখ্যা চাইল মানবাধিকার কমিশন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ভারতে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলমানদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার ব্যাখ্যা চেয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিবকে এ ব্যাপারে চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে, জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে সম্প্রতি 'অবৈধভাবে' বসবাসরত ৪০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিমকে দেশ থেকে বের করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

শনিবার গণমাধ্যমে প্রকাশ, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গণমাধ্যমের রিপোর্টের ভিত্তিতে সপ্রণোদিত হয়ে এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নোটিশ পাঠিয়েছে। স্বরাষ্ট্র সচিবকে এ ব্যাপারে ৪ সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, "এটা সত্য যে ওরা বিদেশি এবং নিজেদের জীবন বাঁচানোর জন্য মিয়ানমার থেকে ভারতে এসেছে। কিন্তু তাদের ফেরত পাঠানোর জন্য ডিটেনশন সেন্টার তৈরির মতো যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা? যদি মিয়ানমার তাদের গ্রহণ করতে অস্বীকার করে সেক্ষেত্রে তাদের কী হবে? সরকারকে ওই শরণার্থীদের বিষয়ে সমস্ত রিপোর্ট কমিশনকে দিতে হবে।"

কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গোয়েন্দা এজেন্সি ও আইনশৃঙ্খলা এজেন্সির পক্ষ থেকে এটা জানতে হবে যে, এরা দেশের পক্ষে কী বিপদ হতে পারে?

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে বলে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।

মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যদিও ভারত ১৯৫১ জাতিসংঘ কনভেনশন এবং ১৯৬৭ আন্তর্জাতিক প্রটোকলে সই করেনি। কিন্তু উদ্বাস্তু সংক্রান্ত জাতিসঙ্ঘের অনেক ঘোষণায় ভারতের সই রয়েছে।

সংবিধান অনুসারে ভারতে বসবাসকারী প্রত্যেকেরই জীবন ও গোপনীয়তার অধিকার আছে তা নাগরিক হোক অথবা না হোক। এরকম অবস্থায় সরকারকে চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে হবে যে, অবশেষে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা আসলে কী? ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মানবাধিকার রক্ষা কিভাবে সম্ভব হবে?

মিয়ানমারে ফিরতে চান না রোহিঙ্গারা

জম্মুতে শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা কামাল হুসাইন বলেন, ‘বার্মা এখনো জ্বলছে। আমরা ঘরে ফিরতে চাই না। এখানে আমরা নিরাপদে আছি। গত ৭০ বছর ধরে বার্মা সরকার মুসলিম জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করছে এবং আমাদের কারাগারে নিক্ষেপ করছে। যদি ওরা আমাদের এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তও নেয় তা সত্ত্বেও সেখানে ফিরে যেতে চাই না।’

তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক যে অনেক সমস্যার মধ্যে জীবনযাপন করছি কিন্তু খুশি এজন্য যে বেঁচে আছি। শিশুদের জন্য মৌলিক সুবিধা পাচ্ছি। আমি কোনোমতেই সেখানে ফিরে যেয়ে সহিংসতায় সন্তানদের উপহার দিতে চাই না।’

ভারতের পদক্ষেপে জাতিসঙ্ঘ উদ্বিগ্ন

এদিকে, সম্প্রতি জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ভারতীয় পরিকল্পনা সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, শরণার্থীদের ওই দেশে ফেরত পাঠানো যাবে না, যেখানে তাদের নির্যাতনের আশঙ্কা রয়েছে।

মহাসচিবের মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, ভারতের পদক্ষেপে জাতিসংঘ উদ্বিগ্ন। তাদের মতে, শরণার্থীদের নিবন্ধীকরণের পরে ওই দেশে ফেরত পাঠানো যায় না যেখানে তাদের বিরুদ্ধে ধর্ম, জাতি, জাতীয়তা, সামাজিক সংগঠন সংশ্লিষ্ট ও রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে অত্যাচারের আশঙ্কা রয়েছে। ভারতের ক্ষেত্রে জোর করে শরণার্থীদের ফেরত না পাঠানোর নীতি প্রযোজ্য। ভারতকে তা জানিয়ে দেয়া হবে বলেও ফারহান হক উল্লেখ করেন। পার্সটুডে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ