নোমান মাহফুজ
মানুষ মাত্রই মরণশীল। কেউ আগে আর কেউ পরে দুনিয়া ত্যাগ করবে, এটাই স্বাভাবিক। দুই যুগ থেকে দেখছি মানুষের যাওয়া আসার খেলা। আজ অনেক প্রিয়জন আমাদের মাঝে বেঁচে নেই। নেই তাদের সেই আদর সোহাগ। রয়ে গেছে মায়া মমতার স্মৃতিময় ইতিহাস। অনেক প্রিয়জন চলে গেছে ঠিক তাদের মনে রাখবার প্রয়োজনটুকুও হারিয়ে ফেলেছি।
কি নির্মম নিমকহারাম আমরা! মা বাবা, ভাই বোন, দাদা দাদি, নানা নানি, খালা মামা, কিংবা আত্মীয় অনেকেই নেই অনেকের। যাদের ভালবাসা স্নেহময় সম্পর্ক আজ আর নেই। আর তাদের মনে করবার সময়টুকুও আমাদের হাতে অবশিষ্ট নেই। আমরা খুব ব্যস্থ খুব। বউ বাচ্ছা, সংসার কিংবা দুনিয়াদারীতে ব্যস্থ সময় যাচ্ছে আমাদের। চাঁদ পর্বে মাওলানাদের খবর করে কুরআন খতম পড়িয়ে হক আদায় করে নেই।
নিজেদের হক নিজেরা আদায় করে নিবো তার কোন ফুরসত নেই। বিরোধীতা করছি না খতমে কুরআনের, বলছি নিজেদেরও তো উচিত সপ্তাহে কমপক্ষে একবার হলেও তাদের কবর জিয়ারত করে দোয়া পৌঁছানো। জেনে রাখা প্রয়োজন, কবরের দৃশ্য দেখে দুনিয়ার ক্ষণস্থায়িত্বের বিশ্বাস তাজা হয়, নিজের মৃত্যু ও কবর-জীবনকে স্মরণ করে আখিরাতের প্রস্তুতির সংকল্প গ্রহণ করা যায়।
তাছাড়া আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করা এবং মাগফিরাতের দুআ ও ঈসালে ছওয়াবের মাধ্যমে তাদের উপকৃত করা যায়। মৃত্যুর পর মানুষের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তখন তারা বন্ধুবান্ধব ও আত্নীয়স্বজন থেকে মাগফিরাতের দুআ ও ঈসালে ছওয়াবের খুবই প্রয়োজনবোধ করে অপেক্ষা করতে থাকে। তাই তাদের মাগফিরাত কামনায় নিজে নিজে কুরআনের খতম, সুরা ইয়াসিন বার বার খতম করে, শরীয়ত সমর্থিত বিভিন্ন খতম পড়ে তাদের জন্য দোয়া করতে থাকুন। সময়ে সময়ে কবর জিয়ারত করুন।
তাতে মৃত ব্যক্তির হক্ব আদায় হবে। কবর যিয়ারতের সময় কতিপয় সুরা পাঠ করার বিশেষ ফজীলত হাদীস শরীফে বর্নিত আছে। সুরা এখলাস সম্পর্কে হযরত আলী রা. থেকে বর্নিত , নবী করীম সাঃ বলেন, যে ব্যক্তি কবরস্থানের পাশ দিয়ে যাবার সময় ১১ বার সুরা এখলাস পাঠ করে কবরবাসীর জন্য ছওয়াব রেছানী করবে সে ঐ কবরস্থানে দাফনকৃত মৃতদের সংখ্যার সমান ছওয়াব লাভ করবে।
সুরা ফাতেহা ও সুরা তাকাছুরের ফজীলত হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্নিত , নবী করীম সাঃ বলেন, যে ব্যক্তি কবরস্থানে প্রবেশ করে সুরা ফাতেহা, সুরা এখলাস ও সুরা তাকাছুর পাঠ করে বলবে হে আল্লাহ, আমি তোমার কালাম থেকে যা পাঠ করেছি, তার ছওয়াব এই কবরস্থানের মুমিন নর- নারীদের জন্য দান করলাম, কেয়ামতের দিন তারা তার জন্য সুপারিশকারী হবে।
সুরা ইয়াসিনের ফজীলত হযরত আনাস রা. থেকে বর্নিত , নবী করীম সাঃ বলেন, যে ব্যক্তি কবরস্থানে প্রবেশ করে সুরা ইয়াসীন পাঠ করবে, আল্লাহতায়ালা সেই কবরস্থানের মৃতদের আজাব লাঘব করবেন এবং উক্ত ব্যাক্তি সেখানে দাফনকৃত মৃতদের সমান সংখ্যক ছওয়াব লাভ করবে। এছাড়া সুরা মূলক, আয়তুল কুরছী, সুরা ফালাক, সুরা নাস এবং কোরান মজ়িদ যতটুকু পারা যায় তেলোয়াত করা ভাল। আর হে! বলে রাখি কথাটা!
পুরুষদের জন্য কবর যিয়ারতের অনুমতি আছে। নারীদের জন্য কবর যিয়ারতের অনুমতি নেই। যেহেতু নারীদের ব্যাপারে কবরে গিয়ে কান্নাকাটি ও অস্থিরতা প্রকাশ করার আশংকা, তাই তাদেরকে কবরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। সুনানে তিরমিযীর একটি হাদিসে আছে, রাসুল সা. কবর যিয়ারতকারী নারীদের উপর অভিসম্পাত করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৮৪৪৯; জামে তিরমিযী, হাদীস ১০৫৬; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৫৭৫; মিশকাত পৃ ১৫৪) তবে তাদের জন্য বৈধ রয়েছে, জিয়ারত করা ব্যতীত ঘরে বসে মৃত ব্যক্তিদের মাগফেরাতের দোয়া করা, রহমতের দোয়া করা, জান্নাতে প্রবেশ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করা।
-এজেড