অাওয়ার ইসলাম : একাদশ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ করতে সংলাপ ডাকতে আবারও সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।তিনি বলেছেন, “এখনও সময় আছে, আসুন আলোচনা করুন, কথা বলুন। বাংলাদেশের মানুষ এখন একটা নির্বাচন চায়, তারা চায় যে একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক।”
“সেভাবে ব্যবস্থা নিন, অন্যথায় ঠিকই পালাবার পথ খুঁজে পাওয়া যাবে না,” সরকারকে হুঁশিয়ারও করেন বিএনপি মহাসচিব।
বৃহস্পতিবার ঢাকার রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী হেল্প সেল’ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে ‘আর্থিক সহায়তা প্রদান’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ফখরুল।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় দাবি করে তিনি বলেন, বিএনপির দাবি মেনে নিলে আওয়ামী লীগেরও ‘লাভ’ হবে।
“আপনারা যে ভয় পেয়েছেন পরাজিত হলে পালাবার পথ-টথ খুঁজে পাবেন না। এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারি বাংলাদেশের জনগণ আপনাদের সব কিছু দেখবে এবং দেশে শান্তি বিরাজ করার পরিবেশ তারা সৃষ্টি করবে।”
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী হেল্প সেলের সদস্য জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েলের সভাপতিত্বে ও ফেরদৌস মুন্নার পরিচালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন হাবিব উন নবী খান সোহেল, শফিউল বারী বাবু, কাদের গনি চৌধুরী, মামুন হাসান, মান্নান হীরা, রাজিব আহসান চৌধুরী পাপ্পু, মাকসুদ আহমেদ খান রুবেল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীন দলের হামলায় নিহত রংপুরের মোশারফ হোসেন পদ্ম, খুলনার নজরুল ইসলাম, পঙ্গু হয়ে যাওয়া ময়মনসিংহের মেহেদি হাসান, পাবনার মাসুদ বিল্লাহ ও সিলেটের মো. বদরুল আলম- এই পাঁচ পরিবারের সদস্যদের পরিবারকে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়।২০১৪ সালে গঠিত জাতীয়তাবাদী হেল্প সেল এ পর্যন্ত সরকারবিরোধী আন্দোলনে নিখোঁজ ও নিহত ৮৭ পরিবারকে সহায়তা দিয়েছে।
‘আয়নায় নিজের চেহারা দেখুন’
খালেদা জিয়াকে নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করে জরুরি অবস্থার সময় বন্দি থাকাকালে তার দেওয়া নানা বক্তব্যের কথা তুলে ধরেন ফখরুল।
“দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পালিয়ে গেছেন দেশ থেকে, এটা তো কোনো আহম্মকও বিশ্বাস করবে না। মিথ্যা ছড়িয়ে দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে আর দেশের ক্ষতি করবেন না।”
ওবায়দুল কাদেরকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “আজকে যারা এই ধরনের কথা বলছেন। তাদের নিয়ে আমরা ইউটিউবে বিভিন্ন রকম ছবি দেখতে পাই। আমি সত্য-মিথ্যা বলতে পারব না। কিন্তু দেখা যায় তারা কী ধরনের বিবৃতি দিচ্ছেন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে। শুনেছি, জেলে যারা ছিলেন ওই সময়ে, তারা কান ধরে উঠ-বস করে বলেছিলেন, আর কোনো দিন রাজনীতি করব না।”
“সুতরাং এই ধরনের কথা বলার আগে প্রত্যেকের উচিৎ আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখা,” বলেন ফখরুল।
ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, “ওবায়দুল কাদের সাহেবকে একজন সজ্জন রাজনীতিবিদ মনে করি। সম্ভবত তিনি সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন। সাহিত্য ও নাট্যচর্চায় তার বিশেষ পারদর্শিতা ছিল। সেই কারণে তার মধ্যে একটা পরিশীলিত সংস্কৃতির প্রতিফলন দেখার প্রত্যাশী ছিলাম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমি জানি না যে উনার পরিবর্তনটা কেন?
“সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে উনি এমন ভাষায় কথা বলছেন যে ভাষায় তার কাছ থেকে কথা শুনিনি।”
এই প্রসঙ্গে ফথরুল বলেন, “আমি ক্ষমা চাইতে চাই যে, আমি এভাবে কথা বলতে চাইনি, কথা বলার অভ্যাসও নাই। কিন্তু বার বার আমার নেত্রীকে যারা আঘাত করবেন অন্যায়ভাবে, এর জবাব যদি আমরা না দিই, তাহলে সত্যের প্রতি অপলাপ হবে এবং দায়িত্বে থেকে দূরে থাকা হবে।”
আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে ‘নির্মূল’
একাদশ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ‘নির্মূল’ করতে সংগঠন শক্তিশালী করার তাগিদ দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, “আগামী নির্বাচনে নির্বাচনে মধ্য দিয়ে তাদেরকে (আওয়ামী লীগ) নির্মূল করতে হবে। আওয়ামী লীগ যাতে কোনোদিন জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে ভোট নিয়ে ফিরে না আসতে পারে, সেজন্য জনগণকে সর্তক করতে হবে।”
আওয়ামী লীগের গত আট বছরের শাসনকালকে জার্মানির নাৎসিদের সঙ্গে তুলনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “হিটলার তার যে হত্যাযজ্ঞ, অত্যাচার-নির্যাতন এটা অল্পদিন করার সুযোগ পেয়েছিল। আর আওয়ামী লীগ গত ৮ বছর ধরে এই হত্যা-নির্যাতন-নিপীড়ন-নির্মমতা-পাশবিকতা করে চলেছে।
“আপনি যেখানে যে জেলায় যাবেন একটা-দুইটা-তিনটা-পাঁচটা-দশটা, এই আমাদের ছাত্ররা, আমাদের কর্মীরা, সাধারণ মানুষের তারা আওয়ামী লীগের নির্যাতনে প্রাণ দিয়েছে, পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছে। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগের বাংলাদেশ।”
-এজেড