আওয়ার ইসলাম: তরুণ ইউটিউবার আহসান হাবিব পেয়ার গ্রেফতার হয়েছেন গত সোমবার। রাজধানীর খিলগাঁওয়ের তিলপাপাড়া থেকে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গ্রেফতার করে তাকে।
তার নামে নারীদের প্রতারণা করে পর্নোগ্রাফি তৈরির অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল ইসলাম।
তিনি জানিয়েছেন, ‘পেয়ার নিজেকে পীর দাবি করত। ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে জ্বিন তাড়ানোর কথা বলে বহু নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করত।’
কিছু নারী পেয়ারের মিষ্টি কথায় প্রতারণার ফাঁদে পড়ে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ায়। ওই সব নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের একাধিক ভিডিওচিত্র পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি।
বুধবার পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানানো হয়। বিষয়টি অনলাইন মিডিয়াগুলোতে আসতেই নানারকম প্রতিক্রিয়া শুরু হয়।
পেয়ারের ভক্তরা বলেন, তার পক্ষে এমনটা অসম্ভব। আহসান হাবিব পেয়ার একজন দরদি মানুষ এবং সমাজের বহু মানুষের অর্থ কষ্ট দূর করেছেন।
তবে বিপরীত মতও পাওয়া যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে। সেখানে ফেসবুকাররা নানারকম অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছেন আহসান হাবিব সম্পর্কে। এমনিক তার অনৈতিক কাজের কিছু ছবিও দেখা যাচ্ছে ফেসবুকজুড়ে।
আহসান হাবিব পেয়ার পরিচিতি লাভ করেন ইউটিউবে নানারকম ভিডিও তৈরির মাধ্যমে। বিশেষ করে তিনি অসহায় দরিদ্রপিড়িত ও বিরল রোগে ভোগা মানুষদের নিয়ে ভিডিও চিত্র নির্মাণ করতেন। তাদের সাহায্য করার জন্য বিকাশ ও একাউন্ট নম্বরও প্রচার করতেন। এভাবে তিনি দরিদ্রদের সাহায্য করার ভিডিও প্রচার করতেন তার ইউটিউব চ্যানেলে।
পেয়ারের ইউটিউব চ্যানেলের নাম ahp tv। চ্যানেলটিতে ১৩৪ টি ভিডিও রয়েছে। যার অধিকাংশই দরিদ্র ও রোগীদের নিয়ে। কয়েকটি সঙ্গীত ও কুরআন তেলাওয়াতের ভিডিও রয়েছে। অধিকাংশ ভিডিও দেখেছেন লক্ষাধিক মানুষ। তার গানের একটি ভিডিও ২৭ লক্ষাধিকবারও দেখা হয়েছে।
আহসান হাবিব পেয়ার নামে ফেসবুকে তার একটি আইডি ও একটি পেইজ রয়েছে। আইডিতে ফলোয়ার সংখ্যা ২ লাখ ৩৪ হাজার এবং পেইজের ফ্যান সংখ্যা ২ লাখ ১৮ হাজার প্লাস। ইউটিউবে তার সাবস্ক্রাইবার রয়েছে ৮৫ হাজার ৭১৭।
ফেসবুক ও ইউটিউবে পেয়ার এত ফ্যান পেলেন কী করে? বিষয়টি ঘুরে ফিরেই আসছে নানা জনের কাছে।
তবে তার ফেসবুক ও ইউটিউব ঘেটে দেখা যায়, মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে সস্তা টাইপের ভিডিও নির্মাণ করতেন তিনি। শিরোনামগুলো হতো চটকদার যাতে সাধারণ ইউজাররা বিভ্রান্ত হতেন সহজে।
তার কিছু ভিডিওর শিরোনাম হলো, ‘যে ভিডিওটি দেখে সারা পৃথিবী কেদেছে’, ‘বিশ্ব সেরা ৭ বছরের মেয়েকে দিয়ে এটা কিভাবে সম্ভব?’, কবরস্থানে কি হয়েছিল সেদিন রাতে যেদিন শবে বরাত, আপনি কতটা ভালো মানুষ ভিডিওটি দেখলেই বুঝবেন, প্রবাসীদের ভালোবাসায় যে ভিডিওটি আজ সারা পৃথিবীতে ভাইরাল, সেরা মৃত্যুর ভিডিওর ইতিহাস দেখুন, দুনিয়াতে যারা জান্নাতের বাগান দেখতে চান ভিডিওটি দেখুন, যে মেয়েটির কান্না দেখে কান্না করেছে সারা বিশ্ব, চোখের পানি ধরে রাখার চেষ্টা করুন, অপেক্ষায় থাকুন, সেরা ইসলামিক শর্টফিল্ম- আবেগে কেদে ফেলবেন’।
এমনই সব চটকদার নামের কারণে পাঠক আকর্ষণ করতেন তিনি। যদিও এমন শিরোনাম শুধু আহসান হাবিবের বেলায় নয় বলা যায় সস্তা খ্যাতি লাভের জন্য ইউটিউব ট্র্যান্ড হয়ে গেছে বিষয়টি, কিন্তু লো কোয়ালিটির ইউজার ছাড়া এগুলো অন্য কারো ভালো লাগত না বললেই চলে।
তাদের অভিমত, পেয়ার মূলত হিরো আলম টাইপের সেলিব্রেটি। শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও শখ থেকে অনেক কিছু করে ফেলত।
আহসান হাবিব পেয়ারের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী। থাকতেন ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায়। চট্টগ্রামের একটি মাদরাসায় কিছুদিন পড়ে হাটহাজারী মাদরাসায় ভর্তি হয়েছিলেন। তবে ‘বিশেষ কারণে’ সেখান থেকে অল্প দিনেই বহিষ্কার হন বলে তার একজন সহপাঠি জানিয়েছেন।
আহসান হাবিবের নামে যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে তার অনেকগুলোই সত্য বলে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। একটি টিভির নিউজে দেখা গেছে ভূক্তভোগী দুই নারী তার অপকর্মের বিরুদ্ধে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে তারা অভিযোগ করেছেন, ‘আমাদের সঙ্গে প্রথমে আত্মীয়তার সম্পর্ক করে পড়ে অনৈতিক সম্পর্কে জরিত হয়।’ অনেকের কাছে লাখ লাখ টাকা নেয়ারও অভিযোগ করেছেন তারা।
প্রতারণার অভিযোগে ইউটিউবার আহসান হাবিব পেয়ার গ্রেফতার