বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


বাড়ছে দুর্ভোগ, বাড়ছে আহাজারি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম : বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কুতুবপুর এলাকায় পানিবন্দি মরিয়ম বেগম ভেলায় রান্না করছেন -নিজস্ব ছবিবন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে। প্রধান নদনদীর পানি বাড়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে বন্যার পানিতে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। বন্যাকবলিত এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে বানভাসি মানুষের। বন্যাকবলিত এলাকায় পশুখাদ্যেরও সংকট দেখা দিয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘনঘন বন্যাকবলিত হচ্ছে দেশ। মধ্য এপ্রিল থেকে শুরু করে আগস্টের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বন্যা আসার মৌসুম ধরা হলেও গত কয়েক বছর ধরে এপ্রিলের শুরুতেই বন্যা চলে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রধানত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আগাম বন্যা দেখা দিচ্ছে। একই সঙ্গে ঘনঘন বন্যা হওয়ার পেছনে ৮টি কারণ চিহ্নিত করেছেন তারা।

বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, এখন ভরতের আসামসহ কয়েকটি প্রদেশ ও বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে অল্প বৃষ্টি হলেই বন্যা হয়ে যায়। এর কয়েকটি কারণ আমরা নির্ধারণ করেছি। এগুলো হলো- বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন, নদীর তলদেশ ভরাট, নদীর পাড় দখল, নগরায়ণের ফলে জলাভূমি দখল, গাছপালা ও পাহাড় কাটায় নদীর তলদেশে পলি বৃদ্ধি, সময়মতো বন্যা প্রতিরোধকারী অবকাঠামো মেরামত না করা, বন্যা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ও আগাম বন্যার তথ্য প্রচার শক্তিশালী না করা। দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও সংশ্লিষ্ট জেলার ডিসিগুলোর রিপোর্টের ভিত্তিতে বন্যার কারণ নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলোর সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের নির্ধারিত কারণগুলোর সমন্বয় করে আগামীতে বন্যার কারণ ও বন্যা কবলিত হওয়ার পর যুগোপযোগী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বায়ুমণ্ডল গরম থাকে। বাতাসে প্রচুর পরিমাণ জলীয়বাষ্প বহন করে। এগুলো জমতে জমতে একপর্যায়ে ভারি বৃষ্টিপাত হয়। আর ভারতের কয়েকটি রাজ্যসহ বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্রথমে উত্তরাঞ্চলে বন্যা হয়। এটি বিভিন্ন নদনদী দিয়ে বঙ্গোপসাগরে নেমে যায়। এসব নদনদীর তলদেশে পলি জমে নাব্যতা সংকট হওয়াসহ নদীগুলোর পাড় দখল করে নদনদীকে সংকুচিত করায় এখন সামান্য পানি নামলেই নদী তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়। এছাড়া কয়েক দশক আগে সারাদেশে পর্যাপ্ত পানি রিজার্ভ করার মতো জলাশয় ছিল। কিন্তু বর্তমানে নগরায়ণের ফলে সেসব জলাশয়ের অধিকাংশই দখল হয়ে যাওয়ায় পানি রিজার্ভের জায়গা নষ্ট হয়ে গেছে। পাহাড়ি অঞ্চলের বৃক্ষ কেটে উজাড় করায় বৃষ্টিতে পাহাড় কেটে নদীতে পালি ও মাটি জমে। এতে নদীর নাব্যতা সংকট দেখা দেয়ায় বর্ষা মৌসুমে বন্যার সৃষ্টি হয়। এছাড়া, সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোয় পানি উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা বন্যা মোকাবিলায় কাজ করে থাকে। এসব সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণেও অল্প বৃষ্টিতে বন্যার সৃষ্টি হয়। সময়মতো বন্যা প্রতিরোধকারী অবকাঠামো উন্নয়ন না করা ও বন্যার তথ্য প্রচার শক্তিশালী না করার কারণে হঠাৎই বন্যা দেখা দেয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র গতকাল জানিয়েছে, উত্তরাঞ্চলের ৮টি নদনদীর ৯০টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৬৩ স্টেশনে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে ১২টি স্টেশনে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ স্টেশনে পানি বিপদসীমার ৬৪ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বুধবার ৭৮ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। একই নদীর সারিয়াকান্দি স্টেশনে মঙ্গলবার ৪০ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বুধবার প্রবাহিত হয়েছে ৫৫ সে.মি ওপর দিয়ে। এছাড়া মঙ্গলবার যেসব নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বুধবার সেসব নদীর পানি প্রায় প্রত্যেকটিতেই ৫ থেকে ১৬ সে.মি বৃদ্ধি পেয়েছে। হ্রাস পেয়েছে মাত্র তিনটি পয়েন্টে।

নদনদীর পরিস্থিতির রিপোর্টে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটির বৃদ্ধি আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। অপর দিকে সুরমা-কুশিয়ারা নদীসমূহের পানি হ্রাস পাচ্ছে। এ দুই নদীর পানি আরো কমবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রে ‘বৃষ্টিপাত ও নদনদীর অবস্থা’র রিপোর্টে বলা হয়, মঙ্গলবার সকাল নয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত দুর্গাপুর স্টেশনে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২০০ মিলিমিটার। ভাগ্যকূল স্টেশনে ৮৭ মিলিমিটার, বগুড়া স্টেশনে ১৫২ মিলিমিটার, ঢাকায় ৯৪ মিলিমিটার, দেওয়ানগঞ্জে ৯০ মিলিমিটার, যশোরে ৮০ মিলিমিটার, রাজশাহীতে ৮০ মিলিমিটার, রোহনপুর ৬৯ দশমিক ৫ মিলিমিটার, চাঁপাই নবাবগঞ্জ ৬৭ দশমিক ৫ মিলিমিটার, সাতক্ষীরায় ৬৫ দশমিক ৫ মিলিমিটার, কক্সবাজারে ৬৪ মিলিমিটার, নওগাঁয় ৬২ দশমিক ৩ মিলিমিটার, জামালপুর ৬২ মিলিমিটার, মহাদেবপুর ৫৯ মিলিমিটার, বরগুনায় ৪২ মিলিমিটার, নরসিংদীতে ৩৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার ও বৈরববাজার স্টেশনে ৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, মৌসুমি বায়ুর কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে। এতে নতুন করে কিছু অঞ্চলে বন্যা হতে পারে। আবার কিছু কিছু অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া থেকে জানান, বগুড়াসহ উত্তরের জেলাগুলোতে গত চব্বিশ ঘণ্টা টানা বৃষ্টি এবং উজানের পাহাড়ি ঢল এবং ভারত তিস্তা ব্যারেজের সবগুলো গেট খুলে দেয়ায় যমুনা নদীর পানি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ফলে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে সারিয়াকান্দি ও ধুনট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সারিয়াকান্দি, ধুনট এবং সোনাতলা উপজেলার ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার্তরা উপায় না পেয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয়ের জন্য ছুটে এসেছেন।

এদিকে বন্যার্তদের মাঝে এখনো পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী পৌঁছায়নি। সারিয়াকান্দি উপজেলার ধলিরকান্দি পুরাতন বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নেয়া রিক্তা বেগম, রেজিয়া খাতুন জানান, তাদের থাকার ঘরে এখন কোমরপানি। টিউবওয়েল পুরোটাই পানির নিচে। ঘরের পালিত ৪টি গরু ৮টি ছাগল নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। নিজেদের পাশাপাশি গবাদিপশুর খাদ্য সংকট তাদের চিন্তিত করে তুলেছে। তারা অভিযোগ করেন ত্রাণের কোনো প্যাকেট এখন পর্যন্ত তাদের হাতে পৌঁছেনি।
সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বুধবার পর্যন্ত সারিয়াকান্দি উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর ৪ হাজার পরিবারকে সরকারিভাবে প্রায় ১২০ টন ত্রাণের চাল, গম বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ১ হাজার পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার চিড়া, গুড়, খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। আগামীকাল উপজেলা সদর, কাজলা, চালুয়াড়াবী ও হাটশেরপুরসহ ৪ ইউনিয়নে ৩৫ টন চাল বিতরণ করা হবে। পরিবার প্রতি ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হবে।

এদিকে বন্যাদুর্গত এলাকায় দেখা নিয়েছে ডায়েরিয়াসহ পানিবাহিত নানা ধরনের রোগ। এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা বেশি। খাবার স্যালাইন এবং বিশুদ্ধ পানি সংকট বন্যার্তদের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রকৌশলী রুহুল আমিন জানান, মঙ্গলবার সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি বিপদ ৫৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তিনি জানান, প্রতিদিনই পানি বাড়ছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি হতে থাকলে বন্যাদুর্গত এলাকার পরিধি আরো বেড়ে যাবে।

উত্তরাঞ্চল, গাইবান্ধার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ১৭ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে এখন বিপদসীমার ৫৫ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ সময় ঘাঘট নদীর পানি ১৭ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪১ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া তিস্তা, যমুনা ও করতোয়া নদীর পানি এখন বিপদসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাওয়ায় ৪ উপজেলার ৯৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

গাইবান্ধার সিভিল সার্জন ডা. মো. আমির আলী জানান, আমাদের প্রায় ১ হাজার জনের ১২০টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তারা বন্যাদুর্গত এলাকায় কাজ করছেন। কন্ট্রোল রুম খোলার কাজ চলছে। এছাড়া খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও পর্যাপ্ত ওষুধ মজুদ রয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের ৬১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব বিদ্যালয়গুলোর শ্রেণিকক্ষে পানি উঠেছে। এছাড়া আরো ৫২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে বিদ্যালয়গুলোকে খুলে দেয়ার জন্য প্রধান শিক্ষকদের বলা হয়েছে।
এদিকে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যার পানি বৃদ্ধির ফলে সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সদর উপজেলার ২৩টি ইউনিয়নের ঘরবাড়ি, আবাদি ফসল তলিয়ে গেছে। এতে ৭০ হাজার ৯শ’ ২৯টি পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।
সিরাজগঞ্জ, যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ভাঙছে নদীতীর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন।
বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার দুপুরে জেলায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা। তিনি বলেন, বন্যা পরিস্থিতি এখনও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। জেলার নদীতীরবর্তী ৫টি উপজেলা কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নের চরাঞ্চল সমূহের ১৯৪টি গ্রামের ১৪ হাজার ৮১৬টি পরিবারের ৬১ হাজার ১৮৬জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কিছু মানুষজন বাধ ও উচু স্থানে আশ্রয় নিলেও আশ্রয়কেন্দ্রগুলো এখনও ফাঁকা রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভাগওয়ারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিশেষ কারণ ছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত সরকারী সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, চৌহালী উপজেলা রক্ষা বাধে বারবার ধস দেখা দেয়ায় সরজমিন পরিদর্শন করেছি। বাঁধ তৈরিতে ঠিকাদারের গাফিলতি ও ক্রটি পরিলক্ষিত হওয়ায় বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। আগামী বৃহস্পতি অথবা শুক্রবার দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রীর সিরাজগঞ্জ সফরের কথা রয়েছে বলেও সভায় অবগত করেন জেলা প্রশাসক।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিকেল ৩টায় বিপদসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। নদীভাঙন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাজিপুর উপজেলার মাছুয়াকান্দি এলাকায় অবস্থিত স্যাংক বাঁধ ভেঙে যাওয়া সেখানে বালিভর্তি জিওব্যাগ ফেলে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চরছে। পাশাপাশি চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুরে ও শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী এলাকায় নদীতীর ভাঙলেও বরাদ্ধ না থাকায় সেখানে ভাঙনরোধে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
কাজীপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, কাজীপুরে নতুন নতুন গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে বন্যায় উপজেলার ১৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলা কৃষিসূত্রে জানা গেছে ২ হাজার একশ হেক্টর পাট খেত বন্যায় তুলিয়ে গেছে। এদিকে উপজেলা প্রশাসনের হঠকারিতায় নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের ফুলজোড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাকা ভবনটি গতকাল যমুনায় বিলীন হয়ে গেছে। উপজেলার বগার মোড় এলাকায় ওয়াপদা বাঁধ চরম হুমকির মুখে রয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, কুড়িগ্রাম জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। হুহু করে বাড়ছে নদনদীর পানি। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম। কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি, শুকনা খাবার, জ্বালানি, খাদ্য সংকট। দেখা দিয়েছে পানি বাহিত রোগবালাই। সরকার যে ত্রাণ বরাদ্দ দিয়েছে তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। আবার বরাদ্দ যা পাওয়া যাচ্ছে তা মাঠ পর্যায়ে বিতরণ হচ্ছে ঢিলে-ঢালা ভাবে। ফলে বন্যার্ত মানুষের দুর্ভোগ এখন চরমে।
সরকারে বরাদ্দকৃত ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম বলে অভিযোগ জনপ্রতিনিধিদের। সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন জানান, তার ইউনিয়নে ৬ হাজার পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মাত্র ৮ টন চাল পাওয়া গেছে। যা দিয়ে ৮০০ পরিবারকে ১০ কেজি করে দেয়া হয়েছে। চাল বিতরণকালে বুধবার সরেজমিন সেখানে গেলে শিতাইঝাড় গ্রামের মঞ্জু ও নুরজাহান জানান, গলা পানি ভেঙে পরিষদে এসে স্লিপ না পাওয়ায় ত্রাণ পাননি তারা।
রৌমারী উপজেলা সদরের ৯নং ওয়ার্ড কান্দাপাড়ার তিন শতাধিক পরিবার ৭ দিন ধরে পানিতে ভাসছে। বুধবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সময়ে এখানকার মানুষের ভাগ্যে এক ছকাটও ত্রাণের চাল পৌঁছেনি।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এনামুল হক জানান, এ পর্যন্ত ৩ শত টন জিআর চাল, ৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা ক্যাশ ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ৯ উপজেলায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত চলতি বন্যায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ওদিকে কুড়িগ্রাম সদর ও চিলমারীতে বন্যার পানিতে ডুবে বুধবার দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বন্যায় পানিতে ডুবে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৩ জনে। কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন অফিসের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আখের আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
চকরিয়া, চকরিয়ায় বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে মাতামুহুরী নদীর দুতীরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ। পাহাড়ি ঢলের তোড়ে নদীর চকরিয়া অংশের দু’তীরের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। অনেকগুলো ভাঙ্গা দিয়ে এখনও লোকালয়ে জোয়ার-ভাটার পানি উঠানামা চলছে। এতে এ বর্ষা মৌসুমে আমনের চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ বছর জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে চকরিয়ায় টানা বর্ষণে মাতামুহুরী নদীতে পাহাড়ি ঢল নেমে আসায় দু’কূল উপচে ও বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। এ বন্যায় পৌরসভাসহ চকরিয়ার ১৮টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বেশিরভাগ এলাকা থেকে এখন বন্যার পানি নেমে গেছে।
উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ঘুনিয়াতে ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধ গত দু’দিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মাণ শুরু হয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী জানান; সরকারি বরাদ্দের দিকে চেয়ে থাকলে পুরো ইউনিয়নের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই এলাকা দিয়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা আছে। ইতিমধ্যে ওই এলাকার বহু স্থাপনা ঘরবাড়ি নদীতে তলিয়ে গেছে। তাই তিনি নিজেই সেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন বলে জানান।
কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি জানান, গত দুইদিন আগেও জ্যাটে ঘুম পারছি আইজ সে জাগা (জায়গা) তিস্তা নদীর ভিতর। এমন করি প্রতি বছর নদী ভাঙলে হামরা কি খায়া বাঁচমো ? কথা বলছিলেন রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা নদীর ভাঙনে সর্বস্ব হারানো কয়েকটি অসহায় পরিবারের লোক। অবিরাম বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানি বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে নদী ভাঙন।
মঙ্গলবার উপজেলার নিজপাড়া, তালুকসাহাবাজ, গনাই, হয়বত খাঁ সহ নদী তীরবর্তী কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, ভারতের গোজল ডোবায় আকশিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তা নদী কাছাকাছি আসায় লোকজন তাদের ঘর বাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন।

-এজেড


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ