টেলিভিশনকে বলা হয় ড্রয়িং রুম মিডিয়া। পরিবারের সবাই তার মাধ্যমে বিনোদিত হবে। কিন্তু তার অবস্থা কী? বাবা-মা বিব্রত। সন্তানের সঙ্গে টিভি সেটের সামনে বসতে ভয় পান। কখন কিনা কি ভেসে আসে! অনেক নাটকের সংলাপ ও পোশাকে রয়েছে সস্তা যৌন সুড়সুড়ি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বসে তা দেখাটা কীভাবে সম্ভব? আধুনিক ট্রেন্ডের নামে অভিনয় শিল্পীরা যেসব কুরুচিপূর্ণ পোশাক পড়ে থাকে। সত্যিই তা অবাক করার মত! ভাষার ব্যবহার তো নাই বললাম! একটা সময়ে, নাটকের ভাষা যেমন ছিল শুদ্ধ ও সাবলীল তেমনি পোশাকও। কিন্তু দিনে দিনে আমরা পশ্চিমা ধাঁচের হতে গিয়ে নিজের সংস্কৃতির বারোটা বাজাচ্ছি।
পোশাকের এ পরিবর্তনটা যে অশুভ বাংলা নাটকের জন্য। তা হয়তো অনেক নির্মাতা কিংবা অভিনয় শিল্পীরা মানবেন না। এক কথা বলবেন, ‘গল্পের প্রয়োজনে এমন পোশাক আর ভাষা ব্যবহার করা হয়। আর এটা হলো এ সময়ের ট্রেন্ড ‘। প্রশ্ন হলো ট্রেন্ডটা কারা তৈরি করে? তাদের কি ধারণা আছে সমাজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মিডিয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। মিডিয়াই ট্রেন্ড পরিবর্তন করে। তারাই বলে দেয় এইটা পড়ুন, এইটা বলুন। সেখানে তারা যাতা কিছু দেখাতে পারে না। এখনি সময় এসেছে লাগাম টানার।
আপনি যদি টিভি নাটকে দর্শক নেই কেন তার কারণ বের করতে উদ্যোগী হন। তাহলে তার অন্যতম কারণ হবে বর্তমান নাটকের এই পোশাক সংস্কৃতি। এই অসহনশীল সংস্কৃতি দর্শক কমাবে বৈ বাড়ায় না তা চ্যালেঞ্জ করে বলা সম্ভব। নির্মাতাদের কি আর তা কানে লাগে। তাদের দরকার সস্তা জনপ্রিয়তা। শালীনতা যেন ভুলতে বসেছে। অশ্লীল পোষােকের সাথে কুরুচি পূর্ণ অঙ্গভঙ্গি। সবই এখন নাটকের উপাদেয় হয়ে যাচ্ছে।
অনেকে বলে থাকেন সিনেমার অশ্লিলতা এসে নাটকে ঢুকেছে। কিছু নির্মাতা বেডসিন ধর্ষন দৃশ্য সহ আরও অনেক স্পর্শকাতর বিষয় তারা টিভি মিডিয়ায় দেখিয়ে থাকেন। গল্পের প্রয়োজনে টিভি মিডিয়ায় এটা কতটা তুলে ধরতে হবে। তা নিয়ে তর্ক রয়েছে। তবে আবশ্বম্ভবী বলে তো একটা কথা রয়েছে। তা কিনা তা নাট্য নির্মাতারা ভালো বলতে পারবেন।
ভাষা কিংবা ট্রেন্ড প্রকৃতির মত রূপ বদলাবে। এটা স্বাভাবিক। নতুন কিছু আসবে। কিছু চলে যাবে। অর্থাৎ যোগ হবে, বিয়োগ হবে। কিন্তু তার মধ্যেও একটা স্বাভাবিকতা থাকতে হবে। ট্রেন্ড তৈরি করে মিডিয়া। সমাজের রুপ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের বিশাল ভূমিকা। কিন্তু আজকালকার টিভি মিডিয়ার পোশাক আর ভাষা রীতিমত স্বাভাবিক গতিপথকে ধাক্কা দিচ্ছে। এর ভালো-মন্দ বিচার করার সময় হয়ে গেছে।
অশুদ্ধ ও অশালীন এ অনুশীলন আমাদের সমাজেও বাজে প্রভাব ফেলা শুরু করছে। এতটাই বাজে প্রভাব ফেলেছে যে, তরুণ-তরুণীরা চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে।
গড্ডালিকা প্রবাহে নিজেকে ছেড়ে দিলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু চর্চার মাধ্যমে নিজেকে উন্নত করতে চাইলে সচেতনতা দরকার। টেলিভিশনে যে সুস্থ ধারা নাটক হয় না তা কিন্তু নয়। একটা নিয়মতান্ত্রিকতা বজায় রাখছে। তবে কোনো কোনো নির্মাতা কিংবা অভিনয়শিল্পী অকারণে এত বেশি খোলামেলা হচ্ছে তা চোখে লাগার মত। সময়ের কিছু খারাাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে তারা। এখনই বিচেনায় আসা উচিত। কোন ট্রেন্ডটা তারা চালু করতে যাচ্ছে। বিদেশী চ্যানেল আর ইন্টারনেটের কবলে পড়ে এমনিতেই টিভি মিডিয়ার হাল খারাপ। তার ওপর তাদের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে দেশীরা যা দেখাতে চাচ্ছে। সেটা কোন ভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। নতুন ব্যতিক্রমী কিছু করতে গিয়ে লেজেগোবরে করে ফেলছে তারা।